জার্মানিতে পাকঘরের ১০০ দিন

অন্যান্য

24 September, 2022, 06:30 pm
Last modified: 24 September, 2022, 06:30 pm
কনটেমপরারি আর্টের অন্যতম প্রধান শিল্পমেলা ডকুমেন্টায় বাংলাদেশ থেকে অংশ নিয়েছে বৃত্ত আর্টস ট্রাস্ট। বৃত্তের এই প্রকল্পটি মূলত খাদ্য রাজনীতির কথা বলছে।

ছবি: বৃত্ত আর্টস ট্রাস্টের ফেসবুক পেজ থেকে নেওয়া

প্রতি পাঁচ বছরে একবার করে জার্মানির কাসেলে বসে ১০০ দিনের এক শিল্পমেলা। এবার হলো পঞ্চদশ আসর। শুরু হয়েছিল জুনের ১৮ তারিখ আর শেষ হচ্ছে সেপ্টেম্বরের ২৫। নতুন ধারার শিল্পপ্রয়াস (কনটেমপরারি আর্ট) নিয়ে বসে এ মেলা। বাংলাদেশ থেকে বৃত্ত আর্টস ট্রাস্ট এবারের আসরে অংশ নিয়েছে। মেলাটির নাম ডকুমেন্টা।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার ১০ বছর পর প্রথম ১৯৫৫ সালে ডকুমেন্টা আয়োজিত হয়। কাসেলের এক শিল্পী নাম আর্নল্ড বোদে উদ্যোগটা নিয়েছিলেন। তাঁর ইচ্ছাটা ছিল নাৎসি বাহিনী যেসব শিল্পকে ব্ল্যাকলিস্টেড করেছিল সেগুলো প্রদর্শন। তিনি ১৯২০ থেকে ১৯৩০ সালে তৈরি হওয়া শিল্পকর্মগুলো বেছে নিয়েছিলেন। চতুর্থ আসর পর্যন্ত বোদে ডকুমেন্টার সঙ্গে থাকতে পেরেছিলেন। তাঁর মৃত্যু হয়েছিল ১৯৭৭ সালে। এখন ডকুমেন্টা গোটা পৃথিবীতেই কনটেমপরারি আর্টের অন্যতম প্রধান শিল্পমেলা। একে ১০০ দিনের জাদুঘরও বলা হয়ে থাকে।

এবারের ডকুমেন্টা কিউরেট করছে জাকার্তার শিল্পীদের সংঘ রুয়াংরুপা। এর প্রতিষ্ঠা ২০০০ সালে। প্রদর্শনী, কর্মশালা আর উৎসব আয়োজনে চমকপ্রদ সব আইডিয়ার জন্য নাম আছে তাদের। ইস্তাম্বুল, ব্রিজবেন, সিঙ্গাপুর এবং সাও পাওলো শিল্পমেলা আয়োজনে তাঁরা অংশ নিয়েছে। ইন্দোনেশীয় শব্দ লামবাংকে তারা এবারের থিম বা বিষয়বস্তু করেছিল। এর সাধারণ অর্থ শস্যাগার।

ছবি: বৃত্ত আর্টস ট্রাস্টের ফেসবুক পেজ থেকে নেওয়া

 বৃত্ত প্রায় এক বছর ধরে গবেষণা চালিয়েছে। ঢাকার শিল্পসংঘ বৃত্ত আর্টস ট্রাস্ট খাদ্য, মহামারী ও যুদ্ধকে প্রাধান্য দিয়েছিল। তারা বাংলা চলচ্চিত্রে যুদ্ধ, খাদ্য ও মহামারির দৃশ্যাবলি খুঁজে বেড়িয়েছে। তারপর সেগুলোয় থাকা হাহাকার, পীড়ন, চিৎকার, লড়াই, দখল, শবযাত্রা, মোড়লিপনা, প্রার্থনা, লালসা, আর্তনাদ, সহায়তা, বিদ্রুপ, নতিস্বীকার, বিদ্রোহ মিলিয়ে 'ছায়াছবি ২০২২' নাম দিয়ে দৃশ্যের এক দেয়ালজোড়া মিছিল বা ম্যুরাল তৈরি করেছে। সঙ্গে অত্যধিক মূল্য বৃদ্ধি, নানাস্থানে জনসাধারণের দুর্দশা, বাজার উধাও, শৃগাল কর্তৃক জীবন্ত নরদেহ ভক্ষণ, ১০২ জনের মৃত্যু ইত্যাদি বিভিন্ন বাক্য জুড়ে দিয়েছে। ম্যুরালটি তৈরিতে বৃত্ত যুক্ত করেছিল সিনেমা ও রিকশা পেইন্টারদের। ৭টি চলচ্চিত্র থেকে তাঁরা মূল উপকরণ নিয়েছে।

এইসঙ্গে 'রসদ' নামের একটি স্থাপনাশিল্পও যুক্ত করেছে বৃত্ত, যাতে মেগা শপে থাকে যেমন তাক, সেই তাকে ডিম, দুধ, সবজি, আলু স্থান পেয়েছে। এসব কৃত্রিম খাবারগুলো তৈরি করা হয়েছে সিরামিক, প্লাস্টিক, তুলা ইত্যাদি দিয়ে।

বৃত্তের এই প্রকল্পটি মূলত খাদ্য রাজনীতির কথা বলছে। খাদ্যবীজ কুক্ষিগত করার মধ্য দিয়ে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো বস্তুত বিশ্বের খাদ্যভান্ডারকে কুক্ষিগত করছে। এর মধ্য দিয়ে কৃষক নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে উৎপাদিত ফসলের ওপর যেমন উৎপাদনের উপকরণের ওপরও।

ছবি: বৃত্ত আর্টস ট্রাস্টের ফেসবুক পেজ থেকে নেওয়া

ডকুমেন্টা হলের বাইরে বাঁশ দিয়ে বৃত্ত একটি 'পাকঘর—দ্য সোশ্যাল কিচেন'ও প্রতিষ্ঠা করেছে। মেলায় অংশগ্রহণকারী ও দর্শনার্থীরা জড়ো হচ্ছে রান্নাঘরটিতে। এর ডাইনিং টেবিলগুলো সাজানো স্মৃতি ও গল্প দিয়ে। এখানে এসে দর্শনার্থীরা নিজেদের স্মৃতির ঝাপিও উন্মুক্ত করতে পারছে। সবজির সঙ্গে বাঁশভাত খেতে খেতে বসছে কবিতা পাঠের আসর, সঙ্গীতের আসর। জমে উঠছে আড্ডা। পাকঘরের ধারের আঙিনায় চাষ হচ্ছে সবজি। সবমিলিয়ে আবহমান বাংলার একটি পাকঘর তৈরি হয়েছে জার্মানীতে কাসেলে। উল্লেখ্য ৩২ টি ভেন্যুতে ৬৭ অংশগ্রহণকারী (শিল্পী, উদ্যোক্তা, সংস্থা) নিয়ে চলেছে এ শিল্পমেলা।

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.