অনলাইনে নারীর প্রতি হয়রানি প্রতিরোধে সচেতনতার পাশাপাশি আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ
অনলাইনে নারী ও কিশোরীদের প্রতি যৌন হয়রানিসহ অন্যান্য হয়রানি প্রতিরোধে ব্যাপকভাবে সচেনতার পাশাপাশি আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের তাগিদ দিয়েছেন অধিকারভিত্তিক নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা।
আগামীকাল (১৫ অক্টোবর) আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস উপলক্ষ্যে শনিবার আয়োজিত এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, ইন্টারনেটে আপত্তিকর ছবি বা ভিডিও ছেড়ে দেওয়া, গোপন বা একান্ত ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস, ব্ল্যাকমেইল, অ্যাকাউন্ট হ্যাক করা, যৌন নিপীড়নমূলক বার্তা পাঠানোর মাধ্যমে প্রতিনিয়ত কিশোরী ও নারীদের হেনস্তা করা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস উদযাপন জাতীয় কমিটির সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা আরও বলেন, ইন্টারনেট নিরাপত্তা সম্পর্কে ন্যূনতম জ্ঞান না থাকার কারণে এ ধরনের হয়রনির মাত্রা নিয়মিত বাড়ছে। নারী ও কিশোরীদের মধ্যে সাইবার অপরাধ দমনে সকলের সক্রিয় প্রতিরোধের পাশাপাশি আইনি সহায়তায় সরকারি বিভিন্ন হেল্প ডেস্কসমূহ ব্যবহারের তাগিদ দেন তারা।
আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস উদযাপন জাতীয় কমিটির সভাপ্রধান শামীমা আক্তারের সভাপতিত্বে এবং ফেরদৌস আরা রুমীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে আয়োকজকদের পক্ষ থেকে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন তামান্না রহমান।
তামান্না রহমান বলেন, দেশে বর্তমানে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ার পাশাপাশি বেড়েছে অনলাইনে হয়রানি। সম্প্রতি বেসরকারি সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)-এর এক জরিপে দেখা গেছে, ৩৬ শতাংশের বেশি মেয়েশিশু অনলাইনে পুরুষবন্ধু দ্বারা যৌন হয়রানির শিকার হয়। এছাড়া ২৭ শতাংশের বেশি মেয়েশিশু পরিচিত প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি ও আত্মীয় এবং ১৮ শতাংশ অপরিচিত প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি দ্বারা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়।
তিনি আরও বলেন, বৈশ্বিক আরেকটি জরিপে দেখা যাচ্ছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারী ৫৮ শতাংশ অনলাইনে কোনো না কোনো হয়রানির শিকার হয়েছেন। প্রতি পাঁচজনে একজন এ হয়রানি থেকে বাঁচতে নিজেকে গুটিয়ে নেন, অনেকে মানসিক সমস্যায় ভোগেন, আবার কেউ কেউ আত্মহত্যার পথ বেছে নেন।
এ কারণে কারও সঙ্গে ব্যক্তিগত তথ্য, ছবি, ভিডিও ইত্যাদি শেয়ার না করার জন্য প্রথমেই পরিবারগুলোকে সতর্ক করা দরকার উল্লেখ করে তামান্না রহমান পাশাপাশি আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান।
কমিটির সদস্য মঞ্জু আরা পারভীন বলেন, ফেইসবুক বা অন্য কোনো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কারও সঙ্গে বন্ধুত্ব করার ক্ষেত্রে বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো এক্ষেত্রে সচেতনতা সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখতে পারে। আরেক সদস্য সৈয়দা শামীমা সুলতানা বলেন, কারও সঙ্গে ব্যক্তিগত তথ্য বা ছবি কোনোভাবেই শেয়ার করা যাবে না।
বাংলাদেশ বর্তমানে অনলাইনে সহিংসতা ও সাইবার হয়রানির শিকার হলে আইনি সহায়তা গ্রহণে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন, সাইবার পুলিশ সেন্টার, পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন (পিসিএসডব্লিউ), হ্যালো সিটি অ্যাপ, রিপোর্ট টু র্যাব অ্যাপ, ৯৯৯ ইত্যাদি হেল্প ডেস্কের কথা উল্লেখ করেন বক্তারা।
দেশের ৫০টির বেশি জেলায় প্রতি বছরের মতো এবারও র্যালি, সেমিনার, মানববন্ধন, মেলা আয়োজন এবং গ্রামীণ নারীদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখার জন্য সম্মাননা প্রদানসহ নানা কর্মসূচির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস উদযাপন করা হচ্ছে।