ভ্যাকসিন নিতে সরীসৃপের সাজ, ব্রাজিলে রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে অভিনব প্রতিবাদ

অফবিট

টিবিএস ডেস্ক
24 July, 2021, 03:45 pm
Last modified: 24 July, 2021, 04:02 pm
করোনা মহামারিতে এখন পর্যন্ত ৫,৪৫,০০০ ব্রাজিলীয় নাগরিক মারা গেছেন। এই মহাবিপর্যয়ের জন্য দেশটির রাষ্ট্রপতি জাইর বোলসোনারোর হেঁয়ালিকে দায়ি করছেন অনেকেই।

গত সপ্তাহে ক্লিংগার দুয়ার্তে রদ্রিগেজ যখন কোভিড ভ্যাকসিন নেওয়ার উদেশ্যে যাত্রা করেছিলেন, তখন তিনি দক্ষিণ আমেরিকান সাপের বেশে সেজেছিলেন।

জিজ্ঞেস করতেই বললেন, 'এটা একটা সুকুরি'। অর্থাৎ, অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকা নিতে যাওয়ার সময় তিনি যে আমাজনিয়ান ওয়াটার বোয়ার শরীরের চামড়ার বেশ ধারণ করেছিলেন, সুকুরি সেটির দেশীয় নাম।

টিকা নিতে যাওয়ার সময় ব্রাজিলীয়দের এই অদ্ভুত সাজপোশাকের ভিডিও মুহূর্তেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। তবে একে নিছকই কোনো ফ্যাশন স্টেটমেন্ট ধরে নিলে ভুল হবে। বরং এটি ছিল ব্রাজিলীয় সরকারের কোভিড মহামারি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার বিরুদ্ধে একটি প্রতিবাদ।

চলমান করোনা মহামারিতে এখন পর্যন্ত ৫,৪৫,০০০ ব্রাজিলীয় নাগরিক মারা গেছেন; যাদের মধ্যে রদ্রিগেজের শালাও ছিলেন।

পরিবেশবাদী ও ইন্টারনেট ইনফ্লুয়েন্সার রদ্রিগেজ ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, 'যদি সরকার আরও দ্রুত ভ্যাকসিন আনতে পারত, তাহলে আরও অনেক মানুষের মতো তিনিও আজ আমাদের সাথে থাকতেন।'

জাইর বোলসোনারো। প্রতিকৃতি: সংগৃহীত

রদ্রিগেজের সাপের কস্টিউমের সঙ্গে একটি প্ল্যাকার্ড লাগানো ছিল; যেখানে তিনি ব্রাজিলের বর্তমান প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসোনারোর অভিশংসনের দাবি করেছেন।

টিকা নিতে গিয়ে সরীসৃপ প্রজাতির প্রাণিদের রূপে সাজার ক্ষেত্রে রদ্রিগেজের প্রতিবাদই একমাত্র উদাহরণ নয়। এ ধরনের কাজের ব্যাখ্যা হিসেবে ব্রাজিলীয়রা খোদ প্রেসিডেন্টকেই সামনে দাঁড় করিয়েছেন।  

গত বছর দেশের জন্য অপর্যাপ্ত ভ্যাকসিন ডোজ কেনা ও নিজে টিকা নিতে অস্বীকৃতি জানানোর মাধ্যমে ব্রাজিলে এক প্রকার সংকট তৈরি করেছিলেন প্রেসিডেন্ট বলসোনারো। তিনি ব্যঙ্গাত্মকভাবে দাবি করেছিলেন, ফাইজারের টিকা নিলে হয়তো মানুষ কুমিরে পরিণত হবে। তার সেই কথার সূত্র ধরেই তার এই অস্বীকারবাদী আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে বিজ্ঞানপন্থী বিরোধীদলীয় লোকেরা বিভিন্ন ধরনের সরীসৃপের সাজে টিকা নিতে হাজির হয়েছেন।

এদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষই এসেছেন 'জাকারে' রূপে সেজে। এটি এক ধরনের দেশীয় কুমির, যা আমাজনসহ ব্রাজিলের বিভিন্ন অঞ্চলে দেখা যায়। কিন্তু ২০১৯ সালে বলসোনারো ক্ষমতায় আসার পর থেকেই অবৈধ শিকারি ও খননকারীদের আক্রমণের শিকার হয়ে আসছে কুমিরের এই প্রজাতি।

অ্যালিগেটরের সাজে এ প্রতিবাদকারী। ছবি: রয়টার্স

ফোর্তালেজা শহরের ৬০ বছর বয়সী শিক্ষক, লিলা ফার্নান্দেজ বলেন, 'আমার কস্টিউম আমার ভীতি-দুঃস্বপ্নকে প্রকাশ করছে।' ভাইরাস প্রতিরোধে ব্যর্থতা, টিকার সংকট ও যথাযথ সুরক্ষা ব্যবস্থা না নেওয়া- বোলসোনারোর এসব ব্যর্থতায় তিনি ক্ষুদ্ধ, যা তার কুমিরের কস্টিউমের মধ্য দিয়ে প্রকাশ পাচ্ছে।

ফার্নান্দেজ জানালেন, করোনার আঘাতে তিনি তার শাশুড়ি, ভাগ্নীর স্বামী এবং একাধিক ঘনিষ্ঠ বন্ধু হারিয়েছেন। তিনি বলেন, 'আপনি এমন একটা পরিবার খুঁজে পাবেন না যারা কোনো প্রিয়জনকে হারায়নি। প্রেসিডেন্ট যা করেছেন, তা আমরা কখনোই ভুলব না। তার কারণে অসংখ্য ব্রাজিলীয় আজ কবরের অন্ধকার গহ্বরে, যাদেরকে হয়তো বাঁচানো সম্ভব ছিল।'

আমাজন সিটি অব মানাউসের বাসিন্দা রদ্রিগেজ আরও এক ধাপ এগিয়ে নিজেকে অ্যানাকোন্ডা সাপের রূপে সাজাবেন বলে ঠিক করেছেন। তিনি জানান, এই ঐতিহ্যবাহী আমাজনীয় সাপ ওষুধ ও বিজ্ঞানের প্রতীক।

২৯ বছর বয়সী রদ্রিগেজ তার টিকাদান নিয়ে টিকটক ভিডিও বানিয়েছেন, যেটির ইতোমধ্যেই ৬ দশমিক ৪ মিলিয়ন ভিউ হয়েছে।


  • সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.