১০০ বছর ধরে ভুল নামে ডাকা হচ্ছে পেরুর 'মাচু পিচু'কে!  

অফবিট

টিবিএস ডেস্ক
03 April, 2022, 01:40 pm
Last modified: 15 May, 2022, 10:09 am
৬০০ বছরেরও পুরনো, ইনকা সভ্যতার এই নিদর্শন নিয়ে ঐতিহাসিকদের গবেষণা কখনোই থেমে ছিল না। এবার তাদের দাবি, যেসব 'ইনকা' এই প্রাচীন শহরটি প্রতিষ্ঠা করেছিল, তারা আসলে শহরটিকে 'হুয়ানা পিচু' নামে ডাকতো।

সারা বিশ্বের পর্যটকদের কাছে এক অন্যতম আকর্ষণ পেরুর 'মাচু পিচু' শহর। ঐতিহাসিক এ স্থানটি ইনকা সভ্যতার নিদর্শন হিসেবে পরিচিত। কিন্তু সম্প্রতি ইনস্টিটিউট অব আন্দিয়ান স্টাডিজ এর জার্নাল 'নাওপা পাচা'তে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, গত ১০০ বছর ধরে মানুষ ভুল নামে জেনে এসেছে এই মাচু পিচুকে!

৬০০ বছরেরও পুরনো এই ঐতিহাসিক নিদর্শন নিয়ে ঐতিহাসিকদের গবেষণা কখনোই থেমে ছিল না। প্রতিনিয়তই আবিষ্কৃত হচ্ছে নতুন নতুন সত্য। গেল বছর গবেষকরা আবিষ্কার করেছিলেন যে, এই ইনকান শহরটি যতটা পুরনো বলে ধারণা করা হতো, তার চেয়ে অন্তত ৩০ বছর বেশি পুরনো।

এবার তাদের দাবি, যেসব 'ইনকা' এই প্রাচীন শহরটি প্রতিষ্ঠা করেছিল, তারা আসলে শহরটিকে 'হুয়ানা পিচু' নামে ডাকতো। এ দুটি শব্দকে ভাঙলে দেখা যায়, হুয়ানা অর্থ 'নতুন বা তরুণ' এবং আদিবাসী কুয়েচুয়া ভাষায় পিচু অর্থ 'পর্বতচূড়া'। সাউদার্ন উটাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এমিলি ডিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে পুরনো নামটির অর্থ জানান।

অন্যদিকে, মাচু অর্থ 'পুরনো'। তার মানে এতদিন যাবত মানুষ শহরটিকে জেনে এসেছে 'পুরনো পর্বতচূড়া' নামে, বলেন এমিলি ডিন।

প্রতিবেদনটির লেখক ও ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ব্রায়ান বাওয়ারের মতে, "ধারণা করা হয়, ইনকা সাম্রাজ্যের রাজধানী কোস্কোতে বসবাসরত রাজকীয় ইনকাদের জন্য একটি এস্টেট হিসেবে ১৪২০ সালের দিকে এই শহরটি নির্মাণ করা হয়।"

পরবর্তীতে স্প্যানিশরা ইনকা সাম্রাজ্য দখল করে নিলে হুয়ানা পিচু পরিত্যক্ত হয়ে যায়। শতকের পর শতক ধরে আন্দিজ পর্বতমালার গভীরে লুকিয়ে ছিল ইনকাদের এই শহর। ১৯১১ সালে আমেরিকান প্রত্নতত্ত্ববিদ হিরাম বিংহাম এটি পুনরায় আবিষ্কার করেন।

বিংহাম তার গাইড মেলকোর আর্তেগার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিকে এ শহরটিকে 'মাচু পিচু' বলে আখ্যা দেন। কিন্তু গবেষক ব্রায়ান বাওয়ার এবং দোনাতো আমান্ডো গঞ্জালেস বিংহামের ব্যক্তিগত নোট অনুসন্ধান করে জানতে পারেন যে তিনি এই নামকরণ নিয়ে সন্দিহান ছিলেন।

এরপর তারা দুজন বিংহামের ওই স্থান পরিদর্শনের আগের এবং পরের মানচিত্রাবলীউ রিভিউ করেন।

তবে সবচেয়ে চমকপ্রদ তথ্য পাওয়া যায় ১৫৮৮ সালে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে। সেখানে বলা হয়, ভিলকাবাম্বা অঞ্চলের আদিবাসীরা হুয়ানা পিচুতে ফিরে আসার কথা ভাবছে!

নাম কি বদলাবে?

বছরের পর বছর ধরে বিশ্ববাসী যে নামে মাচু পিচুকে চিনেছে, সেই নাম কি এবার বদলে যাবে? উত্তর হচ্ছে, না। দক্ষিণ আমেরিকার সবচেয়ে জনপ্রিয় এই পর্যটন কেন্দ্রটির নাম বদলানোর কোনো সম্ভাবনা নেই।

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৭০০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত মাচু পিচু ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট এর একটি।

১৫ শতকের ইনকা সাম্রাজ্যের এই নিদর্শনটিকে এক পলক দেখতে বিগত বছরগুলোতে প্রায় ১ মিলিয়ন বা তারও বেশি দর্শণার্থী জড়ো হয়েছেন।

এমনকি গবেষকরাও মাচু পিচুর নাম বদলানোর সুপারিশ করেননি। বাওয়ার বলেন, "যেহেতু এটি মাচু পিচু নামেই বিশ্বব্যাপী পরিচিত হয়ে গেছে, তাই আমরা এটির নাম বদলানো পরামর্শ দিচ্ছি না।"

সূত্র: সিএনএন 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.