জাবালিয়ায় ইসরায়েলি বোমাবর্ষণে অন্তত ২০০ নিহত, নিখোঁজ ১০০-এরও বেশি

২৪ ঘন্টার ব্যবধানে গাজার জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে দুইবার বোমা হামলা করেছে ইসরায়েল৷ এতে করে শিবিরটিতে হতাহতের সংখ্যা প্রায় এক হাজারে পৌঁছেছে।
গাজা সরকারের মিডিয়া অফিস কর্তৃক প্রকাশিত সাম্প্রতিক রিপোর্টে এমন তথ্য উঠে এসেছে। এরমধ্যে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত নিহত হয়েছে প্রায় ১৯৫ জন, আহত হয়েছে ৭৭৭ জন; আর নিখোঁজ রয়েছে প্রায় ১২০ জন।
শরণার্থী শিবিরে নির্বিচারে এমন হামলার ফলে তীব্র সমালোচনার মুখোমুখি হচ্ছে তেল আবিব। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গত মঙ্গলবার ও বুধবারে জাবালিয়ায় ইসরায়েলি হামলাকে 'ভয়াবহ' বলে অভিহিত করেছেন।
অন্যদিকে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার একে 'অসমানুপাতিক হামলা' হিসেবে অভিহিত করেছেন। একইসাথে এর ফলে 'যুদ্ধাপরাধ' হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
ইসরায়েলি সশস্ত্রবাহিনী তাৎক্ষণিকভাবে জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে হামলার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি৷ তবে দেশটির চৌকস সশস্ত্র বাহিনী স্থল অভিযানের পরিকল্পনা নিয়ে বর্তমানে গাজার অভ্যন্তরে আরও এগিয়ে যাচ্ছে। উপত্যকাটির একটি আবাসিক এলাকায় ইসরায়েলি ট্যাংক পৌঁছানোর পর ভারী সংঘর্ষের কথা জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
অন্যদিকে প্যালেস্টাইনিয়ান রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি-এর একজন মুখপাত্র আল জাজিরাকেকে জানান, বর্তমানে তাদের দল জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরটিতে কাজ করছেন এবং আহতদের হাসপাতালে পাঠানোর চেষ্টা করছেন।
'পরিস্থিতি একেবারেই ভয়ানক,' রামাল্লা থেকে কাতারভিত্তিক গণমাধ্যমটিকে বলেন নেবাল ফারসাখ। গাজা'র আটটি শরণার্থীশিবিরের মধ্যে সবচেয়ে বড় হচ্ছে জাবালিয়া।
অন্যদিকে জাবালিয়ার বাসিন্দা রাগেব আকাল শিবিরে বিমান হামলাকে 'ভূমিকম্পের' সঙ্গে তুলনা করেছেন। হামলায় পুরো ক্যাম্প কেঁপে ওঠে বলে জানান তিনি।
"আমি বেরিয়ে দেখলাম সব বিধ্বস্ত… ধ্বংসস্তূপের নিচে বাড়িগুলো পড়ে রয়েছে আর বেশ বড় সংখ্যায় শরীরের বিচ্ছিন্ন অঙ্গ, শহীদ ও আহতরা" বলেন তিনি।
১ দশমিক ৪ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ শিবিরটিতে জাতিসংঘের তথ্যমতে প্রায় এক লাখ ১৬ হাজার নিবন্ধিত শরণার্থী রয়েছেন। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে আগেও একাধিকবার এ শিবিরের ওপর আক্রমণ চালিয়ে কয়েকশ মানুষকে হত্যা করেছে ইসরায়েল।
গত ৭ অক্টোবরের ইসরায়েলে আচমকা হামলা করে হামাস৷ এতে প্রায় ১৪০০ মানুষ নিহত হয়। জিম্মি করা প্রায় ২০০ এরও বেশি ইসরায়েলি নাগরিককে।
পাল্টা প্রতিক্রিয়া হিসেবে গাজায় প্রচণ্ড বোমাবর্ষণ শুরু করে ইসরায়েল। এতে করে ৮,৩০০ এরও বেশি গাজাবাসী নিহত হয়েছে।
একইসাথে গাজায় ইসরায়েলি নিষেধাজ্ঞায় খাদ্য, পানি, বিদ্যুতের তীব্র সংকট দেখা গিয়েছে। ফলে এক মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে ২০ লাখেরও বেশি মানুষের বসবাসকৃত এই অঞ্চলটিতে।
এদিকে গাজায় প্রতি ১০ মিনিটে গড়ে একজন শিশু নিহত হচ্ছে। এমনটাই জানিয়েছে শিশুদের নিয়ে কাজ করা বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সেইভ দ্য চিলড্রেনের ফিলিস্তিনের শাখা।
জেরুজালেম থেকে সাক্ষাৎকার প্রদানকালে ঐ শাখার কর্মকর্তা জ্যাসন লি বলেন, "গত ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের হামলায় প্রায় ২০ হাজার বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছে। এদের মধ্যে গড়ে তিনজনের একজন শিশু।"