আট লাখে শুরু, বর্তমান বাজার দুই কোটির

অর্থনীতি

10 July, 2021, 03:15 pm
Last modified: 10 July, 2021, 03:18 pm
২০১০ সালে মাত্র আট লাখ টাকা পুঁজি দিয়ে ফার্মটি গড়ে তোলেন তিনি। গরু ছিল ৫টি। বর্তমানে ওই ফার্মে গরু আছে ১০৫টি। যার বাজার মূল্য দুই কোটি টাকার কিছু বেশি।

চারদিকে খোলা প্রান্তর। বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে চরে বেড়াচ্ছে গবাদিপশু। মাঝখান দিয়ে চিকন সরু রাস্তা চলে গেছে ভারতীয় সীমান্তের দিকে। সেখানকার ভারতীয় সীমান্তবর্তী গ্রাম গিলাতলা। এটি কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলায় অবস্থিত। ওই গ্রামে ১৩২ শতক জায়গার ওপর প্রতিষ্ঠিত আইয়ান মিহান ডেইরি ফার্ম।

ফার্মের স্বত্বাধিকারী খায়রুল বাশার। তিনি বুড়িচং উপজেলা ডেইরি ফার্ম অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতিও। ২০১০ সালে মাত্র আট লাখ টাকা পুঁজি দিয়ে ফার্মটি গড়ে তোলেন তিনি। গরু ছিল ৫টি। বর্তমানে ওই ফার্মে গরু আছে ১০৫টি। যার বাজার মূল্য দুই কোটি টাকার কিছু বেশি। গরুগুলোর মধ্যে আছে ভারতীয় মনিপুরী পাঁচটি, ইন্ডিয়ান মন্ডি পাঁচটি, হল্যাস্টাইন ফিজিয়ান ৪৫টি, হল্যাস্টাইন ফিজিয়ানের বাছুর ২৫টি, বীজের জন্য হল্যাস্টাইন ফিজিয়ানের ১০টি ও শাইওয়াল ১৫টি।

ফার্মে আছে বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট। এর মাধ্যমে পাঁচটি পরিবারে গ্যাস সংযোগ দিয়েছেন তিনি। সম্প্রতি ২৫ ঘনফুট গ্যাস উত্তোলনের পরিকল্পনা করছেন তিনি। যা দিয়ে আরও ১০টি পরিবারে গ্যাস সংযোগ দেওয়া যাবে।

ফার্মে প্রতিদিন ৫০০ লিটারের বেশি দুধ উৎপাদন হয়। ওই তরল দুধ মেশিনের মাধ্যমে পিওরিফাই করে পিওর প্রোটিন সাপ্লাইয়ার্সের মাধ্যমে কুমিল্লা শহরে পৌঁছে দেন তিনি। ফার্মে ও পিওর প্রোটিন সাপ্লাইয়ার্সে ১০ জন করে মোট ২০ জন লোক নিয়োজিত আছে। পিওর প্রোটিন সাপ্লাইয়ার্সে কাজ করা যুবকদের বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া, যারা পার্টটাইম কাজ করছেন এ প্রতিষ্ঠানে।

প্রতি কেজি দুধ ৬০টাকা করে হোম ডেলিভারি দেওয়া হয়। দিনে বিক্রি হয় ৩০ হাজার টাকার দুধ। মাসে নয় লাখ টাকার দুধ, মাংস ও বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট মিলিয়ে আরও তিন লাখ টাকা আয় করেন তিনি। বর্তমানে তার মাসিক আয় ১২ লাখ টাকা। গরুর খাদ্য, লোকবলের বেতন, পিকআপ ভ্যানের চালকের বেতন, ঘাস চাষসহ মাসে চার লাখ টাকা ব্যয় করেন তিনি।

খায়রুল বাশার ১৯৯৭ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর করে দক্ষিণ কোরিয়া পাড়ি জমান। কোরিয়ায় একটি কারখানায় চাকরি নেন। সেখানে মন টিকে নি তার। এরপর কয়েকটি দেশে ভ্রমণ করেন তিনি। ২০০৮ সালে দেশে ফিরে আসেন। এসে চিন্তা করেন নিজে কিছু করার। ২০১০ সালে ভারতীয় সীমান্তবর্তী গ্রাম বুড়িচংয়ের গিলাতলায় জায়গা কেনেন তিনি। নির্জন ও কম দামি জায়গা, আশেপাশে গবাদিপশু চারণের উপযুক্ত ভূমি ও ঘাস চাষের পর্যাপ্ত সুযোগ থাকায় ওই জায়গাটিকে খামার হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেন খায়রুল। পাঁচটি গরু দিয়ে শুরু করেন। দিন দিন গরুর সংখ্যা বাড়তে থাকে। আয় উপার্জন বেড়ে যাওয়ার পর চার শ শতক জায়গা ঘাস চাষের জন্য লিজ নিয়ে নেন তিনি। সেখানে বাড়ি করেন। গড়ে তোলেন এতিমখানা। তারপর শুরু হয় নতুন উদ্যমে পথচলা।

খায়রুল বাশার জানান, "শুরুতে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে ফার্মটি দাঁড় করাতে। এখন গরুর পাশাপাশি কোয়েল পাখি পালন করছি। খামার থেকে মাংস ও দুধ দুটোই সাপ্লাই করছি শহরে। দুধ সাথে সাথে মেশিনের মাধ্যমে পিওরিফাই করে প্যাকেটজাত করি। দ্রুত শহরে সাপ্লাই দেওয়ার জন্য গাড়ি প্রস্তুত থাকে। যে দুধ দ্রুত ডেলিভারি দেওয়া সম্ভব হয় না, ওই দুধ ফ্রিজ আপ করে রেখে দেওয়া হয় পিওর প্রোটিন সাপ্লাইয়ার্সে"।

ব্যাংক কর্মকর্তা মোল্লা খোরশেদ আলম বলেন, "আমি পিওর প্রোটিন সাপ্লাইয়ার্সের নিয়মিত গ্রাহক। এখানকার দুধ মানসম্মত মনে হয়েছে আমার কাছে"। 

কুমিল্লা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. নজরুল ইসলাম বলেন, "খায়রুল বাশারের পিওর প্রোটিন সাপ্লাইয়ার্স সম্পর্কে আমার ধারণা আছে। সুযোগ থাকলে অন্যদেরও এমন উদ্যোক্তা হওয়া উচিত"। 

 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.