ইচ্ছাকৃত কর্মী ছাঁটাই প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক
করোনাকালে নানা অজুহাতে ব্যাংকগুলোর দ্বারা কর্মীদের ছাঁটাইয়ের অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে জানা গেছে।
ছাঁটাইকৃত বিভিন্ন ব্যাংকারদের অভিযোগের ভিত্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি বেসরকারি খাতের ছয়টি ব্যাংকে বিশেষ পরিদর্শন করে।
পরিদর্শনে দেখা যায়, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত ব্যাংকগুলোতে মোট ৩ হাজার ৩১৩ জন কর্মকর্তা চাকরি ছেড়েছেন। এর মধ্যে বয়স থাকার পরও স্বেচ্ছায় পদত্যাগ দেখানো হয়েছে ৩ হাজার ৭০ জনকে। এ ছাড়া ২০১ জনকে অপসারণ, ৩০ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত ও ১২ কর্মকর্তাকে ছাঁটাই করা হয়েছে।
জানা যায়, পরিদর্শন প্রতিবেদন প্রস্তুতের সময় স্বেচ্ছায় পদত্যাগ দেখানো অনেকের সঙ্গে কথা বলেছে পরিদর্শক দল। তাদের বেশিরভাগই জানিয়েছেন, বাধ্য হয়েই তারা পদত্যাগ করেছেন। এ ক্ষেত্রে স্বেচ্ছায় পদত্যাগের জন্য মৌখিকভাবে তাদের একটি সময় দেওয়া হয়েছিল। একটি নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে পদত্যাগ না করলে কোনো সুবিধা দেওয়া হবে না- এমন ভয় দেখানো হয়। এ রকম প্রেক্ষাপটে তারা পদত্যাগ করেন। আর অপসারণ বা বরখাস্তের ক্ষেত্রেও কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়াসহ যেসব নিয়ম রয়েছে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তা মানা হয়নি।
পরিদর্শনে উঠে আসা এমন চিত্রের পরিপ্রেক্ষিতে গত সোমবার ব্যাংক এমডিদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এসময় গভর্নর কর্মীদের ছাঁটাইয়ের বিষয়ে সতর্ক করেন।
তবে এবিবির প্রতিনিধি দল করোনাকালে কারণ ছাড়া কর্মী ছাঁটাই হয়নি বলে দাবি করেছে। দু-একটি ক্ষেত্রে এমন ঘটনা হয়ে থাকলে সে বিষয়ে পর্যালোচনা করা হবে বলে জানিয়েছে সংগঠনটি ।
এসময় বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমান ও আবু ফরাহ মো. নাছেরও উপস্থিত ছিলেন । এবিবির পক্ষ থেকে চেয়ারম্যান ও ইস্টার্ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী রেজা ইফতেখার, সাবেক চেয়ারম্যান ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, করোনার কারণে চাকরি থেকে ছাঁটাইয়ের প্রমাণ পেলে ওই ব্যাংকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে ব্যাংকগুলোকে বলা হয়েছে। ব্যাংকাররা বলেছেন, তারা ইচ্ছাকৃত কাউকে ছাঁটাই করেননি। ছাঁটাইকৃতদের মধ্যে অনেকের আগ থেকে নানা বিষয়ে অভিযোগ ছিল, তারাও এই সময়ে ছাঁটাইয়ের তালিকায় থাকতে পারেন বলে জানান তিনি।
এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা জানান, করোনার মধ্যে ব্যাংক কর্মকর্তারা জীবন বাজি রেখে কাজ করেছে। তাদের মাধ্যমে ব্যাংকগুলো আগের চেয়ে বেশি মুনাফা পেয়েছে। এরপরও অনেক প্রতিষ্ঠান অকারণে কর্মী ছাঁটাই করেছে। এর ফলে পুরো ব্যাংক খাতের কর্মীরা আতঙ্কে ভুগছেন। এটা কোনভাবেই কাম্য নয়।