আবিষ্কারের ১২৫ বছর পর ডিজেল ইঞ্জিনের আয়ু শেষের পথে
অন্যান্য
১৮৯৩ সাল। মিউনিখের পলিটেকনিকামের ছাত্র রুডলফ ডিজেল কার্ল ফন লিন্ডার এক লেকচার থেকে জানতে পারলেন, আগে যে বাষ্পীয় ইঞ্জিনগুলো ছিল তার মাত্র ১০ ভাগ শক্তি বাস্তবে কাজে লাগানো যেত। যদিও কার্নো চক্র অনুযায়ী এর চেয়েও বেশি শক্তিকে কাজে লাগানো সম্ভব। ডিজেলও সেই পদ্ধতি খুঁজে বের করার চেষ্টায় নেমেছিলেন। ঐ বছরই তিনি এক আর্টিকেল প্রকাশ করলেন, নাম: 'থিওরি অ্যান্ড কন্সট্রাকশন অফ আ রেশনাল হিট মোটর'।
তত্ত্বের মধ্যে অনেক ভুল থেকে গিয়েছিল। তবে দুই বছরের মধ্যেই কম্প্রেশন ইগনিশনের ধারণা রপ্ত করে ফেললেন ডিজেল। ১৮৯৭-এর মধ্যে বের করে ফেললেন ব্যবহারিক টেস্ট ইঞ্জিন, যার কর্মক্ষমতা ২৬ শতাংশ। পরের বছর ডিজেল হয়ে গেলেন একজন মিলিয়নেয়ার।
যে ইঞ্জিনটি তিনি আবিষ্কার করেছিলেন, তা দিয়ে ছোট গাড়ি থেকে শুরু করে উড়োজাহাজ কিংবা জাহাজ, সবকিছুই চালানো সম্ভব। তবে ডিজেলের ইঞ্জিনের মূল ভোক্তা ছিল সাধারণ মানুষজন, যে কারণে যানবাহন এবং অন্যান্য বাণিজ্যিক উৎপাদনের কাজে ব্যবহৃত ছোট ইঞ্জিনগুলো ছড়িয়ে পড়তে থাকলো সর্বত্র। তবে ছোট ডিজেল ইঞ্জিনগুলোর কর্মদক্ষতা বড়গুলোর তুলনায় কম। যেখানে বড় ট্রাকের ইঞ্জিনগুলো ৪৫ শতাংশ শক্তি কাজে লাগাতে পারতো, সেখানে সাধারণ যাত্রীবাহী গাড়িগুলোর কর্মদক্ষতা ৩০ শতাংশেরও কম।
উত্তর আমেরিকায় গ্যাসোলিন সবসময়েই ডিজেলের চেয়ে সস্তা ছিল, মার্সিডিজ বেঞ্জ কিংবা ফোক্সওয়াগেনের চেষ্টা সত্ত্বেও গ্যাসোলিনের জায়গা ডিজেল ইঞ্জিন দখল করতে পারেনি। যদিও ডিজেল ইঞ্জিন আরও বেশি কর্মদক্ষ, তবে এটি বানাতেও খরচ হতো বেশি। ফলে উত্তর আমেরিকার মানুষজনদের সঞ্চয়ে ভাগ বসাতে খুব একটা সফল হয়নি ডিজেল ইঞ্জিন; কেবল একটি জিনিস ছাড়া: পিকআপ ট্রাক।
উত্তর আমেরিকার হালকা ট্রাকগুলোতে ডিজেল ইঞ্জিনের জনপ্রিয়তা পাওয়ার রহস্য কী? ১৯৮৯ ডজ র্যাম পিকআপ ট্রাকে ক্রাইসলারের ডিজেল ইঞ্জিন ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। হালকা মালবাহী ট্রাকগুলোর জন্য একেবারে নিখুঁত ছিল এই ডিজেল ইঞ্জিনগুলো। ফলে লোকজনের চাহিদার সাথে তাল মেলাতে ক্রাইসলারের তিন বছর সময় লেগে যায়। এক টনের ট্রাকগুলতে এর টোয়িং ক্ষমতা ছিল ঈর্ষণীয়।
তবে গত দশকজুড়ে জ্বালানির ওপর চাপ কমাতে ট্রাকগুলোতে আরও কর্মদক্ষতাসম্পন্ন ইঞ্জিন লাগানোর জন্য চাপ দেওয়া শুরু হয়েছে। জেনারেল মোটর, ফোর্ড এবং র্যাম; ৩টি কোম্পানিই আরও দক্ষ এবং ছোট আকারের ডিজেল ইঞ্জিন তৈরি শুরু করলেও তা সাফল্যের মুখ দেখেনি। কারণ? জ্বালানির দাম। বিশ্বজুড়ে চলা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতা ডিজেলের দামকে গ্যাসোলিনের তুলনায় অনেকখানি বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে ডিজেন ইঞ্জিনের কর্মদক্ষতা ভালো হওয়া সত্ত্বেও সে অনুযায়ী লাভ পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে গ্যাসোলিনের দিকেই ঝুঁকে পড়ছে সবাই। এছাড়াও পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য মার্কিন সরকার বেশ কিছু পরিবহন নীতি গ্রহণ করার ফলে সেগুলো ঠিক রেখে ইঞ্জিন তৈরি করতে গিয়ে ইঞ্জিনের দাম আরও বেড়ে গিয়েছে। এসব কারণে ডিজেল ইঞ্জিনের জনপ্রিয়তা একেবারে পড়তির দিকে।
সাধারণ যাত্রীবাহী গাড়ি থেকে শুরু করে ভারি মালবাহী গাড়ি, কোনো যানবাহনের জন্যই এখন আর ডিজেল ইঞ্জিন উপযোগী নয়। তাছাড়া ইলেকট্রিক ব্যাটারির প্রযুক্তিও ক্রমেই সহজলভ্য হয়ে উঠেছে, ফলে গ্যাসোলিনের বাজারেও কয়েক বছরের মধ্যে ধ্বস নামবে। আর কয়েক বছরের মধ্যে ডিজেল ইঞ্জিনকে কেবল বিলাসী ক্রুজ শিপগুলোতেই দেখা যেতে পারে।
Comments
While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.