‘অযাচিত মন্তব্য নয়, সংকটের সময় ঐক্য জরুরি’

ইদানিং এ ব্যাপারটার মাত্রা বোধহয় খানিকটা বেড়েছে, তথ্য সরবরাহের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তা ব্যক্তিরা ব্যাক্তিরা মাঝে মাঝেই এমন সব তথ্য দিচ্ছেন যা আমাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক হাসির উদ্রেক করছে। একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি সম্প্রতি বলেছেন, দেশের মানুষ এখন চাইলে তিন বেলা মাংস খেতে পারে। তার এই কথার প্রতিক্রিয়া কী হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যারা ব্যবহার করেন তারা জানেন।
এরকমের আলটপকা বক্তব্য প্রায়ই আসছে, এবং মানুষ বিনোদিত হচ্ছে। আমার কথা হলো ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতিতে গোটা বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশও যখন এক কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি, বিশ্ব যখন একটি নতুন অর্থনৈতিক সংকট বাস্তবতার দিকে ধাবিত হচ্ছে, সেরকম সময়ে ক্ষমতাসীনদের তরফ থেকে এ ধরনের অসংলগ্ন বক্তব্য মানুষের মধ্যে তীব্র নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে।
বিশ্বে যখন একটি অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে প্রবেশ করতে যাচ্ছে এ ধরনের বক্তব্যে সামাজিক বিভাজন তৈরির ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। ক্ষমতাসীন কিছু ব্যক্তি কারণে অকারণে এসব কথাবার্তা বলছেন।
সর্বশেষ চট্টগ্রামের চরম দুঃখজনক ঘটনার কথায় আসি। এমনি একটি ঘটনায় সমস্ত জাতি যখন উৎকন্ঠিত তেমনি সময়ে যদি উচ্চারিত হয়, কোনো রকম তথ্য ছাড়াই যে ঘটনাটি একটা ষড়যন্ত্র। তাহলে সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে কি প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে?
ষড়যন্ত্র কিনা তা কোনরকম তথ্য ছাড়া বলে দেওয়ার অর্থ হচ্ছে এক ধরনের বিভাজন তৈরির উদ্দেশ্যে বলা। ঘটনাটির দুর্ঘটনা, অবহেলা, ষড়যন্ত্র- তিনটি আলাদা আলাদা বিষয়। যার মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক হচ্ছে এ ষড়যন্ত্র ত্বত্ত্ব । ষড়যন্ত্রের বিষয়ে কোনো তথ্য ছাড়া ঘটনাটিকে ষড়যন্ত্র বলা কতটা যৌক্তিক প্রশ্ন রাখছি।
দেশের প্রায় সকল পণ্যের মূল্য বাড়ছে, সরকারের হাতে কোনো বিকল্প না থাকায় গ্যাসেরও দামও বাড়ানো হয়েছে, এরকম সময়ে জাতীয় ঐক্য রক্ষা করা বা সৃষ্টি করার দায়ভার ক্ষমতাসীনদের উপরেই আগে বর্তায়। এ সময়ে ভাঁড়ের মত উক্তি করে বন্ধ করতে হবে।
এদিকে টাকা মুদ্রা মান দ্রুত হারানোর ফলে আমদানিকৃত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে সেই বিষয়গুলো নিয়ে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করা দরকার, যে এই মূল্যবৃদ্ধির পিছনে আমাদের কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। এটা পরিস্থিতির কারণে এড়ানো যাচ্ছে না।
পৃথিবীর সকল বাস্তবতার অংশ এই মূল্যবৃদ্ধি। সবচেয়ে সক্ষম দেশগুলোও তাদের মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পৃথিবীর প্রায় সব সক্ষম রাষ্ট্রসমূহে ব্যাপকহারে মুদ্রাস্ফীতি ঘটছে। কাজেই মূল্যস্ফীতির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের দায়বদ্ধতা আছে, এরকম সমযয়ে মানুষকে যেন আরো বেশি বিভ্রান্ত না করা হয়।
রাষ্ট্র ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা বিভিন্ন অঙ্গ কতটা সঠিকভাবে কাজ করছে সেটি একটি বড় প্রশ্ন এখন? গত কয়েকদিন আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হার নির্ধারণ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু দু'দিনের মধ্যেই বিরূপ প্রতিক্রিয়া টের পেয়ে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসছে। কথা হলো এমন একটি বড় সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কি হিসাব-নিকাশ ছিল তা এখন বোঝা দুষ্কর হয়ে পড়েছে।
কিন্তু স্বাভাবিকভাবে সবাই যারা মুদ্রা বাজারের ন্যূনতম খোঁজ-খবর রাখেন তারা জানেন যে ওই সিদ্ধান্তে সরকারের বৈদেশিক আয়ের প্রবাহ মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হতো। ফলে এ ধরনের সিদ্ধান্ত যারা নিয়েছিল তাদের দূরদর্শিতার বিষয়টি প্রশ্নবোধক?
আমদানিকৃত পণ্যের বাজার কোনভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না যদি মুদ্রা বাজারের এই অস্থিরতা চলমান থাকে। বরং আমদানিকারককে নিরুৎসাহিত করা হবে বারবার তার উপর হস্তক্ষেপ করার ফলে। আমদানিকারককে নিশ্চিতভাবে নিশ্চয়তা দিতে হবে তার আমদানিকৃত পণ্যের মূল্য বাজার চাহিদা অনুসারে যেন বিক্রয় মূল্য নির্ধারণ করতে পারে।
তাহলে আরো বেশি আমদানিকারকের সুযোগ সৃষ্টি হবে, আরও পণ্য আমদানি হবে, দেশে প্রতিযোগিতা হবে, আমদানি পণ্যর বিক্রিতে একটি প্রতিযোগিতা মূল্য নির্ধারণ হবে। যে প্রতিযোগিতা সব সময় ভোক্তাদের অনুকূলেই যায়।
আমরা জানি, বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পণ্য দীর্ঘদিন যাবৎ কয়েকজন মুষ্টিমেয় ব্যবসায়ী নিয়ন্ত্রণ করে, তার মধ্যে অন্যতম হলো ভোজ্য তেল। গুরুত্বপূর্ণ এসব বিষয়ে নজর দেওয়া জরুরি। ভাঁড়ের মতন অযৌক্তিক উক্তি করলে সমাজে, শাসনে অনাস্থা সৃষ্টি হয়।
এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।