ইসরায়েলকে স্থল অভিযান আরও বিলম্বিত করতে বলল যুক্তরাষ্ট্র

ইসরায়েলকে গাজায় স্থল অভিযান বিলম্বিত করার পরামর্শ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। হামাসের কাছে জিম্মি ইসরায়েলি ও অন্যান্য নাগরিকদের মুক্তির ব্যাপারে আলোচনা এবং অবরুদ্ধ গাজায় বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের কাছে মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর জন্য আরও পেতে যুক্তরাষ্ট্র এমন পরামর্শ দিয়েছে বলে জানান বেশ কয়েকজন মার্কিন কর্মকর্তা।
তবে, ইসরায়েলকে আরও সময় নেওয়ার পরামর্শ দিলেও ইরান-সমর্থিত হামাস গোষ্ঠী নির্মূলে এখনও গাজায় স্থল অভিযানের পক্ষেই রয়েছে বাইডেন প্রশাসন। মার্কিন কর্মকর্তাদের মতে, গাজায় ইসরায়েলি বাহিনী পূর্ণরূপে আগ্রাসন শুরু করলে ওই অঞ্চলের পরিস্থিতি আরও অস্থির হয়ে উঠবে। ফলে এর আগেই জিম্মিদের ব্যাপারে সুরাহা করতে চায় তারা।
এদিকে, শুক্রবার (২০ অক্টোবর) দুই মার্কিন জিম্মিকে মুক্তি দেয় হামাস। এরপরেই মূলত অন্যান্য জিম্মিদের মুক্তির ব্যাপারে হামাসের সঙ্গে আলোচনার জন্য ইসরায়েলকে সময় নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে মার্কিন প্রশাসন। কর্মকর্তারা বলছেন, আরও ২১২ জন আটক রয়েছে হামাসের কাছে।
হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন চলমান বিষয়গুলো নিয়ে রোববার (২২ অক্টোবর) বিকেলে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন। অন্যান্য মার্কিন মিত্ররা যেমন- কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি এবং ব্রিটেনের নেতাদের সঙ্গেও আলাপ করেছেন তিনি।
দুই মার্কিন কর্মকর্তা দ্য নিউইয়র্ক টাইমসকে জানান, স্থল অভিযান আপাতত বন্ধ রাখার এ পরামর্শ মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব লয়েড জে. অস্টিনের মাধ্যমে ইসরায়েলিদের জানানো হচ্ছে; কারণ চলমান হামাস-ইসরায়েল সংঘাতে স্থল অভিযানসহ সামরিক পদক্ষেপের বিষয়ে ইসরায়েলকে পরামর্শ দিচ্ছে পেন্টাগন।
মার্কিন এক কর্মকর্তার মতে, ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের সঙ্গে প্রায় প্রতিদিনই টেলিফোনে কথা হচ্ছে মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব লয়েড অস্টিনের। বিভিন্ন সামরিক কার্যক্রম পরিচালনা, ইসরায়েলে মার্কিন অস্ত্রের চালান এবং ওই অঞ্চলে মার্কিন সেনা মোতায়েন নিয়ে আলোচনা করছেন তারা। একইসঙ্গে, মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব জিম্মিদের পুনরুদ্ধারকে অগ্রাধিকারে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন ওই কর্মকর্তা।
যদিও ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী গ্যালান্টের একজন মুখপাত্র এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান।
এদিক, ওয়াশিংটনে ইসরায়েলি দূতাবাসের এক কূটনীতিক গাজায় স্থল অভিযানের বিষয়ে মার্কিন পরামর্শের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, "মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে আমাদের ঘনিষ্ঠ সংলাপ এবং পরামর্শ হয়েছে। স্থল অভিযানের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে কোনো ধরনের চাপ দিচ্ছে না।"
জিম্মিদের মুক্তি আলোচনার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, হামাস ইতোমধ্যেই সতর্ক করেছে– গাজায় স্থল আক্রমণ চালালে জিম্মিদের মুক্তির সম্ভাবনা আরও কবে আসবে। হামাসের রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে কাতারের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে; ফলে কাতারের মধ্যস্থতায় জিম্মিদের ছড়িয়ে নেওয়ার প্রচেষ্টা চলছে।
অন্যদিকে, জিম্মি মুক্তির বিষয়ে আলোচনার জন্য সময় পেতে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে গাজায় স্থল অভিযানে দেরি করার পরামর্শ দিয়েছে কিনা– এমন প্রশ্নের সরাসরি জবাব দেওয়া থেকে বিরত থেকেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি জে. ব্লিঙ্কেন। রোববার (২২ অক্টোবর) সিবিএস নিউজের "ফেস দ্য নেশন"- অনুষ্ঠানে এ প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছিলেন তিনি; তবে সরাসরি উত্তর না দিয়ে ব্লিঙ্কেন জোর দিয়ে বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অভিযানের বিষয়ে ইসরায়েলিদের পরামর্শ দিচ্ছে।
"অনেক ইসরায়েলি এবং তাদের সঙ্গে কিছু অন্য নাগরিকও আছেন, যারা এখনও জিম্মি। তাই আমরা যা কিছু করতে পারি, তা করার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। ইসরাইলও তাই করছে। কিন্তু আমরা ইসরায়েলকে তাদের সামরিক অভিযান নিয়ে যে বিষয়ে পরামর্শ দিচ্ছি তা হলো– তারা কীভাবে অভিযান পরিচালনা করবে এবং এর মাধ্যমে কীভাবে তারা সবচেয়ে ভালো ফলগুলো বয়ে আনতে পারবে, সে বিষয়গুলোতেই আলোকপাত করা হচ্ছে," বলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
গাজায় বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের জন্য আরও বেশি পরিমাণে খাদ্য ও চিকিৎসা সামগ্রী সরবরাহ করা গুরুত্বপূর্ণ বলেও উল্লেখ করেন ব্লিঙ্কেন; কারণ সেখানে মানবিক সংকট পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে।
গত ৭ অক্টোবরে ইসরায়েলে হামাসের অতর্কিত হামলার পরপরই ২ মিলিয়ন মানুষের আবাসস্থল গাজা উপত্যকায় পানি, বিদ্যুৎ এবং খাবার সরবরাহ সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয় ইসরায়েল সরকার। ২০০৭ সাল থেকে ইসরায়েল কর্তৃক অবরুদ্ধ বিশ্বের অন্যতম দরিদ্রপীড়িত এই উপত্যকায় মানবিক সংকট এখন চরমে।
হামাসের ৭ অক্টোবরের হামলার পর থেকে গাজায় লাগাতার বোমাবর্ষণ করে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলতে থাকা এ সংঘাতে ইসরায়েলি হামলায় গাজায় এখন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪,৬৫১ জনে; আহত হয়েছেন অন্তত ১৪,২৪৫ জন। অন্যদিকে, ইসরায়েলে হামাসের হামলায় কমপক্ষে ১,৪০০ নিহত হয়েছেন।