বৈরুত বিস্ফোরণ: ধ্বংসস্তূপের কাঁচ ও পাথরকুঁচি যেভাবে প্রেরণাদায়ী ভাস্কর্যে রূপ নিলো

অফবিট

টিবিএস ডেস্ক
26 October, 2020, 03:20 pm
Last modified: 26 October, 2020, 04:39 pm
সপ্তাহের পর সপ্তাহ ধরে বৈরুতের রাস্তায় ঘুরে-ঘুরে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া ধাতব, ভাঙা কাঁচ ও অন্যান্য ব্যবহার্য জিনিসপত্র সংগ্রহ করেছেন নাজের। আর সেগুলো দিয়েই গড়ে তুলেছেন ভাস্কর্যটি।

লেবাননে কখনো শান্তি দেখেছেন বলে মনে পড়ে না হায়াত নাজেরের। তবে নিজ মনস্তাপ ও বেদনাকে চমৎকার শিল্পকর্মে পরিণত করতে শিখে নিয়েছেন এই তরুণী।

গত ৪ আগস্ট যখন বন্দরে এক প্রলয়ঙ্কারী বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠল চারপাশ, তিনি তখন ছিলেন বৈরুতের পথে। ওই বিস্ফোরণে ১৯০ জনের প্রাণহানি ঘটে। আহত হন ৬ হাজারেরও বেশি মানুষ। গৃহহীন হয়ে পড়েন ৩ লাখেরও বেশিজন।

রাজনৈতিক হাঙ্গামা, অর্থনৈতিক পতন এবং করোনাভাইরাসের মারাত্মক প্রাদুর্ভাবে লেবানন ইতোমধ্যেই ভুগছিল। তার ওপর বিস্ফোরণের ঘটনা ছোট্ট ওই দেশকে অনেকটাই পক্ষাঘাতগ্রস্ত করে দিয়েছে।

'ওই বিস্ফোরণে আমার মন ভেঙ্গে গিয়েছিল। স্রেফ মুখ থুবড়ে পড়েছিলাম আমি। ট্রমাটাইজ হয়ে পড়েছিলাম। তবে সত্যি বলতে, লেবাননে আমরা সবাই এমনিতেও ট্রমাটাইজড,' সিএনএনকে বলেন ৩৩ বছর বয়সী নাজের।

আরও অনেক অধিবাসীর মতো তিনিও অংশ নিয়েছিলেন ধ্বংসাবশেষ পরিষ্কার করে শহরটিতে হারানো সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টায়। সে সময়ই তার মাথায় আইডিয়া আসে: একত্রিত ও পুনর্গঠিত হতে নিজ দেশের মানুষদের প্রেরণা জোগাবে- এমন একটি ভাস্কর্য বানাতে পারলে কেমন হয়?

'এমন অনুভূতি থেকে শিল্পের মাধ্যমে এই ক্ষত সারিয়ে তুলে, আমার দেশের মানুষদের বাস্তবতা মেনে নিতে ও ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করার চেষ্টা চালিয়েছি,' বলেন তিনি।

সপ্তাহের পর সপ্তাহ ধরে বৈরুতের রাস্তায় ঘুরে-ঘুরে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া ধাতব, ভাঙা কাঁচ ও অন্যান্য ব্যবহার্য জিনিসপত্র সংগ্রহ করেছেন নাজের। আর সেগুলো দিয়েই গড়ে তুলেছেন ভাস্কর্যটি।

ভাস্কর্যের পাশাপাশি গ্রাফিতি ও পেইন্টিংয়ে প্রতিবাদের ভাষা ফুটিয়ে তোলায় সুনাম আছে তার। গত বছর 'দ্য ফিনিক্স' নামে আরেকটি ভাস্কর্য তৈরি করেন। লেবাননের রাজনৈতিক টালমাটাল সময়ে চলা বিভিন্ন সংঘর্ষে ক্ষতিগ্রস্ত জিনিসপত্র ছিল সেটির উপাদান।

হায়াত নাজের

নাজের অবশ্য জানিয়েছেন, এ ধরনের শৈল্পিক প্রতিবাদকে তার দেশের শাসকগোষ্ঠী ভালোভাবে নেয় না। এ কারণে তার বেশিরভাগ শিল্পকর্মই ধ্বংস করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। নতুন এই ভাস্কর্যের ভবিষ্যৎ নিয়ে তিনি তাই উদ্বিগ্ন।

'কোনো একটি বিস্ফোরণের পর আপনার পক্ষে বাড়িঘর ও দালানকোঠা আবারও বানানো সম্ভব; কিন্তু সেগুলো পুরনো স্মৃতি ফিরিয়ে আনতে পারবে না। তাছাড়া, লেবাননেন ইতিহাসজুড়েই দেখা যায়, জনগণ নিজেদের জন্য যা কিছু চায়, সরকার সেসব গুঁড়িয়ে দেয়,' বলেন নাজের।

আরও বলেন, 'এ কারণেই আমার প্রজেক্টটি এত গুরুত্বপূর্ণ। এ হলো লড়াইয়ের প্রতীক। আমরা শিল্পের মাধ্যমে আমাদের আওয়াজ তুলছি; গল্প বলছি নিজেদের।'

  • সূত্র: সিএনএন

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.