আমরা শ্রীলঙ্কা নই, তবে শ্রীলঙ্কা হতে খুব একটা কসরত করতে হবে না

বাংলাদেশের সরকারি ঋণ—দেশি-বিদেশি দুটোই—বাড়ছে। এর ফলে বাড়ছে অর্থনীতিতে সম্ভাব্য শ্রীলঙ্কা-প্রভাব দেখা দেওয়ার আশঙ্কাও।
বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদরা সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। বাইরের পর্যবেক্ষকরা—মূলত বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ—ইঙ্গিত দিয়েছে যে আমাদের অবস্থান শ্রীলঙ্কার সঙ্গে তুলনীয় নয়।
কিন্তু এতে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলার সুযোগ কম। যে রক্ষণশীল, ম্যাক্রো-ইকোনমিক ব্যবস্থাপনা আমাদের অর্থনৈতিক কৌশলের ঐতিহ্যগত বৈশিষ্ট্য, তার সঙ্গে আপস করা হচ্ছে কি না, তা খুব সতর্কতার সাথে ভেবে দেখা উচিত।
মেগা প্রকল্পগুলোর পেছনে যে খরচ হচ্ছে, তার লাগাম টেনে ধরে পরিচালনায় বিনিয়োগ করতে হবে। বেসরকারি খাতকে শক্তিশালী করা এবং সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগকে (এফডিআই) উৎসাহিত করার জন্য এ ধরনের একটি কৌশলগত পরিবর্তন জরুরি হয়ে পড়েছে।
কাজেই আরও মেগা-অর্থায়ন ও রিজার্ভের অপ্রথাগত ব্যবহারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে প্রথমেই আমাদের উচিত সরকারি ঋণের বোঝার সতর্ক, নিরপেক্ষ বিশ্লেষণ করা এবং বৈশ্বিক অর্থনীতির অনিশ্চয়তাকে হিসাবে নেওয়া।
দুটি বিষয় মাথায় রাখা উচিত আমাদের—পাঁচ থেকে ছয় মাসের আমদানি মূল্যের সমান রিজার্ভকে খুব বেশি বলা যায় না, যদিও এই পরিমাণ রিজার্ভ থাকাটা স্বস্তিদায়ক। আমাদের এ-ও বুঝতে হবে যে, জিডিপি প্রাক্কলনের হিসাবে যেখানে ভুল হতে পারে, সেই পরিস্থিতিতে ঋণ সার্ভিসিং অনুপাতের মতো সূচকগুলোর ওপর চোখ বুজে নির্ভর করাটা বিপদ ডেকে আনতে পারে।
এছাড়াও বৈশ্বিক খাদ্য ও জ্বালানির বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে। সেজন্য আমাদেরকে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
এ কারণে অনেকগুলো অনিশ্চয়তায় পড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে, বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ কতটুকু রাখা নিরাপদ, তা খুব সাবধানে ঠিক করা উচিত। রিজার্ভের অপ্রথাগত ব্যবহার নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা করার বা দেশ থেকে রিভার্স এফডিআইয়ের প্রতি উদার অবস্থান নেওয়ার সময় এখন নয়। এফডিআইকে উৎসাহিত করা প্রয়োজন—অথচ বাস্তবে যখন আমরা উল্টোটা করতে উৎসাহ দিচ্ছি—এ যুক্তি দেওয়াটা একটু কঠিন হয়ে যাবে না?
বাস্তবতা দেখে মনে হচ্ছে অনেক সম্পদই আসলে দেশের বাইরে চলে যায়। এই প্রবাহ সম্পূর্ণরূপে থামাতে না পারলেও প্রক্রিয়াটিকে স্বচ্ছ করার উপায় নিয়ে কি আমরা ভাবতে পারি? এই বিষয়টির যৌক্তিক সমাধান হয়ে গেলে তারপর রিভার্স এফডিআই নিয়ে ভাবাটা বেশি ভালো হবে না?
হ্যাঁ, আমরা শ্রীলঙ্কা নই—তবে শ্রীলঙ্কা হতে খুব একটা কসরত করতে হবে না।
- কেএএস মুরশিদ বিআইডিএসের সাবেক মহাপরিচালক