হেনরি: ১৯০০ সাল থেকে জীবিত বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘায়ু কুমির
আফ্রিকা মহাদেশের পরাক্রমশালী এক শিকারি– নীল নদের কুমির বা নাইল ক্রোকোডাইল। লম্বায় ১৩ থেকে ১৬.৫ ফুট, এবং ওজন হতে পারে ১,৬৫০ পাউন্ড পর্যন্ত। জলের এই রাজা তার বিশালাকৃতি, বিপুল শারীরিক শক্তি ও হিংস্রতার জন্য পরিচিত। জলের তলা থেকে শিকারের ওপর অতি-সঙ্গোপনে হামলা করতেও জুড়ি মেলা ভার এই জলজ দানবদের। কুমিরের এই প্রজাতিটির মূল নিবাস আফ্রিকার সাব-সাহারা অঞ্চলে। নামে নীল নদের কুমির হলেও, এই অঞ্চলের অন্যান্য মিঠাপানির নদী ও হ্রদে বাস করে তারা।
মাছ, পাখি থেকে শুরু করে অ্যান্টিলোপ ও বুনো মহিষের মতো বিশালাকার স্তন্যপায়ী– কোনো খাদ্যেই নেই তাদের অরুচি। শক্তিশালী চোয়াল আর হাড়ভাঙা দাঁতের যুগলবন্ধনে দুঃস্বপ্নের এক বিভীষিকা। মিঠাপানির কুমিরদের মধ্যে সবচেয়ে হিংস্র নীলনদের কুমির, (বৈজ্ঞানিক নাম- ক্রোকোডিলাস নিলোটিসাস)। পানিতে নেমে অনেকেই গেছে এই কুমিরের পেটে, এই হিংস্রতার জন্যেই স্থানীয় মানুষ প্রাণীটিকে সমীহ করে চলে।
বন্য প্রকৃতিতে ৭০ বছর পর্যন্ত বাঁচে নীল নদের কুমির। তবে বন্দিদশায় আরো অনেকদিন বাঁচার রেকর্ড আছে। বন্দিবস্থায় এমন দীর্ঘায়ুর এক উদাহরণ হলো- হেনরি, এযাবৎকালে যত দীর্ঘায়ুর কুমিরের সন্ধান মিলেছে, তাদের মধ্যে সবচেয়ে বর্ষীয়ান সে। দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রোকওয়ার্ল্ড কনজার্ভেশন সেন্টার নামের একটি কুমির সংরক্ষণশালায় থাকে হেনরি।
হেনরি– শতবর্ষী কুমির, যার ছানাপোনার সংখ্যা ১০ হাজারের বেশি
১৯০০ সালে হেনরির জন্ম, সে হিসাবে চলতি বছরের ১৬ ডিসেম্বরে তার বয়স ১২৪ বছর হবে। নীলনদের কুমিরের অদম্য প্রাণশক্তি ও জৈবিক গঠন জানার এক দারুণ সুযোগ পাওয়া যায় হেনরির মাধ্যমে।
১৯৮৫ সালে বতসোয়ানার অকোভাঙ্গো বদ্বীপে প্রথম আটক করা হয় এই কুমিরটিকে। ওই এলাকায় সে কায়েম করেছিল ত্রাসের রাজত্ব। জলের গভীরে টেনে নিয়ে ছিড়েকুড়ে খাচ্ছিল শিশু ও গবাদিপশু। সংরক্ষণশালায় আনার পর তার নাম দেওয়া হয় হেনরি, বন্দি অবস্থায় সে বেশ শান্ত-ই, যা দেখে বোঝার উপায় নেই বন্যজীবনে তার হিংস্রতা।
ক্রোকওয়ার্ল্ডে আনার পর থেকে কুমির প্রজননে ব্যবহার করা হয় হেনরিকে। বিভিন্ন স্ত্রী কুমিরের সাথে মিলিত হয়ে সে এপর্যন্ত ১০ হাজার কুমির ছানার বাবা হয়েছে। বয়স অনেক বাড়লেও– তাতে হারিয়ে যায়নি তার প্রজনন সক্ষমতা, এটি নীল নদের কুমিরদের জৈবিক গঠনের অসাধারণ একটি দিক তুলে ধরে। প্রজননের এই ক্ষমতা নীল নদের কুমিরদের অদম্যতা এবং তাদের শক্তিশালী জেনেটিক গঠনের কথাও বলে।
গবেষকরা বলছেন, দক্ষ পরিপাকতন্ত্র থাকা হেনরির শতবর্ষের বেশি সময় ধরে জীবিত থাকার অন্যতম কারণ। কুমিররা হলো এক্টোথার্মিক, যার অর্থ তারা শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য তাপের বাহ্যিক উৎসের উপর নির্ভর করে। এই বৈশিষ্ট্যটি তাদের শক্তি সংরক্ষণ করতে এবং খাদ্য ছাড়া দীর্ঘ সময়ের জন্য বেঁচে থাকতে সাহায্য করে।
বন্য অবস্থায় খাবারের অভাবে পড়লে কয়েক মাস পর্যন্ত না খেয়ে থাকতে পারে নীল নদের কুমির। এসময় শক্তির চাহিদা পূরণ করে তাঁদের শরীরে জমা চর্বির মজুদ। বন্দিবস্থায় খাবারের কোনো অভাব হয় না হেনরির, তবু শক্তি সঞ্চয়ের এই বৈশিষ্ট্যকে কাজে লাগাতে পারে সে। তার দীর্ঘজীবনের পেছনেও এটি ভূমিকা রেখেছে।