অর্থনৈতিক সংকটের সময় রাজনৈতিক সংকট বাড়ানো যোগ্য নেতৃত্বের কাম্য নয়

দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রতিদিনই উত্তাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই উত্তাপের মাত্রা কোথায় যেয়ে পৌঁছাবে এখনই বোঝা যাচ্ছে না। ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা যেভাবে বিরোধী দলের বাড়িঘর আক্রমণ করছেন কিংবা পুলিশের উপস্থিতিতে যেভাবে বিরোধীদলের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ছেন তা কোনো শুভ ইঙ্গিত নয়।
দেশের প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে দেশে আর এক দফা রাজনৈতিক সংঘাত মাত্রা বৃদ্ধি পেল।
নারায়ণগঞ্জের ঘটনায় মৃত ব্যক্তির রাজনৈতিক মালিকানা নিয়ে দেন দরবার চলছে। তিনি কোন দলের সমর্থক ছিলেন? সরকার দলের মন্ত্রী তাদের দলের কর্মী হিসেবে দাবি করলেন। যেন ব্যাপারটা এরকম যে তাদের দলের কর্মী হলে পরে এই হত্যার কোন দায়বদ্ধতা নেই। এই হত্যাকে কেন্দ্র করে সংসদের ভিতরে বাইরে যে সমস্ত কথাবার্তা ছড়াচ্ছে সরকারি দলের প্রতিনিধিরা, তার গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু?
পুলিশের উপর হামলা হলেই পুলিশ গুলি করবে এমনটি বলার কোন কারণ নেই। বাংলাদেশের রাজনৈতিক আন্দোলনের ইতিহাসে পুলিশের সঙ্গে সংঘাত হওয়া নতুন কোন ঘটনা নয় । প্রথম শ্রেণীর দৈনিকে পুলিশের যে ছবি প্রকাশিত হয়েছে তা দেখে সন্দেহ সৃষ্টি হওয়ার যথেষ্ট কারণ হয়েছে। যে ব্যক্তি এই অস্ত্র ব্যবহার করছিলেন তিনি কি পুলিশের লোক? যদিও তার গায়ে একটি পোশাক ছিল ডিবির পোশাক। তিনি কি সরাসরি এই ধরনের সংঘর্ষে জড়িত হতে পারে? এগুলোই এখন প্রশ্ন, এর ব্যাখ্যা পুলিশ নিশ্চয়ই দেবে।
তবে যে দাবীই থাকুক, মৃত ব্যক্তির রাজনৈতিক পরিচয় সুস্পষ্ট হয়ে গেছে। ইতিমধ্যেই তাকে যে মিছিলের অগ্রভাগে তাকে দেখা যাচ্ছিল তা ছিল একটি দলের ঘোষিত কর্মসূচির অংশ। কাজেই সেখানে কীভাবে পুলিশ আক্রান্ত হলো এবং গুলি বর্ষণ করলো তাও জনগণের কাছে পরিষ্কার হতে হবে। অতীতের বহু ঘটনায় ক্ষমতাসীন সরকারের পক্ষে পুলিশের পদক্ষেপকে সবসময়ই যৌক্তিক হিসেবে প্রমাণ করার চেষ্টা করা হয়েছে, কিন্তু তার পরিণতিতে কখনোই রাজনৈতিক সমঝোতার সৃষ্টি হয়নি। ফলে চূড়ান্ত বিভাজনের দিকে হাঁটছে রাষ্ট্র।
অর্থনৈতিক সংকটের মুখে দেশ। এমন সময় রাজনৈতিক সংকট আরও বৃদ্ধি করা কখনোই কোনো যোগ্য রাজনৈতিক নেতৃত্বের কাম্য হতে পারে না। বিশ্ব অর্থনৈতিক সংকটের পদধ্বনি আমাদের দেশে শোনা যাচ্ছে। দেশের শিল্প কারখানার অধিকাংশের বিদ্যুৎ ঘাটতির জন্য উৎপাদন ব্যহত হচ্ছে। প্রায় বিশাল অংশের শিল্প কারখানা ক্ষতির সম্মুখীন নিয়মিত বিদ্যুৎ কিংবা গ্যাসের অভাবে।
অতীতের প্রচলিত রাজনৈতিক কৌশল বেশি বেশি করে ব্যবহার করা হচ্ছে তারপরও ধন্যবাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে সংসদে তিনি বাস্তব কথাটি তুলে ধরেছেন। সংকটের আভাস দিয়েছেন অথচ তার মন্ত্রী পরিষদের অনেকেই এ বিষয়ে ভিন্ন মত প্রকাশ করে চলছেন। তাদের দাবির সঙ্গে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের কোনো মিল নেই।
দেশের বিশাল জনগোষ্ঠী প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের ফলে আশাবাদী হয়ে উঠেছিল যে দেশে একটি রাজনৈতিক সমঝোতার দিকে চলছে। হঠাৎ করে সেটি ভেঙে গেল কিনা প্রশ্ন? সংকটের মুহূর্তে যতই বিভাজন সৃষ্টি হবে ততই সংকট তার দৃঢ় ভিত্তি খুঁজে পাবে।
পৃথিবীর অন্য দু- একটি দেশে তেমন ঘটনা ঘটেছে। ফলে বড় ধরনের রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে। আমরা আমাদের দেশের ভবিষ্যতের কথা মনে রেখে বড় ধরনের কোন রাজনৈতিক সংকট চাই না । এমনি রাজনৈতিক সংকটের ফলে ২০০৭ এ আমাদের দেশে সামরিক শাসন জারি হয়েছিল পর্দার অন্তরালে। ২০০৭/২০০৮ এর পর্দার অন্তরালের সামরিক শাসনের পরিণতি আমাদের কারো জন্যই ভালো হয়নি। দেশের সামগ্রিক গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো আরো দুর্বল হয়েছে এবং যার প্রতিটি লক্ষণ এখন সুস্পষ্ট হয়েছে। আমরা সেই ২০০৬ এর কোন পরিস্থিতি চাই না আর। কিংবা ২০১৩ কোন পরিস্থিতি ফিরে আসুক এ দেশে তাও আমরা চাই না।
দীর্ঘ সাড়ে তিন চার বছরে সরকারি দলের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের বহিষ্কৃত ব্যক্তিদেরকে রাজনৈতিক অঙ্গনে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সে চার বছর আগের ঘটনাগুলো মানুষের মনে আবার সন্দেহের সৃষ্টি করছে। কেন সে সময় এদেরকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল অথবা কারাগারে পাঠানো হয়েছিল?
মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক রাজনৈতিক দল এখন ক্ষমতায় দেশের আগামী ভবিষ্যতের দায়ভার তাদের ঘাড়ে সুতরাং রাজনৈতিক সমঝোতা রক্ষা করা তাদেরই প্রধান দায়িত্ব তা মনে রাখতে হবে।