অ্যাম্বুলেন্স লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল, জানালেন গাজার জরুরি চিকিৎসাকর্মীরা

শনিবার ভোরে ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী সংগঠন হামাস ইসরায়েলে আক্রমণ করে। এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় বোমাবর্ষণ শুরু করে ইসরায়েল। গাজার সবচেয়ে বড় হাসপাতাল আল-শিফায় আসতে থাকে একের পর এক জরুরি ফোনকল। সন্ধ্যাবেলার এমনই একটি কলে সাড়া দিয়েছিলেন এ হাসপাতালের প্যারামেডিক (জরুরি চিকিৎসাকর্মী) তালাল তাহা ও তার সহকর্মীরা।
গাজায় তখন বিদ্যুৎ বন্ধ, চারপাশে নিশ্ছিদ্র অন্ধকার। আক্রান্ত মানুষের হাহাকারে ভারী চারদিক। এরমধ্যেই তিনটি অ্যাম্বুলেন্সে করে গাজা সিটির পুবদিকের গোরস্তান সংলগ্ন একটি গন্তব্যের দিকে তারা যাচ্ছিলেন।
তাহা বলেন, 'হঠাৎ করেই আকাশ থেকে আমাদের ওপর হামলা করা হয়, গাড়ি থেকে নেমে দৌড়াই আমরা। কিছুক্ষণ পর বিপদ কেটে গেছে মনে করে, সালাদ আল-দ্বীন সড়কে আবারো নিজেদের গাড়িতে উঠি।' কিন্তু, গাড়িগুলো কিছুদুর এগোতেই আরেকটি বিমান হামলার শিকার হয়।
এবারের ফলাফল ছিল ভয়াবহ। তাহার তিন সহকর্মী নিহত হন, ভাগ্যক্রমে সামান্য আহত হলেও প্রাণে বেঁচে যান তাহা।
তিনি বলেন, 'আমাদের মিশন হলো মানবিক, আমরা একটি মানবিক সেবাদাতা। তবুও কোন কারণ ছাড়াই, কোন যুক্তি ছাড়াই আমাদের ওপর হামলা করা হয়।'

এটা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বরং ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের চর্চা। গাজা উপত্যকার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ ও সেখানকার চিকিৎসা সেবামূলক সংগঠনগুলো অনেকদিন ধরেই বলে আসছে যে, আন্তর্জাতিক আইনে স্বাস্থ্যকর্মী, অ্যাম্বুলেন্স, হাসপাতালে হামলা যুদ্ধাপরাধ হলেও, ইসরায়েল তার তোয়াক্কা করে না। দখলদার ইসরায়েল জেনেবুঝেই স্বাস্থ্য অবকাঠামোকে লক্ষ্যবস্তু করছে।
মেডিকেল টিমগুলোকে ইচ্ছেকৃতভাবে লক্ষ্যবস্তু করার নিন্দা জানিয়ে গতকাল বুধবার এক বিবৃতি দেয় ফিলিস্তিনের রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি (পিআরসিএস)।
এতে বলা হয়, 'আমাদের পক্ষ থেকে আগে থেকে জানানোর পরেও (ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষকে) আজকে মাত্র আধঘণ্টার মধ্যে চারজন প্যারামেডিককে হত্যা করা হয়েছে।'
'চিকিৎসা কর্মীদের হামলার লক্ষ্যবস্তু করা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের চরম লঙ্ঘন এবং মানবতা-বিরুদ্ধে জঘন্য অপরাধ। পিআরসিএস এই যুদ্ধাপরাধের জবাবদিহির দাবি জানাচ্ছে। অবিলম্বে তদন্ত শুরুর মাধ্যমে নিহতদের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার দাবি করছে'- বিবৃতিতে বলা হয়।
হামাস সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, শনিবারের সংঘাত শুরুর পর থেকে নারী ও শিশুসহ এপর্যন্ত অন্তত ১,২০০ গাজাবাসী নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে ৫ হাজার ৬০০ জনের বেশি।
এসময়ে ১৫টি অ্যাম্বুলেন্স ও নয়টি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে হামলা করেছে ইসরায়েল। হামলার শিকার হয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ভবন। হামলায় স্বাস্থ্য ভবনের কম্পাউন্ডে অবস্থিত গাজার একমাত্র কোভিড-১৯ পরীক্ষাকেন্দ্র আল-রিমাল ক্লিনিক এবং ইন্টারন্যাশনাল আই সেন্টার ধবংস হয়ে গেছে।
চিকিৎসকদের আন্তর্জাতিক সংগঠন– ডক্টরস উইদাউট বর্ডার্স জানায়, শনিবারের পর থেকে অন্তত ১৬ জন চিকিৎসা কর্মী নিহত, ১৮টি অ্যাম্বুলেন্স ধবংস ও আটটি চিকিৎসা স্থাপনা সম্পূর্ণ অথবা আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
গাজায় সংঠনটির সমন্বয়ক শোহাইব সাফি বলেন, ধবংসের মাত্রা থেকে এটা 'অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ হয়' ইসরায়েলি বাহিনী ইচ্ছেকৃতভাবে এখানকার চিকিৎসা সেবার ওপর আক্রমণ চালাচ্ছে।
সাফি আল-জাজিরাকে বলেন, 'আক্রান্ত এলাকায় যখন অ্যাম্বুলেন্সগুলো যাওয়ার চেষ্টা করে, তখন তাদের ওপর হামলা করে ইসরায়েল একটি বার্তা দিচ্ছে। আর সেটা হলো- ধবংসস্তূপে আটকে পড়াদের বা আহতদের কেউ যেন উদ্ধার করতে না আসে। যারফলে, ইসরায়েলিদের নজর এড়িয়ে আহতদের হাসপাতালে আনতে এখন ট্যাক্সি ও প্রাইভেট কার ব্যবহারের সংখ্যা বাড়ছে।'