ভিসার দরকার হয় না: পাখির অভিবাসন রহস্য উদ্ঘাটন করলেন কিউবার জীববিজ্ঞানীরা!

অন্যান্য

রয়টার্স
17 February, 2024, 09:20 pm
Last modified: 17 February, 2024, 09:57 pm
মুগিকা বলেন, ‘পাখিরা অবরোধ কিংবা ভৌগোলিক সীমানা বোঝে না। তাই আমাদের দেশে ঢোকার জন্য তাদের ভিসার প্রয়োজন হয়না।’

সম্প্রতি একটি পরিযায়ী পাখি ধরেছিলেন হাভানা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড্যানিয়েলা ভেনচুরা।

হাভানার বোটানিক্যাল গার্ডেনের বনে পেতে রাখা জালে আটকে ছিল পাখিটি। জাল ছিড়ে পালানোর চেষ্টায় এত জোরে এটি ডানা ঝাপটাচ্ছিল যে পুরো জালটি নড়ছিল।

ধরা পড়া পাখিটি একটি ক্যাটবার্ড। তার মাথায় কালো ঝুঁটি, আর সারা শরীর ধূসর।

ভেনচুরা সেখানে তার ছাত্রদের ডেকে আনেন। তারা এটিকে পর্যবেক্ষণ করে বিভিন্ন তথ্য লিখে নেন। যেমন: পাখিটি কোন প্রজাতির, এর ওজন, শরীরে চর্বি কতটুকু আছে প্রভৃতি। তবে কিছুক্ষণ পরেই পাখিটি উড়ে যায়।

শীতকালে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা থেকে থেকে আসা পরিযায়ী পাখিরা কিউবায় কোথায় ও কীভাবে থাকে এসংক্রান্ত রহস্য উদ্‌ঘাটন করার লক্ষ্য নিয়ে পরিচালিত একটি প্রকল্পের অংশ হিসেবে তারা এসব তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছে। 

ভেনচুরা এক সাক্ষাৎকারে বলেন, 'আমরা প্রজনন অঞ্চলে (উত্তর আমেরিকাতে) পাখিদের বাস্তুসংস্থান সম্পর্কে অনেক তথ্য জানি। কিন্তু শীতে পাখিরা যে-সব অঞ্চলে পরিভ্রমণ করে সেখানে তারা কীভাবে জীবন কাটায় সে সম্পর্কে খুব কমই জানি।'

এ ধরনের গবেষণার প্রতিবন্ধকতা সম্পর্কে পক্ষীবিদ লর্ডেস মুগিকা বলেন, এক্ষেত্রে একটি বড় সমস্যা হচ্ছে রাজনীতি। 

সোভিয়েত-মার্কিন স্নায়ুযুদ্ধকালে সমাজতান্ত্রিক কিউবার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। যা ক্যারিবীয় দ্বীপদেশটির ওপর আজও বলবৎ। এ কারণে ওয়াশিংটন ও হাভানার মধ্যে বাণিজ্য ও আর্থিক লেনদেন নেই। 

যুক্তরাষ্ট্র ও কিউবার মধ্যে দীর্ঘ রাজনৈতিক জটিলতা বিজ্ঞানকেও রেহাই দেয়নি। যদিও এসবের সঙ্গে পাখিদের কোনো লেনদেন নেই, তবুও তারা রাজনীতির হিসাবের বাইরে নেই। 

মুগিকা বলেন, 'পাখিরা অবরোধ কিংবা ভৌগোলিক সীমানা বোঝে না। তাই আমাদের দেশে ঢোকার জন্য তাদের ভিসার প্রয়োজন হয়না।'

তিনি আরও বলেন, 'আমি প্রত্যাশা করি এমন একটা সময় আসবে যখন এই সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে এবং আমরা (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কিউবা) যৌথ প্রকল্প গ্রহণ করতে পারব।'

এই প্রকল্পে মুগিকার সঙ্গে কাজ করছেন আরেক পক্ষীবিদ মার্টিন অ্যাকোস্টা।

মুগিকা ও মার্টিন অ্যাকোস্টা দুজনেই কিউবার বিখ্যাত পক্ষীবিদ। 

তারা বলেন, কানাডার 'পরিবেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তন'- সংস্থার সহায়তায় প্রকল্পটি পরিচালিত হচ্ছে।

এমওটিইউএস নামে একটি আন্তর্জাতিক ট্র্যাকিং প্রোগ্রামের অধীনে কানাডা ও কিউবার অংশীদারেরা যৌথভাবে একটি রেডিও টেলিমেট্রি অ্যান্টেনা স্থাপন করেছে।

এমওটিইউএস উত্তর আমেরিকার অন্যান্য অংশে পাখিদের রেডিও-ট্যাগ অনুসরণ করে।

এই অ্যান্টেনা সম্প্রতি কিউবায় একটি ক্ষুদ্র সোয়াইনসন প্রজাতির একটি পাখি শনাক্ত করেছে।

এই পাখির ট্যাগটি লাগানো হয়েছিল কিউবা থেকে পাঁচ হাজার কিলোমিটার দূরের ব্রিটিশ কলাম্বিয়ায়।

অ্যাকোস্টা বলেন, 'আমরা এখন যে জটিল ধাপে পৌঁছেছি, কখনোই ভাবিনি আমরা এখানে পৌঁছাতে পারব।'

মুগিকা ও অ্যাকোস্টা তাদের পেশাগত জীবনের কঠিন দিনগুলো স্মরণ করেন।

মুগিকা বলেন, কয়েক দশক আগে একটি গবেষণার কাজ করতে গিয়ে তার ৩২ কেজি ওজন কমে যায়। তখন কিউবায় খাবারের অভাব ছিল। আর লজিস্টিকস সমস্যা তো এখনও আছেই। 

তারপরও গবেষক দলটি তাদের ছোট ছোট জয়ও উদ্‌যাপন করে।

ভেনচুরা তথ্য অনুযায়ী, কুয়াশা ভেজা জালে আটকে থাকা ক্যাটবার্ডটি গত নভেম্বরে একই জায়গায় ধরা পড়ে। তখন তার পায়ে একটি চিহ্নযুক্ত বেড়ি পড়িয়ে দেওয়া হয়। 

তিনি বলেন, এই তিনমাসে পাখিটির শরীরে চর্বি জমেছিল।

তিনি আরও বলেন, অল্প কয়েক দিন পড়েই এটি উত্তরে মেক্সিকো উপসাগরের দিকে পাড়ি জমাতো।

ভেনচুরা বলেন, '১০ গ্রাম (০.৩৫ আউন্স) ওজনের এই ছোট্ট পাখিগুলো সমুদ্র পার হয়ে যায়, আবার ফিরে আসে এবং বেঁচে থাকে; ভাবতেও অবাক লাগে।'

তিনি বলেন, 'এটা বিস্ময়কর, মানুষ এখনও যা চিন্তা করতে পারে না, অন্যান্য প্রাণী খুব সহজেই তা করতে পারে!'

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.