কেন কসমেটিক সার্জারির দিকে ঝুঁকছেন চীনা পুরুষরা?

অফবিট

টিবিএস ডেস্ক
11 September, 2021, 06:45 pm
Last modified: 11 September, 2021, 06:45 pm
চীনে তুলনামূলক উচ্চপদে কাজ করা পুরুষদের ১৭ শতাংশ কসমেটিক চিকিৎসা নিয়েছেন। পুরুষদের একটি বড় অংশ ৩০ বছর বয়সের আগেই এই প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে গেছেন।

চেহারা 'সুন্দর' না হলে চীনের প্রতিযোগিতামূলক সমাজে সফলতার দৌড়ে পিছিয়ে যাবেন- এমন ধারণা থেকে নিজেকে শল্যচিকিৎসকের ছুরির নিচে সঁপে দিয়েছেন জিয়া সুরং। সুরং এর মতো হাজারো চীনা তরুণ এখন কসমেটিক সার্জারির দিকে ঝুঁকছেন।

চীনে গায়ের রঙ, চোখ ও নাকের গড়নের উপর ভিত্তি করে প্রায়ই সৌন্দর্য্যের সংজ্ঞা বদলে যায়। তাছাড়া, বিতর্কিত শব্দত্রয় 'লিটল ফ্রেশ মিট' দিয়ে সুপুরুষ তরুণ বা যুবকদের বুঝানো হয়, যারা দেখতে বেশ আকর্ষণীয়।

তাই ২৭ বছর বয়সী গবেষক সুরং চান সার্জারির মাধ্যমে নিজের  'ইঞ্জিনিয়ারিং ভাব' বদলে এমন কিছু নিয়ে আসতে, যা তাকে আরও ভালো কাজের সুযোগ করে দিবে।

"আমার মনে হয়, এই বয়সে আমার 'ফ্রেশ মিট' হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু এখনই আমাকে দেখতে মধ্যবয়সী আঙ্কেলের মতো লাগে," বার্তা সংস্থা এএফপি'কে বলছিলেন সুরং।

নিজের চেহারার বৈশিষ্ট্য বদলে দিতে ইতোমধ্যেই ফেস-ফিলার প্রক্রিয়ার জন্য ৪০,০০০ ইউয়ান (৬২০০ ডলার) ব্যয় করেছেন সুরং। এবার তিনি বেইজিংয়ে আরও একটি অস্ত্রোপচারের জন্য তৈরি হচ্ছেন।

সুরং আরও জানালেন, তিনি মফস্বলে বড় হয়েছেন এবং একসময় তার মুখের রঙ কালো ছিল। নিজের চেহারার জন্য সবসময় হীনম্মন্যতায় ভুগতেন তিনি। তাই চেহারায় নতুন বৈশিষ্ট্য যোগ করার পরিকল্পনা অনেক আগে থেকেই ছিল তার।

চীনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যাপক জনপ্রিয়তার ফলে এই কসমেটিক সার্জারি প্রক্রিয়ার চাহিদা আরও বেড়ে গেছে। কারণ সেখানে সৌন্দর্য্য বৃদ্ধির নানা টিউটোরিয়াল দেখানো হয় এবং এর ফলে মানুষের মনে এক ধরনের চাপ তৈরি হয়। তাই চীনের বহু শিক্ষিত পুরুষ এখন অ্যাস্থেটিক এবং অস্ত্রোপচার প্রক্রিয়ার দিকে ঝুঁকছেন।

আইরিসার্চ এর তথ্য অনুযায়ী, চীনে তুলনামূলক উচ্চপদে কাজ করা পুরুষদের ১৭ শতাংশ কসমেটিক চিকিৎসা নিয়েছেন। পুরুষদের একটি বড় অংশ ৩০ বছর বয়সের আগেই এই প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে গেছেন।

জিয়া সুরং এর চিকিৎসক, জিয়া ঝেনগি বলেন, "সার্জারির মাধ্যমে চেহারার অভিব্যক্তি বদলানো যায়। এটা মানুষকে একটা অন্তরঙ্গতার অনুভূতি দেয়, যা মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষেত্রে ভালো কাজ করে।"

সার্জারি অ্যাপ 'সো-ইয়ং' জানিয়েছে, বিশের কোঠায় থাকা চীনা তরুণেরা মূলত চোখ ও নাকের আকৃতি পুনর্গঠনে আগ্রহী।

সুরং মনে করেন, "এটা গুচ্চি'র হ্যান্ডব্যাগ কেনার মত ব্যাপার নয়- এখানে নিজেকে একটা সুযোগ দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। কারণ আত্মবিশ্বাস থাকলে তা আপনার কাজে ও জীবনে গতি এনে দিবে।"

আইটি কোম্পানির চাকরি ছেড়ে দিয়ে পুরোদস্তুর সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার বনে যাওয়া ঝ্যাং জিয়াওমা জানালেন নিজের অভিজ্ঞতার কথা।

"আপনার চেহারা যদি আকর্ষণীয় হয়, তাহলে ক্যামেরার সামনে আপনাকে দুর্দান্ত লাগবে এবং এ সংক্রান্ত কাজের সুযোগ আসবে," বলেন জিয়াওমা। 

জিয়াওমা 'এলফ ইয়ারস' নামক একটি প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে গেছেন, যেখানে হ্যালুরনিক এসিড কানের ভেতর ঢালা হয় এবং কানকে সুন্দর আকৃতি দেওয়া হয়।

নান ওয়েন নামের আরেক চীনা মডেল নিজের চেহারার বৈশিষ্ট্য বদলাতে ৬০টিরও বেশি প্রক্রিয়া অবলম্বন করেছেন। তার বিশ্বাস, এই সার্জারি তার ভাগ্য বদলে দিয়েছে। 

তার ভাষ্যে, "এটা অনেকটা ফেস মাস্কের মতই সুবিধাজনক। বয়স বাড়লেও চেহারায় বার্ধক্যের ছাপ পড়বে না, এটা সত্যিই দারুণ ব্যাপার।"

আইরিসার্চ সূত্র বলছে, এই মুহূর্তে চীনের কসমেটিক সার্জারি শিল্পের বাজারমূল্য ১৯৭ বিলিয়ন ইউয়ান।   

কিন্তু চীনা কর্তৃপক্ষ জাতির মধ্যে গড়ে ওঠা এই 'পুরুষত্ব সংকট' নিয়ে বেশ চিন্তিত। বেইজিং এই 'লিটল ফ্রেশ মিট' ধারণার সমালোচনা করেছে। পুরুষত্বের প্রথাগত ধারণা মেনে চলতে ছেলেদের জন্য শারীরিক শিক্ষা কার্যক্রম আরও জোরদার করার সুপারিশ করেছে তারা।  

কসমেটিক সার্জারির আগে ও পরে নিজের চেহারার ভিন্নতা দেখাচ্ছেন চীনা অভিনেতা নাই ওয়েন। ছবি: এএফপি

এছাড়াও, নিরাপত্তা এবং সার্জারির মান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। চীনের ন্যাশনাল কনজ্যুমার এসোসিয়েশনের কাছে কসমেটিক শিল্প সম্পর্কিত ৭ হাজার ২০০ অভিযোগ জমা পড়েছে।

চলতি বছরের জুলাইয়ে, লিপোসাকশন নামক সার্জারি প্রক্রিয়ার পর ইনফেকশনের কারণে ৩৩ বছর বয়সী অনলাইন ইনফ্লুয়েন্সার, জিয়াও রান মারা যান। তিনি যে ক্লিনিকে সার্জারি করিয়েছিলেন, সেটিও বন্ধ পাওয়া যায়।

অভিনেতা গাও লিউর সার্জারি সঠিকভাবে সম্পন্ন না হওয়ায়, তার নাকে কালচে দাগ পড়ে যায়। সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করার পর তা ভাইরাল হয়।  

তবে মডেল নান স্বীকার করেন, "সার্জারি একটা নেশার মত। কিন্তু কেউই নিজেকে কুৎসিত রূপে দেখতে চায়না।"

বেইজিংইয়ে ঘন্টাব্যাপী সার্জারির পর জিয়া সুরং যখন আয়নায় নিজের মুখ দেখলেন, তখন তার অনুভূতি ছিল, "হ্যাঁ, কিছুটা আলাদা লাগছে। তবে আমি যেমনটা প্রত্যাশা করেছিলাম, তেমন হয়নি। হয়তো পারফেক্ট সৌন্দর্য্য আসতে কিছুটা সময় লাগবে।"

সূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট       
 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.