গাজার আল-শিফা হাসপাতালে বিদ্যুৎ সংকটে চার শিশুসহ ৪০ রোগীর মৃত্যু: জাতিসংঘ
বিদ্যুৎ সংকটে গত এক সপ্তাহে গাজার আল-শিফা হাসপাতালে চার অপরিপক্ক শিশুসহ ৪০ জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে এ খবর জানিয়েছে জাতিসংঘ।
গত শুক্রবার (১৭ নভেম্বর) গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, বিদ্যুৎ সংকটে চিকিৎসা সরঞ্জাম চালাতে না পারায় এর আগের ৪৮ ঘণ্টায় মারা গেছে ২৪ জন। জ্বালানি সংকটের কারণে হাসপাতালের জেনারেটরগুলো চালু রাখা যাচ্ছে না।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আশরাফ আল-কুদরা শুক্রবার বলেন, বিদ্যুৎ সংকটের কারণে গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা সরঞ্জামগুলো চালু রাখতে না পারায় হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ২৪ জন রোগী মারা গেছে।
এদিকে তৃতীয় দিনের মতো গত শুক্রবারেও হাসপাতালটিতে অভিযান চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। তাদের অভিযোগ- হাসপাতালের ভবনের নিচে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের গোপন সুড়ঙ্গ রয়েছে। সেখান থেকে হামলা পরিচালনা করছে সংগঠনটি।
তবে ইসরায়েলি বাহিনীর এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে আসছে হামাস ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা বিষয়ক সংস্থা ইউএনওসিএইচএ গাজার সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে জানিয়েছে, মধ্য গাজার নুসাইরাত এলাকায় কয়েকটি আবাসিক ভবনকে লক্ষ্য করে গভীর রাতে বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে ঘটনাস্থলেই অন্তত ২০ জন নিহত হয়েছে।
ভবন গুঁড়িয়ে গিয়ে ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়েছে প্রায় ১৪০ জন।
সংস্থাটি জানায়, জ্বালানি সংকটে জরুরি পরিষেবাগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় স্থানীয়রা নিজেদের কাছে থাকা ছোট-খাটো সরঞ্জামগুলোর সাহায্যে ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে হতাহতদের উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে।
হাসপাতালটির পরিচালক মুহাম্মাদ আবু সালমিয়া বলেন, যারা চিকিৎসা কেন্দ্রটির ভেতরে অবস্থান করছে তাদের প্রত্যেকের জন্য এটি 'বড় একটি জেলখানা' ও গণকবরে পরিণত হয়েছে।
ইউএনওসিএইচএ আরো জানিয়েছে, বাস্তুচ্যুত হয়ে জাতিসংঘের সহায়তা কেন্দ্রগুলোতে আশ্রয় নেওয়া অন্তত ৭১ জন গত ৭ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে ৫৭০ জনেরও বেশি।
জাতিসংঘের আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে গাদাগাদি করে থাকা ফিলিস্তিনিদের মধ্যে শ্বাসকষ্টজনিত অসুখ ও ডায়রিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে।
গাজায় জাতিসংঘের ১৫৪টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ৮ লাখ ৩০ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। সে হিসেবে সেখানে গড়ে ৭০০ মানুষের জন্য মাত্র একটি গোসলখানা ও ১৫০ মানুষের জন্য মাত্র একটি টয়লেট ব্যবস্থা রয়েছে।
আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর আর একটি কক্ষও খালি নেই। বাস্তুচ্যুত অনেকেই জায়গা না পেয়ে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর বাইরের সীমানা প্রাচীরের কাছে খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিয়েছে।
এদিকে, অধিকৃত পশ্চিম তীরেও ইসরায়েলি অভিযান থেমে নেই। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত ইসরায়েলি বাহিনীর পৃথক দুটি ঘটনায় সেখানে ৫ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
পশ্চিম তীরে গত ৭ অক্টোবরের পর থেকে এ পর্যন্ত ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানে ৫১ শিশুসহ ১৯১ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এছাড়াও পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি শরণার্থীদের হামলায় এক শিশুসহ ৮ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। একই সময়ে ফিলিস্তিনিদের হামলায় নিহত হয়েছে ৪ ইসরায়েলি।