হাসপাতাল লক্ষ্য করে হামলা চালানো কি যুদ্ধাপরাধ? আন্তর্জাতিক মানবিক আইন কী বলে
গতকাল মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) গাজা সিটিতে অবস্থিত আল আহলি ব্যাপটিস্ট হাসপাতালে ইসরায়েলি বিমান হামলার ঘটনায় অন্তত ৫০০ জন নিহত হয়, আহত হয় অনেকে। জেনেভা কনভেনশন অনুসারে, যুদ্ধের সময় অসুস্থ এবং আহতদের পাশাপাশি চিকিৎসা কর্মী, হাসপাতাল এবং অস্থায়ী চিকিৎসা সুবিধাগুলো সুরক্ষিত রাখতে হয়। কোনো অবস্থাতেই তাদেরকে আক্রমণ করা যাবে না; এবং তাদেরকে হামলার লক্ষ্যবস্তু করা হলে তা 'যুদ্ধাপরাধ' হিসেবে বিবেচিত হবে।
এছাড়া, হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি আহত সামরিক কর্মী বা যোদ্ধাদেরকেও সুরক্ষিত রাখতে হবে। সেইসাথে, তাদের সেবায় নিয়োজিত সশস্ত্র চিকিৎসা কর্মীরাও থাকবেন সুরক্ষিত। নিজেদের ও রোগীদের জীবন রক্ষার্থে সশস্ত্র থাকবেন তারা।
জেনেভা কনভেনশন নং ৪ এর অনুচ্ছেদ ১৮-তে বলা আছে:
"আহত, অসুস্থ এবং প্রসূতিদের যত্ন নেওয়ার জন্য পরিচালিত বেসামরিক হাসপাতালগুলোকে কোনো অবস্থাতেই আক্রমণ করা যাবে না। সংঘাতে লিপ্ত সব পক্ষকেই এসব হাসপাতাল সুরক্ষিত রাখতে হবে।"
অনুচ্ছেদ ১৯ এ বলা আছে:
"বেসামরিক হাসপাতালগুলোর যে সুরক্ষা প্রাপ্ত সে সুরক্ষায় কোনো ব্যত্যয় ঘটবে না, যদি না হাসপাতালগুলোকে শত্রুপক্ষের ক্ষতি করার জন্য ব্যবহার করা হয়। যদি হাসপাতালগুলোর সুরক্ষা সুবিধা তুলে ফেলা হয়, তাহলে সেক্ষেত্রেও হাসপাতালগুলোকে যথাযথ সতর্কতা ও সময়সীমা বেঁধে দিতে হবে। যদি বেঁধে দেওয়া সময় ও সতর্কতা না মানা হয়, তাহলে হাসপাতালের ওপর থেকে সুরক্ষা সুবিধা তুলে ফেলা হবে।"
"সশস্ত্র বাহিনীর অসুস্থ বা আহত সদস্যদের এসব হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এই আহত যোদ্ধাদের কাছ থেকে নেওয়া অস্ত্র ও গোলাবারুদ যথাযথ স্থানে হস্তান্তর না করা হলেও, তা শত্রুপক্ষের জন্য ক্ষতিকারক বলে বিবেচিত হবে না।"
গতকাল আল আহলি ব্যাপটিস্ট হাসপাতালে বিমান হামলার দায় অস্বীকার করেছে ইসরায়েল।
ইসরায়েল বলছে, হাসপাতালের হামলাটি ইসরায়েলের দ্বারা নয়, বরং ফিলিস্তিনি ইসলামিক জিহাদ গোষ্ঠীর দ্বারা ভুল লক্ষ্যবস্তুতে রকেট ছোঁড়ার কারণে ঘটেছে। উভয়পক্ষই হামলার ঘটনায় দোষ অস্বীকার করছে।
এ ঘটনায়, ইসরায়েল সফরের আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাইডেনের ওপর চাপ বাড়লো। ইসরায়েলের স্বপক্ষে তিনি যে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছেন– এবং ইসরায়েলি যুদ্ধাপরাধের কোনো নিন্দাও করছেন না, সেকারণেই এই চাপ আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিশেষত, মধ্যপ্রাচ্যের আরব দেশগুলোতে তার প্রশাসনের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা একারণে হোঁচট খেতে পারে। ইতোমধ্যেই তার সঙ্গে অনুষ্ঠিতব্য বৈঠক বাতিল করেছেন আরব নেতারা।
বুধবার ইসরায়েল সফর শেষে মার্কিন প্রেসিডেন্টের জর্ডানে যাওয়ার কথা ছিল। সেখানে জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ, মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি ও ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে বৈঠকের কথা ছিল তার। তবে গাজার আল–আহলি আরব নামের একটি হাসপাতালে হামলার ঘটনার জেরে এই বৈঠক বাতিল করে জর্ডান।