ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধে বেসামরিক নাগরিকদের মৃত্যুতে চীন 'গভীরভাবে উদ্বিগ্ন'

ইসরাইল-ফিলিস্তিন যুদ্ধে বিপুল সংখ্যক বেসামরিক নাগরিক মৃত্যুর ঘটনায় 'গভীরভাবে উদ্বিগ্ন' বলে জানিয়েছে চীন। একইসাথে সহিংসতা বন্ধে ও স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে দেশটি।
চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই গতকাল (সোমবার) ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলি কোহেনের সঙ্গে টেলিফোনে আলাপকালে এসব কথা বলেন। একইসাথে চলতি সপ্তাহে সংকটটি নিয়ে আলোচনা করতে যুক্তরাষ্ট্র সফর যাবেন তিনি।
ওয়াং বলেন, "প্রতিটি দেশেরই আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে। কিন্তু তাদের উচিত আন্তর্জাতিক মানবিক আইন মেনে চলা এবং বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।"
একইসাথে গত ৭ অক্টোবরের ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাসের আচমকা হামলার নিন্দা করেছে চীন। ঐ হামলায় প্রায় ১৪০০ ইসরায়েলি নিহত হয়েছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে গাজায় পাল্টা বিমান হামলা শুরু করে তেল আবিব।
ফলে দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে চলা ইসরায়েলি বোমাবর্ষণে প্রায় ৫ হাজার ফিলিস্তিনে নাগরিক নিহত হয়েছে। একইসাথে অঞ্চলটিতে খাবার, পানি ও জরুরি সকল পণ্যের প্রবেশাধিকারে নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেছে নেতানিয়াহু সরকার।
ওয়াং ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেন, "ক্রমাগত সংঘাত বৃদ্ধি এবং সংকটময় পরিস্থিতি নিয়ে চীন গভীরভাবে চিন্তিত। আর এতে বিপুল সংখ্যক বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যুর ঘটনায় আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।"
ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতে শান্তি স্থাপনে চীন ভূমিকা রাখতে চাইছে। তারই অংশ হিসেবে মধ্যপ্রাচ্যে দেশটির পক্ষ থেকে বিশেষ দূত ঝাই জুন সফর করছেন।
অন্যদিকে ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিয়াদ আল মালিকির সাথেও টেলিফোনে কথা বলেছেন ওয়াং। আলাপকালে গাজায় বেসামরিক নাগরিক নিহতের ঘটনায় তিনি সহানুভূতি প্রকাশ করেন। একইসাথে জরুরি ভিত্তিতে এই যুদ্ধ বন্ধ করা প্রয়োজন বলে অভিহিত করেন।
ফিলিস্তিনের ওয়াফা নিউজ এজেন্সির মতে, চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গাজার হাসপাতাল ও স্কুলে ইসরায়েলি হামলার নিন্দা প্রকাশ করেছেন। একইসাথে তেল আবিবের গণহত্যা ও বাস্তুচ্যুতি নীতি বন্ধ করার প্রয়োজনীয়তার উপরও জোর প্রদান করেন।
টেলিফোনে আলাপকালে ওয়াং সংকটটির অবসান এবং সংঘাতের স্থায়ী সমাধানের জন্য বৃহত্তর আন্তর্জাতিক সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন। একইসাথে ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাতের দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানে চীনের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
আর যুক্তরাষ্ট্র মনে করে যে, ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যকার যুদ্ধবিরতির জন্য এখনই উপযুক্ত সময় নয়। মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জন কিরবি গতকাল (সোমবার) সাংবাদিকদের কাছে এমন মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, "আমরা মনে করি না যে, এখন যুদ্ধবিরতির সময়। ইসরায়েলের নিজেদের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে। হামাসের নেতৃত্ব খুঁজে বের করার জন্য তাদের চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।"
চলমান পরিস্থিতিতে ইরানের পক্ষ থেকে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রকে ফের সতর্ক করা হয়েছে। তেহরানের পক্ষ থেকে বলা হয়, ইসরায়েল অবিলম্বে সামরিক হামলা বন্ধ না করলে মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি 'নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে'।
গত রবিবার তেহরানে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমিরআব্দুল্লাহিয়ান এক সংবাদ সম্মেলনে এমন মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, "আমি যুক্তরাষ্ট্র এবং তার সহযোগীকে (ইসরায়েল) সতর্ক করে দিচ্ছি যে, তারা গাজায় অবিলম্বে মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যা বন্ধ না করলে যে কোনো মুহূর্তে যেকোনো কিছু সম্ভব। আর এতে করে এই অঞ্চলের পরিস্থিতি 'নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে'।"
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র আবার অঞ্চলটিতে একটি বিমানবাহী রণতরী পাঠিয়েছে। আর লোহিত সাগরে একটি মার্কিন সামরিক যান ইয়েমেন থেকে ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠী হুথিদের নিক্ষেপকৃত ক্ষেপণাস্ত্রকে আটকে দিতে সক্ষম হয়েছে। এছাড়াও ইরাকে থাকা মার্কিন বাহিনীর একটি ঘাঁটিও ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠীর রকেট ও ড্রোন হামলার শিকার হয়েছে।
ইরান মনে করে, যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের মাধ্যমে ফিলিস্তিনে যুদ্ধ শুরু করেছে। গাজায় বেসামরিক নাগরিকদের ওপর বোমাবর্ষণ অব্যাহত রাখলে এর ফল খারাপ হবে বলেও দেশটির পক্ষ থেকে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।
আমিরআব্দুল্লাহিয়ান বলেন, "গাজায় আমরা যা দেখছি, সেটি ভুয়া ইসরায়েলি শাসকদের শুরু করা প্রক্সি যুদ্ধ, যারা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্ব করছে।" এ যুদ্ধ নিপীড়িত ফিলিস্তিনি জাতি ও বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
আমিরআব্দুল্লাহিয়ান আরও বলেন, "যুদ্ধের মধ্যে বাইডেনের ইসরায়েল সফর এবং হাসপাতাল, মসজিদ, গির্জা ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর বোমাবর্ষণে ইসরায়েলকে সহায়তা দেওয়ার ব্যাপারটা অত্যন্ত 'তিক্ত ও দুর্ভাগ্যজনক'।