কালি ও কলম আয়োজিত তিন দিনব্যাপী সাহিত্য সম্মেলন শেষ হলো
সাহিত্য শিল্প ও সংস্কৃতিবিষয়ক মাসিক সাহিত্য পত্রিকা কালি ও কলম ২০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ৮ থেকে ১০ ফেব্রুয়ারি ধানমণ্ডির বেঙ্গল শিল্পালয়ে তিনদিনব্যাপী সাহিত্য সম্মেলন আয়োজিত হয়েছে। আয়োজনের দ্বিতীয় দিন ৯ ফেব্রুয়ারি মোট ৩টি আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
বিকেল ৪টায় কবিতা ও সাহিত্য – এসেছি কতদূর শিরোনামের আলোচনায় মূল বক্তব্য রাখেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর এমেরিটাস চিন্ময় গুহ। তিনি বলেন 'দৃশ্য মাধ্যম এবং ইন্টারনেটের প্রাবল্যের এই যুগেও সাহিত্য তার আকর্ষণ অথবা প্রয়োজনীয়তা ধরে রেখেছে, পাঠকরা বই কিনছেন, পড়ছেন, সাহিত্য নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা হচ্ছে। আমরা বিশ্বাস করি আমাদের সাহিত্য প্রতিভাবান কবি-সাহিত্যিকদের অংশগ্রহণে সমৃদ্ধ হচ্ছে।'
আরও বক্তব্য রাখেন আলোচক কবি ও কথাশিল্পী মাহবুব সাদিক, কথাসাহিত্যিক ও শিক্ষক আহমাদ মোস্তফা কামাল। সভাপতি ছিলেন সাংবাদিক, সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ আবুল মোমেন। বিকেল ৫টা ৩০ মিনিটে 'স্মৃতি-বিস্মৃতির মুক্তিযুদ্ধ' শীর্ষক আলোচনায় ছিল সমসাময়িককালে মুক্তিযুদ্ধের মহান আদর্শ থেকে আমরা দূরে সরে যাচ্ছি কি না, হৃদয়ের মণিকোঠায় যে ঘটনাবলির স্থান থাকার কথা ছিল, তা কি হারিয়ে যাচ্ছে বিস্মৃতির অতল?, এসব প্রশ্ন।
মূল বক্তা , ইতিহাসবিদ ও অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন 'মহান মুক্তিযুদ্ধ আমাদের জীবনের এক অবিস্মরণীয় অধ্যায়। এই যুদ্ধ শুধু স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেনি, বরং বাঙালি ও অন্যান্য জাতিসত্তাগুলিও পুনর্নির্মাণ করেছে। আমাদের সমাজ-রাজনীতি-অর্থনীতিসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধের ভুমিকা ও আদর্শের বিষয়াবলি আলোচিত ও প্রাসঙ্গিক। কিন্তু এই ইতিহাস ও তাৎপর্য নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে দরকার দায়িত্ববোধ ও সঠিক পরিকল্পনা।
আলোচক ছিলেন লেখক ও গবেষক সালেক খোকন, ও কথাসাহিত্যিক স্বকৃত নোমান। সভাপতি মফিদুল হক, লেখক, গবেষক ও প্রকাশক। সন্ধ্যা ৭টায় আজকের শেষ আয়োজনের বিষয় ছিল - নাটক-চলচ্চিত্র – নতুন কতটুকু নতুন। পরিবেশনা ও নির্মাণে চূড়ান্ত আধুনিকতার সময়ে পা রাখা মঞ্চনাটক ও চলচ্চিত্র এই দুই মাধ্যম আমাদের দেশে তাদের আঙ্গিক ও বিষয়-আশয়ে দর্শক-বোদ্ধার মননে কতটা ছাপ ফেলছে, কতটা এগিয়েছে, সেই প্রশ্নেরই উত্তর খোঁজার প্রয়াস এই আলোচনায়। মূল বক্তা ছিলেন চলচ্চিত্র নির্মাতা ও লেখক মতিন রহমান। আলোচক ছিলেন চলচ্চিত্র নির্মাতা, গীতিকার ও কবি মাসুদ পথিক এবং নাট্যকার ও কথাসাহিত্যিক রুমা মোদক। সভাপতিত্ব করেন শিক্ষাবিদ, নাট্যকার ও অনুবাদক আব্দুস সেলিম।
১০ ফেব্রুয়ারি সম্মেলনের শেষ দিনের আয়োজনে ছিল ৪টি আলোচনা অনুষ্ঠান।
শনিবার সকাল ১১টায় অনুষ্ঠিত হয় নারী – সমাজ ও সময়ের দেয়াল কি ভাঙছে শীর্ষক আলোচনা। এই আলোচনার মূল বক্তা ছিলেন শিক্ষাবিদ, নারী ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ মাহবুবা নাসরীন। আলোচক ছিলেন কথাশিল্পী ও অধ্যাপক মানস চৌধুরী এবং লেখক ও সাংবাদিক সাদিয়া মাহজাবীন ইমাম।
শনিবার বিকেল ৪টায় অনুষ্ঠিত হয় লোকসাহিত্য ও সংস্কৃতি - সমকালে শিকড়সন্ধান কতটা জরুরি শীর্ষক আলোচনা। এ আলোচনার মূল বক্তা ছিলেন লোকসংস্কৃতি গবেষক ও নাট্যকার সাইমন জাকারিয়া। আলোচক ছিলেন প্রাবন্ধিক ও গবেষক রঞ্জনা বিশ্বাস এবং গবেষক ও লেখক সঞ্জীব দ্রং।
শনিবার বিকেল ৫টা ৩০ মিনিটে অনুষ্ঠিত হয় সৃজনকলার ভিতর-বাহির শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এ আলোচনায় মূল বক্তা ছিলেন শিল্পী ও শিল্প-লেখক মুস্তাফা জামান। আলোচক ছিলেন স্থপতি ও শিক্ষাবিদ সাইফ উল হক এবং আলোকচিত্রী জান্নাতুল মাওয়া।
শনিবার সন্ধ্যা ৭টায় হয় তারুণ্য কি সত্যি জাগছে শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এই আলোচনায় আলোচক ছিলেন এভারেস্ট শৃঙ্গজয়ী প্রথম বাংলাদেশি নারী নিশাত মজুমদার, গায়ক ও গীতিকার শিবু কুমার শীল, চলচ্চিত্র নির্মাতা ও পরিচালক অমিতাভ রেজা চৌধুরী এবং কবি ও সাংবাদিক হানযালা হান।