শুধু প্রবৃদ্ধি নয়, অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি চাই আমরা
কোভিডের পরে সারা বিশ্ব এমনকি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো প্রবৃদ্ধি অর্জনে ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি, সেখানে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। কোভিডের সময়ে আমাদের প্রবৃদ্ধি কম হয়েছিল, এখন আমরা সেটা কাটিয়ে উঠছি। আমাদের অর্থনীতির অন্তর্নিহিত শক্তিই প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়তা করছে। এটা আমাদের অর্থনীতির একটা ভালো দিক।
কিন্তু আমরা তো শুধু প্রবৃদ্ধি চাই না, আমরা চাই ইনক্লুসিভ গ্রোথ তথা অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি; যাতে সবাই এ প্রবৃদ্ধির সুফল পায়। আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে সমতাভিত্তিক সমাজ গড়ে তোলা, যেখানে দারিদ্র্য থাকবে না। বঞ্চনা থাকবে না। এটাই আমাদের মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য ছিল। কিন্তু প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আমাদের দারিদ্র্য কমছে না। বাড়ছে বৈষম্য।
বৈষম্যের প্রকৃত চিত্রও এখন উঠে আসে না। কারণ আমাদের অনেক তথ্যই নেই। দেশের ২০১৬ সালের পরে খানা জরিপ হয়নি, যার মাধ্যমে মানুষের প্রকৃত আয় উঠে আসে, বৈষম্যের হার জানা যায়।
কিন্তু আমরা জানি সমাজে বৈষম্য বাড়ছে। প্রবৃদ্ধি বা মাথাপিছু আয় বাড়লেও আয়ের বৈষম্য, সম্পদের বৈষম্য, শিক্ষা বৈষম্য, স্বাস্থ্যে বৈষম্য দূর করতে পারছি না। কোভিডের সময়ে বৈষম্য আরো গভীরভাবে বেড়েছে। কোভিডের প্রভাবে আয় হারিয়েছে অনেকে। দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমেছে মানুষ। প্রবৃদ্ধি বাড়লে বা মাথাপিছু আয় বাড়লে খুশির কথা কিন্ত পরিপূর্ণ খুশি আমরা হতে পারছি না। কারণ আমরা এখনো সমতাভিত্তিক সমাজের দিকে অগ্রসর হতে পারিনি।
কাউকে পিছিয়ে রাখা যাবে না, এসডিজির যে লক্ষ্য, তা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে মিলে যায়। প্রবৃদ্ধি বাড়ছে, সমাজের একটা অংশ ক্রমাগত পিছিয়ে পড়ছে। কোভিডের কারণে বৈষম্য বৃদ্ধির প্রক্রিয়া আরো দ্রুত গতিসম্পন্ন হয়েছে।
মাথাপিছু আয় বৈষম্য দেখে না, শুধু গড় আয় দেখে। কাজেই উন্নয়ন হলে গড় মাথাপিছু আয় বাড়বে। কিন্ত গড় মাথাপিছু আয় বড় কথা না। এর সঙ্গে সঙ্গে আমাদের বৈষম্যও কমাতে হবে।
- ড. মোস্তফা কে মুজেরি বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক
(দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সিনিয়র স্টাফ কারেসপন্ডেন্ট সাইফুদ্দিন সাইফের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন তিনি)