এইচপিভি পরীক্ষার মাধ্যমে জরায়ু-মুখ ক্যান্সারে আক্রান্তের হার ৮০% কমানো সম্ভব

অন্যান্য

টিবিএস রিপোর্ট
25 June, 2023, 01:55 pm
Last modified: 25 June, 2023, 02:03 pm
বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ১৩ হাজার নারী স্তন ক্যান্সারে ও প্রায় ৯ হাজার নারী জরায়ু-মুখ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়।
ছবি- সৌজন্যেপ্রাপ্ত

স্ক্রীনিংয়ের মাধ্যমে দেশে জরায়ু-মুখ ক্যান্সারে আক্রান্তের হার ৮০% ভাগ কমিয়ে আনার লক্ষ্যে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে যার সর্বশেষ সংযোজন এইচপিভি পরীক্ষা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী, জরায়ু-মুখের ক্যান্সার পূর্বাবস্থা নির্ণয়ে ভায়া এর পাশাপাশি এইচপিভি পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকলে আরও নির্ভুলভাবে ক্যান্সারের জীবাণুর উপস্থিতি নির্ণয় করা সম্ভব হবে। নারীরা একবার স্ক্রীনিং কেন্দ্রে গেলে পাবে প্রয়োজনীয় সেবা, কারণ পজিটিভ নারীদের চিকিৎসা সহজতর হবে। 

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ১৩ হাজার নারী স্তন ক্যান্সারে ও প্রায় ৯ হাজার নারী জরায়ু-মুখ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। প্রাথমিক অবস্থায় সনাক্ত না হওয়ায় প্রতিবছর প্রায় ১২ হাজার নারী এই দুই ক্যান্সারে মারা যাচ্ছে। এই বিপুল জনগোষ্ঠীকে সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে পর্যায়ক্রমে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জেলা হাসপাতাল, মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে জরায়ু-মুখ ও স্তন ক্যান্সার স্ক্রীনিং কর্মসূচি সেবা সম্প্রসারিত করেছেন।

২০১২ সাল থেকে বাংলাদেশ সরকার এই প্রোগ্রামটি নির্বাচিত উপজেলাতে সম্প্রসারিত করতে শুরু করে। প্রোগ্রামের দ্রুত উন্নয়ন, সমন্বয় সাধন, স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের বিভিন্ন স্তরের সেবা প্রদানকারীদের কর্মদক্ষতা উন্নয়ন এবং স্ক্রীনিং কভারেজ বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় বিএসএমএমইউ এ 'জাতীয় জরায়ু-মুখ ও স্তন ক্যান্সার স্ক্রীনিং এবং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র' স্থাপন করে (২০১২-২০১৮)। পরবর্তীতে প্রত্যেক স্ক্রীনিংকৃত নারীর তথ্য সংরক্ষণ ও ট্রাকিংয়ের মাধ্যমে পজিটিভ রোগীদের চিকিৎসা, ব্যবস্থাপনা ও ফলোআপ নিশ্চিত করতে এবং জনসংখ্যা ভিত্তিক স্ক্রীনিং প্রোগ্রাম গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় "ইলেক্ট্রনিক ডাটা ট্র্যাকিংসহ জনসংখ্যা ভিত্তিক জরায়ু-মুখ ও স্তন ক্যান্সার স্ক্রীনিং প্রোগ্রাম (ইপিসিবিসিএসপি)" নামক একটি উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করে (২০১৮-২০২৪)।

প্রকল্পের কার্যক্রমের মাধ্যমে সারাদেশে ৬০০টি স্ক্রীনিং কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। সারাদেশে এযাবৎ প্রায় ৪৪ লাখ নারীর স্ক্রীনিং সম্পন্ন করা হয়েছে যার মধ্যে প্রায় ১.৬ লাখ নারী পজিটিভ সনাক্ত হয়েছেন।

"জাতীয় জরায়ু-মুখ ও স্তন ক্যান্সার নির্ণয় ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র" একটি পাইলট প্রোগ্রামের মাধ্যমে বাংলাদেশে স্ক্রীনিংয়ের মাধ্যম হিসেবে এইচপিভি পরীক্ষা প্রচলনের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য গবেষণার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এ লক্ষ্যে মানিকগঞ্জের সিংগাইর এবং নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলাকে পাইলট এরিয়া হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছে। পাইলট এরিয়াতে বসবাসরত প্রায় ২০,০০০ নারী হতে নমুনা সংগ্রহ করে পিসিআর পদ্ধতিতে পরীক্ষা করা হবে। বর্তমানে ভায়া নেগেটিভদের পুনরায় ৫ বছর পর স্ক্রীনিং করতে হয় কিন্তু এইচপিভি নেগেটিভদের ১০ বছরে জরায়ু মুখ ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা থাকবে না। 

এই গবেষণা প্রোগ্রামের উদ্বোধন ঘোষণার লক্ষ্যে সিংগাইর উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র প্রাঙ্গনে একটি উদ্বোধনী কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে। 

উল্লেখ্য, এই স্ক্রীনিং প্রক্রিয়ায় এইচপিভি পরীক্ষা সংযুক্ত করা সম্ভব হলে তা হবে জরায়ু-মুখ ক্যান্সার নির্মূলে একটি মাইলফলক। নারীরা আরও উন্নত সেবা পাবে, সহজ ও দ্রুততার সাথে রোগ নির্ণয় সম্ভব হবে। 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.