এলএনজির বৈশ্বিক চাহিদা তুঙ্গে, উৎপাদন বাড়াতে বিপুল বিনিয়োগ হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে
বিশ্ববাজারে এলএনজির মূল্য এখন চড়া। মধ্যপ্রাচ্যের স্থানীয় বাজারেও আগামী কয়েক বছর বাড়বে এর চাহিদা। একারণে জ্বালানি তেল উত্তোলনে বিশ্বের শীর্ষতম অঞ্চল মধ্যপ্রাচ্যে প্রাকৃতিক গ্যাসের উৎপাদন বৃদ্ধিতে বিপুল বিনিয়োগ করা হচ্ছে।
তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) রপ্তানিতে মধ্যপ্রাচ্যে নেতৃত্ব দেয় কাতার। সে তুলনায়, এই অঞ্চলের জ্বালানি সম্পদ সমৃদ্ধ অন্য দেশগুলি গ্যাস প্রকল্পের উন্নয়নে পিছিয়ে পড়েছিল।
এবার সে দৃশ্যপট বদলাচ্ছে।
ওপেক জোটের প্রভাবশালী দুই সদস্য– সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত গ্যাস উৎপাদন বৃদ্ধির বড় কিছু প্রকল্প হাতে নিয়েছে।
ওপেকের নয়- তবে ওপেক প্লাস জোটের সদস্য– ওমান নতুন গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধান ও পুরোনোগুলিতে উৎপাদন বৃদ্ধির চেষ্টা করছে।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে আগ্রাসন চালায় রাশিয়া। যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে গ্যাসের বিশ্ববাজার। রাশিয়ার ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে ইউরোপে বেড়েছে মধ্যপ্রাচ্য থেকে জ্বালানি তেল ও এলএনজি আমদানির চাহিদা।
এরই সুবাদে, মধ্যপ্রাচ্যের জ্বালানি উৎপাদক দেশগুলি এলএনজি রপ্তানি বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে। উৎপাদন বাড়াতে বিনিয়োগের তোড়জোড় সেকারণেই।
এলএনএজি চাহিদা ফিরে এসেছে
ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর– ইউরোপের সাথে রাশিয়ার সম্পর্কে ঘটেছে চরম অবনতি। এই অবস্থায়, রাশিয়া থেকে পাইপলাইনে গ্যাস আমদানির বিকল্প উৎস খুঁজছে ইইউ। ফলে ব্লকটির সদস্য দেশে আগামী কয়েক বছর ধরে এলএনজি আমদানির অব্যাহত চাহিদা থাকবে বলেই ধারণা করছেন বাজার বিশেষজ্ঞরা।
নন-রাশিয়ান গ্যাস সরবরাহ পাওয়ার জন্য এলএনজি ক্রেতা দেশগুলি দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে ফিরছে। এর মাধ্যমে তারা এলএনজি স্পট বাজারের অস্থিতিশীল মূল্য থেকে নিষ্কৃতি পেতে চায়।
এনিয়ে গত মে'তে উড ম্যাকেঞ্জি-র প্রধান বিশ্লেষক ড্যানিয়েল টোলম্যান বলেন, 'এলএনজির প্রচলিত ইউরোপীয় ক্রেতারা এখন স্পট বাজার থেকে কিনবে না। আবার রাশিয়ান এলএনজি বিক্রতাদের সাথেও বর্তমান চুক্তিকে নবায়ন করবে না। ফলে তারা (মধ্যপ্রাচ্য ও অন্য উৎস থেকে) দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির দিকেই ঝুঁকবে।
মধ্যপ্রাচ্যের প্রধান উৎপাদক দেশগুলি তেল ও গ্যাস বিক্রির দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিকে পছন্দ করে; বাজার চাঙ্গা থাকলে চলতি দশকের শেষ নাগাদ তারা বৈশ্বিক এলএনজি রপ্তানিতে আরও বৃহত্তর অবদান রাখবে।
এলএনজির আন্তর্জাতিক বাজারের চাহিদা পূরণে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সম্প্রসারণ প্রকল্প নিয়েছে কাতার। পারস্য উপসাগরীয় অন্য দেশগুলিও গ্যাস উৎপাদন ও রপ্তানির জন্য এলএনজি অবকাঠামো নির্মাণে বিপুল পুঁজি নিয়োগ করছে। তারা শুধু রপ্তানি বাজারকেই লক্ষ্য করেছে তাই-ই নয়; নিজেদের অভ্যন্তরীণ বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতেও তেল পোড়ানো কমাতে চায়। বিদ্যুৎ উৎপাদনে সে জায়গায় গ্যাসের পরিমাণ বাড়লে– সাশ্রয় হওয়া ক্রুড তারা রপ্তানি করতে পারবে।
কাতারের মেগা এলএনজি সম্প্রসারণ প্রকল্প:
গত বছর বিশ্বের সবচেয়ে বড় এলএনজি প্রকল্প নর্থ ফিল্ড ইস্ট প্রজেক্ট (এনএফই)-র ঘোষণা দেয় কাতার। এতে কাতারের বার্ষিক এলএনজি উৎপাদন সক্ষমতা ৭৭ মিলিয়ন টন থেকে ১১০ মিলিয়ন টনে উন্নীত হবে।
২০২৫ সালের চতুর্থ প্রান্তিক থেকে এই প্রকল্পের আওতায় উৎপাদন শুরুর লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ২৮.৭৫ বিলিয়ন ডলার।
বিশ্বের বৃহত্তম প্রাকৃতিক গ্যাসক্ষেত্র নর্থফিল্ড- এ আরেকটি সম্প্রসারণ প্রকল্প নিয়েছে কাতার। দ্বিতীয় ধাপের এই সম্প্রসারণে ১১০ মিলিয়ন টন থেকে বার্ষিক উৎপাদন পৌঁছাবে ১২৬ মিলিয়ন টনে। বাস্তবায়ন শেষ হবে ২০২৭ সালে।
কাতারের রাষ্ট্রায়ত্ত জ্বালানি কোম্পানি– কাতারএনার্জি সম্প্রতি এক্সনমোবিল, কোনাকোফিলিপিস, শেল, এনি এবং টোটাল এনার্জির মতো বৃহৎ আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলোকে নর্থফিল্ড সম্প্রসারণ প্রকল্পের অংশীদার হিসেবে নির্বাচন করেছে।
- সূত্র: অয়েলপ্রাইস ডটকম