৬০০ ইমেইল, ৮০টি ফোনকলের পর বিশ্বব্যাংকে চাকরি পেয়েছেন ২৩ বছর বয়সী এই তরুণ! 

অফবিট

টিবিএস ডেস্ক
29 September, 2022, 10:30 pm
Last modified: 29 September, 2022, 10:45 pm
বৎসল নাহাতা বলেন, "কিন্তু আমি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলাম যে কিছুতেই ভারতে ফিরে যাবো না এবং আমার প্রথম বেতন হবে ডলারেই। এরপর আমি বিভিন্নভাবে নেটওয়ার্কিং করতে লাগলাম এবং চাকরির পোর্টালে আবেদন করার চিন্তা বাদ দিয়ে দিলাম।"

বলা হয়ে থাকে, পরিশ্রমের ফল কখনো বৃথা যায় না এবং সফলতা অর্জনের কোনো সংক্ষিপ্ত পথ নেই। তার মানে জীবনে ভালো কিছু অর্জন করতে চাইলে অবশ্যই পরিশ্রম ও অধ্যবসায় প্রয়োজন। ২৩ বছর বয়সী আইভি লিগ গ্র্যাজুয়েট বৎসল নাহাতা যেন সেটিই প্রমাণ করলেন। বিশ্বব্যাংকে নিজের স্বপ্নের চাকরির জন্য ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা এই তরুণ লিখেছেন ৬০০ ইমেইল, করেছেন ৮০টি ফোন কল!

সম্প্রতি লিংকডইনে নিজের এই অবিশ্বাস্য যাত্রার কথা শেয়ার করেছেন বৎসল নাহাতা। তার এই আলোচিত পোস্টে লাইক দিয়েছেন ১৫,০০০ ব্যবহারকারী এবং শেয়ারও করেছেন প্রচুর মানুষ!
বৎসল জানিয়েছেন, ২০২০ সালে কোভিড মহামারির সময় ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক শেষ পর্যায়ে ছিলেন তিনি। মহামারি চরম আকার ধারণ করতে না করতেই কোম্পানিগুলো নির্বিচারে কর্মী ছাঁটাই করছিল তখন। এমনই এক সময়ে চাকরির জন্য আবেদন করতে শুরু করেন বৎসল। কিন্তু গতানুগতিক আবেদনপত্র জমা দেওয়ার মাধ্যমে নয়, বরং আরও স্মার্ট পদ্ধতি বেছে নেন তিনি!

বৎসল নাহাতা বলেন, "সেসময় আমার হাতে কোনো কাজ ছিল না এবং দুই মাসের মধ্যেই আমার স্নাতক শেষ হবার পথে। যেহেতু আমি একজন 'ইয়েল গ্র্যাজুয়েট' হবো, তাই আমি নিজেই ভাবছিলাম- এত ভালো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে লাভ কী যদি একটা চাকরিই নিশ্চিত করতে না পারি! আমার মা-বাবা যখন আমাকে ফোন করে আমার অবস্থা জানতে চাইলেন, তখন এই চিন্তাটা আরও প্রকট হয়ে উঠলো।"

তিনি আরও বলেন, "কিন্তু আমি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলাম যে আমি কিছুতেই ভারতে ফিরে যাবো না এবং আমার প্রথম বেতন হবে ডলারেই। এরপর আমি বিভিন্নভাবে নেটওয়ার্কিং করতে লাগলাম এবং চাকরির পোর্টালে আবেদন করার চিন্তা বাদ দিয়ে দিলাম।"

বৎসল নাহাতা আরও জানান, পরবর্তী দুই মাসে তিনি ১৫০০ 'কানেকশন রিকোয়েস্ট' পাঠিয়েছেন, ৬০০ ইমেইল লিখেছেন, ৮০টি ফোন কল করেছেন এবং অসংখ্যবার প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন। এমনকি ২০১০ সালের সিনেমা 'দ্য সোশ্যাল নেটওয়ার্ক'-এর 'দ্য জেন্টল হাম অব অ্যাংজাইটি' ইউটিউবে তার সবচেয়ে বেশিবার বাজানো গান হয়ে দাঁড়িয়েছিল!

"আমি এত এত দ্বারে ঘুরেছি, এতবার চেষ্টা করেছি যে শেষ পর্যন্ত আমার এই কৌশল কাজে লেগেছে! মে মাসের প্রথম সপ্তাহে আমি চারটি চাকরির অফার পাই এবং অবশেষে বিশ্বব্যাংককে বেছে নেই। তারা আমার ওপিটির পর আমার ভিসা স্পন্সর করার আগ্রহ প্রকাশ করে এবং আমার ম্যানেজার আমাকে বিশ্বব্যাংকের বর্তমান ডিরেক্টর অব রিসার্চের সাথে মেশিন লার্নিং বিষয়ক একটি গবেষণার সহ-লেখক হওয়ার প্রস্তাব দেন", বলেন নাহাতা।

বৎসল নাহাতা দিল্লির শ্রী রাম কলেজ অব কমার্স থেকে অর্থনীতি নিয়ে পড়াশোনা করেন এবং পরে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। নাহাতা জানান, জীবনের কঠিন সময়ে তিনি উল্লেখযোগ্য কিছু শিক্ষা পেয়েছেন: নেটওয়ার্কিং এর ক্ষমতা সম্পর্কে অবগত হওয়া, আত্মবিশ্বাস অর্জন যা তাকে যেকোনো পরিস্থিতিতে টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করে এবং অনুধাবন করা যে আইভি লিগ ডিগ্রি নিয়ে তিনি আসলে কতদূর পৌঁছাতে পারেন।

নাহাতা জানান, তিনি নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন যাতে করে মানুষ তাকে দেখে বুঝতে পারে যে কখনো হাল ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়। "আপনি যদি সেই একই পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যান, যেন মনে হচ্ছে এই বুঝি পৃথিবীর শেষ... কিন্তু না, এখানেই শেষ নয়। আপনি যদি ভুল থেকে শিক্ষা নেন এবং যথেষ্ট চেষ্টা করেন, তাহলে সুদিন আসবেই"- এই লিখে নিজের পোস্ট শেষ করেন বৎসল নাহাতা।

সূত্র: এনডিটিভি

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.