ইসরায়েলের যুদ্ধ ঘোষণার অর্থ কি? সম্মুখ যুদ্ধ কি আসন্ন?

হামাসের আকস্মিক হামলার প্রেক্ষিতে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু রবিবার (৮ অক্টোবর) যুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেন, আমরা কোনো 'অভিযানে' নয়, আমরা যুদ্ধে জড়িয়েছি। শত্রুদের নজিরবিহীন পরিণতি ভোগ করতে হবে।
শনিবার হামাসের অতর্কিত হামলায় অনেক সেনা সদস্যসহ ৭০০ জনের বেশি ইসরায়েলির মৃত্যু হয়েছে। অনেককে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে গেছে হামাস। ইসরায়েলও কিছুক্ষণ পর থেকে গাজায় বিমান হামলা চালাতে থাকে। এতে ৪০০ ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে।
গাজায় স্থলভাগ দিয়ে আক্রমণের জন্য নেতানিয়াহু এক লাখের বেশি সেনা প্রস্তুত করার আদেশ দিয়েছেন।
যুদ্ধ ঘোষণার অর্থ কী?
এর আগেও গাজা এবং লেবাননে সামরিক হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। তবে সেগুলো ছিল যুদ্ধের আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা ছাড়া।
পশ্চিম জেরুজালেমের আল জাজিরা প্রতিনিধি মোহাম্মদ জামজুম বলেন, নেতানিয়াহুর যুদ্ধ ঘোষণায় ইসরায়েলি মন্ত্রীসভার অনুমোদনের অর্থ হলো এখন যুদ্ধের প্রতিটি পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেতানিয়াহু এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় নিজেরাই নিতে পারবে। প্রতিটি ধাপে মন্ত্রীসভার অনুমোদনের অপেক্ষা করতে হবে না।
তিনি বলেন, ঘোষণার মাধ্যমে যুদ্ধের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি এসেছে।
এদিকে অধিকৃত ফিলিস্তিনের জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক ফ্রান্সেসকো আরবানিজ যুদ্ধের ভবিষ্যত পরিণতি নিয়ে ভয়াবহ আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন।
সম্মুখ যুদ্ধের আশঙ্কা আছে?
যুদ্ধ ঘোষণায় নেতানিয়াহু বলেছেন, আমরা তাদের বিরুদ্ধে এত বেশি শক্তি আর সামর্থ্য নিয়ে যুদ্ধ করব, যার ধারণা শত্রুদের নেই।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, স্থলভাগ দিয়ে ইসরায়েল আক্রমণ অর্থাৎ সম্মুখ যুদ্ধ আসন্ন।
সোমবার ইসরায়েল গাজায় সর্বাত্মক অবরোধের ঘোষণা দিয়েছে। খাবার, জ্বালানি কিছুই ঢুকতে দেওয়া হবে না বলেও ঘোষণা দিয়েছে। এতে গত দুই দিন ধরে দুর্ভোগে পড়া ফিলিস্তিনিরা আরো বেশি ভোগান্তির মুখে পড়বেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
তীব্র রকেট হামলার কারণে গাজার প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
আল জাজিরার জ্যেষ্ঠ রাজনীতিক বিশ্লেষক মারওয়ান বিশারা বলেন, ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যাকার পরিস্থিতি আসন্ন দিনগুলোতে আরো বেশি খারাপ হবে। সম্মুখ যুদ্ধের আশঙ্কার কথাও বলেন তিনি।
হামাস নেতা সালেহ আল-আরওরি বলেন, আমরা সবচেয়ে বাজে পরিস্থিতির জন্যও প্রস্তুত। চূড়ান্ত বিজয়, স্বাধীনতা অর্জন পর্যন্ত আমরা লড়ে যাব।
তিনি আল জাজিরাকে বলেন, এটা কোনো অভিযান নয়, আমরা সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু করেছি। আমি লড়াই চলবে বলেই মনে করি। আমাদের একটিই প্রধান লক্ষ্য; আমাদের স্বাধীনতা এবং আমাদের পবিত্র স্থানের স্বাধীনতা।
হামাস কখনো ইসরায়েল কে স্বীকৃতি দেয়নি এবং তারা গাজায় ১৬ বছর ধরে চলা অবরোধ প্রত্যাহারের আহ্বান করছে। ১৯৬৭ সালের সীমান্ত অনুযায়ী তারা ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের দাবি জানিয়েছে। সেই বছর যুদ্ধে ইসরায়েল ফিলিস্তিনের অনেক ভূমি দখল করে।
সব যুদ্ধ কি ঘোষণা দিয়ে হয়?
না, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর অনেক যুদ্ধই ঘোষণা দিয়ে হয়নি। গাজা বা পার্শ্ববর্তী লেবাননের পূর্ববর্তী হামলাগুলোও যুদ্ধের ঘোষণার মাধ্যমে আসেনি।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও এখন পর্যন্ত ইউক্রেনে যুদ্ধের ঘোষণা দেয়নি। এটাকে এখন পর্যন্ত 'বিশেষ সামরিক অভিযান' বলে আসছে ক্রেমলিন।
যুক্তরাষ্ট্রও ভিয়েতনাম যুদ্ধের ক্ষেত্রে কোনো ঘোষণা দেয়নি। চলমান গৃহযুদ্ধের মধ্যে একপক্ষকে 'সাহায্য' করার কথা নামে আক্রমণ চালায়। যুক্তরাজ্যও আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে ফকল্যান্ড যুদ্ধ ঘোষণা দিয়ে শুরু করেনি।