ইউরোপ-আমেরিকায় যেতে চায় হালিমা টেলিকমের মুঠোফোন

অর্থনীতি

18 April, 2021, 11:45 am
Last modified: 18 April, 2021, 12:37 pm
প্রতিমাসে মোবাইল ও মোবাইল অ্যাকসেসরিজের প্রায় ৪১ কোটি ৩৫ লাখ টাকার পণ্য উৎপাদন করে হালিমা টেলিকম।

কুমিল্লায় উৎপাদিত হালিমা টেলিকমের মুঠোফোন বর্তমানে দেশের সবকটি জেলায় বিক্রি হচ্ছে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে দেশের বাইরেও মুঠোফোন রপ্তানি করতে চান হালিমা টেলিকমের স্বত্বাধিকারী আবুল কালাম হাসান টগর। গত ৩ ফেব্রুয়ারি বাজারে আসে এ ব্র্যান্ডের দুটি মোবাইল ফোন।  

দাম হাতের নাগালের মধ্যে থাকায় দেশে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে বলে দাবি করেন আবুল কালাম হাসান টগর। টগর জানান, বর্তমানে এইচ-১ ও টি-১ মডেলের দুটি মোবাইল ফোন বাজারে ছেড়েছেন তিনি। দাম যথাক্রমে ৬৫০ ও ৯৫০ টাকা। দাম কম ও মানে ভালো হওয়াতে মোবাইল ফোন দুটি লুফে নিচ্ছেন গ্রাহকরা। কিন্তু প্রয়োজনীয় কাঁচামালের অভাবে গ্রাহকদের কাছে ঠিকভাবে মুঠোফোন সরবরাহ করতে পারছেন না তিনি। এ পর্যন্ত ৩০ হাজার মুঠোফোন বাজারে ছেড়েছেন টগর। মাসে সারাদেশে হালিমা গ্রুপের দুই লাখ মুঠোফোনের চাহিদা রয়েছে বলে জানান তিনি।   

শুধু মোবাইল ফোন নয়, হালিমা গ্রুপ চার্জার, ব্যাটারি, পাওয়ার ব্যাংক, ক্যাবল, ফ্যান, এলইডি লাইট, এনার্জি লাইট, ক্লিয়ার বাল্ব, টিউবশেট, ব্যাকলাইট, গ্যাং ও পিয়ানো সুইচ, সার্কিট ব্রেকার ও হোল্ডার তৈরি করছে। ভবিষ্যতে হালিমা গ্রুপ টিভি, ফ্রিজ বাজারে আনার পরিকল্পনা করছে।

হালিমা টেলিকম সূত্রে জানা যায়, প্রতিমাসে মোবাইল ও মোবাইল অ্যাকসেসরিজের প্রায় ৪১ কোটি ৩৫ লাখ টাকার পণ্য উৎপাদিত হয়। যার মধ্যে মোবাইল দুই কোটি ১০ লাখ, চার্জার ২১ কোটি ২৫ লাখ, ব্যাটারি ১ কোটি ৫০ লাখ ও পাওয়ার ব্যাংক সাত কোটি ৫০ লাখ টাকার। এছাড়া অন্যান্য সামগ্রীর আরও ৪০ কোটি টাকার মতো পণ্য উৎপাদিত হয় তাদের। 

বর্তমানে হালিমা গ্রুপে ৯০০ জন কর্মরত আছেন, যাদের ৯০ শতাংশই নারী। স্থানীয় নারীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে কাজের উপযোগী করে চাকরি দেওয়া হচ্ছে। যেসব মেয়েরা অন্যের বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করতেন, কিংবা বেকার জীবনযাপন করতেন তাদের প্রশিক্ষিত করে চাকরি দিয়েছে হালিমা গ্রুপ। এছাড়া হালিমা গ্রুপে রয়েছে ৪৫০ জন সেলসম্যান ও ৫০০ জন ডিস্ট্রিবিউটর। 

কুমিল্লা সদর উপজেলার পুরোনো গোমতী নদীর তীরবর্তী মধ্যম চানপুরে ছয়তলা ভবনে চলে তার মোবাইল ও মোবাইল অ্যাকসেসরিজ তৈরির কর্মযজ্ঞ। ৩০ হাজার বর্গফুটের ওই ভবনে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে মোবাইল, ব্যাটারি, চার্জার ও পাওয়ার ব্যাংক তৈরির কাজ। কারখানায় ৩.৪, ২.৪, ২ এমএএইচ চার্জার, ১০০০ এমএএইচ থেকে শুরু করে ২৬০০ এমএএইচ ব্যাটারি ও ১০ হাজার এমএএইচ পর্যন্ত পাওয়ার ব্যাংক বানানো হয়। ২০১৫ সালেই ব্যাটারি, চার্জার ও পাওয়ার ব্যাংক তৈরিতে বাংলাদেশের এক নম্বর প্রতিষ্ঠান হয়ে যায় হালিমা টেলিকম।  

এছাড়া প্রতিমাসে সাড়ে আট লাখ চার্জার ও সাড়ে তিন লাখ ব্যাটারি তৈরি করে হালিমা টেলিকম।   

হালিমা টেলিকম থেকে ব্যবসা বাড়িয়ে আরও পাঁচটি প্রতিষ্ঠান করা হয়। এগুলো হচ্ছে হালিমা ইলেকট্রনিকস, হালিমা ট্রেডার্স, হালিমা ওয়ার্ল্ড, এইচটিই ও নিউক্লিক গ্লোবাল। টগর এর আগে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হয়ে তার উৎপাদিত পণ্য নিয়ে কাতার ও থাইল্যান্ডে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় অংশ নিয়েছেন। আর এতে অর্থায়ন করে বাংলাদেশ সরকার। 

আবুল কালাম হাসান টগর জানান, '১৯৯৮ সালে সিরাজগঞ্জের একটি হোটেলে হোটেল বয়ের কাজ করি। কিছুদিন কাজ করে নিজের কিছু জমানো টাকা নিয়ে চলে আসি ঢাকায়। সেখানে গ্রামীণফোনের প্রিপেইড কার্ডের ব্যবসা শুরু করি। এরপর ১৯৯৯ সালে কুমিল্লায় ফিরে এসে গ্রামীণফোনের সাব ডিলার ও পরে ডিস্ট্রিবিউটরের কাজ করি। গ্রামীণফোনের সাথে সম্পৃক্ত থাকাকালীন মোবাইল অ্যাকসেসরিজ সম্পর্কে ধারণা লাভ করি। এরপর ২০১০ সালে পাড়ি জমাই চীনে। সেখান থেকে মোটামুটি ধারণা নিয়ে কিছু 'র-মেটেরিয়ালস নিয়ে' আসি দেশে। দেশে ফিরে চারজনকে সাথে নিয়ে শুরু করি মোবাইল অ্যাকসেসরিজ তৈরির কাজ। প্রথমে ব্যর্থ হই, তারপরও দমে যাইনি। মোবাইল চার্জার ও ব্যাটারি তৈরি করে এক পর্যায়ে সফলতা পেয়ে যাই। ধীরে ধীরে বাংলাদেশে জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে হালিমা টেলিকমের ব্যাটারি ও চার্জারের। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।'  

টগর আরও জানান, 'বর্তমানে এ দুই মডেলের মুঠোফোন ছাড়াও আরও চার মডেলের মুঠোফোন তৈরির কাজে হাত দিব। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তৈরি করব টাচস্ক্রিন মোবাইল। তারপর ইউরোপ ও আমেরিকায় রপ্তানির মাধ্যমে শুরু করব আমার অন্যরকম অভিযাত্রা।' 
 

 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.