মুদ্রাস্ফীতি, বিনিময় হার এখন উদ্বেগের কারণ

গত অর্থবছরের ৬.৯৪% প্রবৃদ্ধি থেকে এ অর্থবছরে ৭.২৫ প্রবৃদ্ধি অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে না। আমাদের অর্থনীতি এখন পুনরুদ্ধার পর্যায়ে রয়েছে। মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানি অনেক বেড়েছে। রপ্তানির ব্যাপক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এতে বোঝা যায় যে, বিনিয়োগ হচ্ছে, অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বেড়েছে । প্রবাসী আয় কিছুটা কমলেও এ ঈদে তা বেড়েছে। আবার কৃষি উৎপাদনও ভালো ছিল। শিল্প উৎপাদনও খুব বেশি কমেনি। বেসরকারি বিনিয়োগ একটু বেশি মনে হচ্ছে, যদিও গত এক বছরে আমাদের মূলধনী যন্ত্রপাতি হয়েছে।
এসব সূচকের কারণে আমাদের যে প্রবৃদ্ধি দেখানো হচ্ছে তা সঠিকই মনে হচ্ছে।
চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৬ এর ওপরে বা ৭ এর কাছাকাছি যাবে এ ধরনের প্রজেক্টশন আইএমএফ এবং বিশ্বব্যাংক আগেই দিয়েছিল।
প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে আমরা পুরোপুরি কোভিড পূর্ববর্তী অবস্থায় এখনো ফিরে যেতে পারি নি। আগামী অর্থবছরে যদি ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি থাকে, তবে বোঝা যাবে আমরা কোভিড পূর্ববর্তী অবস্থায় ফিরে যেতে পেরেছি কিনা।
তবে প্রবৃদ্ধি চিন্তা করার চেয়ে আগামী বছরের বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে, সেখানেই আমাদের বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।
বর্তমান সামষ্টিক অর্থনীতির এ চ্যালেঞ্জগুলো খুবই উদ্বেগজনক। একটা হলো মূল্যস্ফীতি, যা বেড়েই চলছে। অন্যটি হলো আমদানি বেড়ে যাওয়ার কারণে আমাদের চলতি হিসাবে ঘাটতি ১৪ বিলিয়ন ডলার হয়ে গেছে। এর ফলে রিজার্ভ ধরে রেখে এক্সচেঞ্জ রেট ম্যানেজ করা কঠিন কাজ বলে আমি মনে করি। এছাড়া ঋণ ব্যবস্থাপনায় আমাদের সতর্ক হতে হবে। এসব বিষয়গুলোর ঠিক মতো ব্যবস্থা নিতে না পারলে আগামী অর্থবছরে আমরা জটিলতায় পড়বো। ইতোমধ্যে এক্সচেঞ্জ রেট মূল্যমান কমানো হচ্ছে। এটা যথেষ্ট না। এটাকে যদি ধরে রাখতে হয় তবে প্রচুর ডলার বাজারে ছাড়তে হবে। এটা করলে আবার রিজার্ভ কমবে। রিজার্ভ কমানো আবার এ মুহূর্তে যৌক্তিক হবে না। সবমিলিয়ে মূল্যস্ফীতি, এক্সচেঞ্জ রেট ম্যানেজমেন্ট, চলতি হিসাবে ঘাটতি আগামী বছরের জন্য উদ্বেগের কারণ। প্রবৃদ্ধি যদি কমও হয় সামষ্টিক অর্থনীতির ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে হওয়া উচিত। তা না হলে বিপদে পড়তে হবে আমাদের।
মাথাপিছু আয় হিসাব করা হয় দেশের সব ধরনের আয় দিয়ে। মাথাপিছু আয় জিডিপির প্রবৃদ্ধির ওপর নির্ভর করে, সে হিসাবে আমাদের মাথাপিছু আয়ও বাড়বে। তবে মাথাপিছু আয় একটু বেশি মনে হচ্ছে।
- মঞ্জুর হোসেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক
(দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সিনিয়র স্টাফ কারেসপন্ডেন্ট সাইফুদ্দিন সাইফের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন তিনি)