পশ্চিমবাংলার নির্বাচনে আসলে জয়ী হয়েছে কে!
পশ্চিমবাংলা রাজ্যশাসনে তৃতীয় বারের মতন ক্ষমতায় ফিরেছে মমতা ব্যানার্জির তৃণমূল কংগ্রেস । নির্বাচনী ফলাফলে বিজয়ের মাত্রা আগের জায়গায় ধরে রাখল আসন সংখ্যা তিনটি বৃদ্ধি করে। মোদি-অমিত শাহ জুটি মার্চ এবং এপ্রিল দু'মাস ধরে যে ব্যাপক নির্বাচনী প্রচার চালালেন তার ফলাফল ব্যর্থ হয়েছে কিনা- তাই এখন ভাবার বিষয়। মোদি জনসভা করেছেন মোট ১৫টি অমিত সাহা করেছেন ৬২টি। অন্যান্য মন্ত্রীরা সব মিলিয়ে করেছেন প্রায় ১২০টি। এই ছিল পশ্চিমবাংলায় বিজেপির নির্বাচনী প্রচারণার একটি হিসাব। এর সাথে সাথে আরেকটি হিসেবের দিকেও নজর দিতে হবে, তা হলো ২০১১ রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির আসন সংখ্যা ছিল শূন্য। ২০১৬ নির্বাচনে আসন সংখ্যা হল ৩। ২০১৬ নির্বাচনের আগেই বিজেপি কেন্দ্রে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে পড়লো, নরেন্দ্র মোদি হলেন দেশের প্রধানমন্ত্রী। আর ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পর এই রাজ্যে বিজেপির আসন সংখ্যা হল ৭৬।
এ নির্বাচনের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ যে ঘটনাটি হলো; ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের রাজনৈতিক দল জাতীয় কংগ্রেসের অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়ে গেল পশ্চিমবাংলার বিধানসভা থেকে। ১৯৭৭ সালের কংগ্রেস ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত হওয়ার পরেও পশ্চিমবাংলার মালদা এবং মুর্শিদাবাদ এই দুইটি অঞ্চলে তাদের অস্তিত্ব ধরে রেখেছিল। কিন্তু এবার তা সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হলো। এভাবে কংগ্রেসের পশ্চিম বাংলার মাটি থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়াকে ওপারের বাঙালিদের একটি বড় ধরনের প্রতিশোধ হিসেবে দেখা যেতে পারে।
বাংলার নেতা সুভাষ বসুকে উত্তর ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃত্ব ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে কংগ্রেস ত্যাগ করতে বাধ্য করেছিলেন সেই ১৯৩০' এর দশকে। গান্ধী-নেহেরু-বল্লভভাই-প্যাটেল চক্র সুভাষ বসুকে কংগ্রেসের নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দিয়েছিল। আজ প্রায় ৯০ বছর সময় পরে পশ্চিমবাংলার মানুষ তার প্রতিশোধ গ্রহণ করলো বলা যায়। তবে বিষয়টি এত বছর পরে ততটা প্রাসঙ্গিক নয়, কোনভাবেই। কিন্তু প্রতিবারের মতো এবারও বামফ্রন্টের অংশীদার ফরওয়ার্ড ব্লক সুভাষ বসুর প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল প্রাসঙ্গিকভাবেই তুলে ধরার চেষ্টা করে কংগ্রেস থেকে সুভাষ বসুর পদত্যাগে বাধ্য হওয়ার বিষয়টি। বিষয়টা অনেকটা দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের মতন যেখানে ভারতীয় কংগ্রেস ভাষার প্রশ্নে স্বাধীনতার পর সম্পূর্ণভাবে পরাজিত হয়ে আসছে।
পশ্চিমবাংলায় অন্য ঘটনাটি হল ৩৪ বছরের বাম শাসনের পরিণতি। রাজ্যের বিধানসভায় প্রতিনিধিত্বহীন অবস্থান। আবার এর পাশাপাশি মমতা ব্যানার্জীর আসন নন্দীগ্রাম নিয়ে সমস্ত দিনের নাটক। সব শেষে মমতার পরাজয় ঘোষণা, তাতে মমতা হেরেছেন ১৯০০ ভোটে। নন্দীগ্রামের ফলাফল ঘিরে নাটকের একটা ব্যাখ্যা নির্বাচন কমিশন থেকে এসেছে, তারা বলছেন সার্ভারের সমস্যা। নানা নাটকের মধ্যে দিয়ে মমতার এই পরাজয় হলেও, তাতে তার মুখ্যমন্ত্রী হতে কোনো বাধার সৃষ্টি হবে না। ইতিমধ্যে খড়দহ নামক একটি নির্বাচনী এলাকার বিজয়ী তৃণমূল প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে সেই আসনে পুনর্নির্বাচনের মাধ্যমে হয়তো মমতা ব্যানার্জি অ্যাসেম্বলিতে আসন নিশ্চিত করবেন। যদিও তিনি ও তাঁর দল তৃণমূল কংগ্রেস ইতিমধ্যে নন্দীগ্রামে পুনরায় ভোট গননার দাবি জানিয়েছে। যেকোনো একটি উপনির্বাচনে মমতা ব্যানার্জি নিশ্চয়ই জয়লাভ করবেন ধরেই নেওয়া যায়।
শেষ হয়ে যাওয়া বিধানসভায় বাম কংগ্রেসের প্রতিনিধিত্ব ছিল ৭৭টি আসনে। কিন্তু সেই ৭৭ টি আসন কি করে একটি আসনে পরিণত হলো এই গবেষণা খুবই কঠিন হয়ে দাঁড়ালো। ভারতীয় রাজনীতির প্রতিটি ইতিহাসের খবর রাখেন যারা তারা জানেন ব্রিটিশ ভারতের সময় বাংলা যখন অবিভক্ত ছিল, ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সূতিকাগার ছিল এই অবিভক্ত বাংলা। ব্রিটিশদের ভারত ত্যাগে বাধ্য করেছিল বলা যেতে পারে এ অবিভক্ত বাংলা। আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের কালাপানি নামক কুখ্যাত যে কারাগারটি তৈরি করা হয়েছিল, তার ইতিহাসের পাতায় পাতায় বাংলার দুর্ধর্ষ বাঙালি স্বাধীনতা কর্মীদেরই বন্দি করার কথা লেখা আছে।
১৯৭৭ সালে কংগ্রেসকে প্রথম পরাজিত করে পশ্চিমবাংলার বামফ্রন্ট নামে খ্যাত একাধিক বামপন্থী রাজনৈতিক দল। যাদের প্রায় সকলেরই মূল আদর্শ মার্কসবাদ লেলিনবাদ ও সমাজতন্ত্র। মার্কসবাদ, লেলিনবাদ সমাজতন্ত্রের স্বপ্ন নিয়ে জ্যোতি বসুর নেতৃত্বে ১৯৭৭ সালে বামফ্রন্ট প্রথম পশ্চিমবাংলায় সরকার গঠন করে। তারপর একটানা ২০১১ সাল পর্যন্ত দলটি ক্ষমতায় থাকে। ৩৪ বছর। এ সময়ে বামফ্রন্টের লক্ষণীয় অর্জন হল দ্বিজাতি তত্ত্ব এবং সাম্প্রদায়িকতার গর্ভ থেকে জন্ম নেওয়া পশ্চিম বাংলার মাটি থেকে সাম্প্রদায়িকতাকে উৎখাত করা। বাম শাসনের ৩৪ বছরে পশ্চিমবাংলায় কোন উল্লেখযোগ্য সাম্প্রদায়িকতা দেখা যায়নি। নব্বইয়ের দশকে বিশ্বের সমাজতান্ত্রিক দর্শনের পরাজয় ঘটে, সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে চৌদ্দটি দেশে রূপান্তরিত হয়। চীনের মাওবাদীরা পরাজিত হয়, মাওয়ের আদর্শ চীনে বিলুপ্ত হয়। সমাজতন্ত্রের এই পতনের ঘটনা থেকে পশ্চিমবাংলার বামপন্থীরা শিক্ষা গ্রহণ না করার ফলে ২০১১ সালে তাদের বিদায় নিতে হয়। কিন্তু এর মধ্যেও উল্লেখযোগ্য হচ্ছে আশির দশকের একবারে শেষ দিক থেকে নব্বইয়ের দশকের গোড়াতে বিশ্বব্যাপী মার্কসবাদী আদর্শের পরাজয়ের পরেও পশ্চিমবাংলায় আরো ২০ বছর ক্ষমতায় থাকলো ভারতীয় মার্কসবাদীরা। পশ্চিম বাংলার বাইরে এখনো আরেকটি রাজ্য কেরালায় মাক্সবাদী রাজনৈতিকরা ক্ষমতা ধরে রেখেছে। এবারকার নির্বাচনেও বিজয় অর্জন করেছে তারা। তবে কেরালা বিজয়ের পেছনের কারণ হিসেবে রাজ্যটির ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বসমূহের অসাধারণ ব্যক্তিগত গুণাবলীর প্রধান্য ছিল। ব্যক্তি জীবনের সর্বোচ্চ সততাই এই রাজনৈতিক নেতৃত্বকে আবার ক্ষমতায় পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছে।
এবারকার পশ্চিমবাংলার নির্বাচনে ২০১৬ সালের নির্বাচনে পাওয়া ৩টি আসনকে বিজেপি ৭৬টি আসনে রূপান্তরিত করতে পেরেছে। আবার মমতা ব্যানার্জির তৃণমূল কংগ্রেসের আসন বেড়েছে ৩টি, অর্থাৎ ২০১৬ সালের নির্বাচনে তৃণমূলের আসন সংখ্যা ছিল ২১১, সেখান থেকে এবার হলো ২১৪।
পশ্চিমবাংলা জুড়ে প্রশ্ন হচ্ছে বামদের আসন কি রামদের কাছে গেল? কারণ বিজেপি তার নির্বাচনী প্রচারণায় শ্রীরাম নামক স্লোগানটি নিয়ে এসেছিল উত্তর ভারতের জয় থেকে। কিন্তু, পর্যালোচনা করলে দেখা যায় মালদা ও মুর্শিদাবাদ কংগ্রেসের ঘাঁটি বলে পরিচিত আসনগুলো মূলত ছিনিয়ে নিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। এবং বাম ও কংগ্রেসের সবকয়টি আসনের অধিকাংশ আসনে জয়লাভ করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। আবার বিজেপি যে আসনগুলোতে জয়লাভ করেছে তা মূলত ছিল তৃণমূল কংগ্রেসের। অদ্ভুত এক সমীকরণ সৃষ্টি হয়েছে পশ্চিমবাংলার ভোটের ফলাফলে।
পর্যালোচনা করলে যে বিষয়টি সামনে উঠে আসে তা হলো, পশ্চিমবাংলার মানুষ লড়াই করছিল সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে। পশ্চিম বাংলার মানুষ বিজেপিকে প্রতিহত করার চেষ্টা করেছিল। প্রশ্ন হল বিজেপি কি আদৌ প্রতিহত হল? পশ্চিম বাংলার মাটিতে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত না হলেও এ কথা বলা যায় যে পশ্চিমবাংলায় এক ধরনের বিজয় অর্জন করেছে বিজেপি। ২০০৬ সালে তৃণমূল কংগ্রেসের হাত ধরেই পশ্চিমবাংলায় প্রথম বিজেপি নামক রাজনৈতিক দলটি পরিচিতি লাভ করেছিল। সেই নির্বাচনে মমতা ব্যানার্জি বিজেপিকে দুইটি বিধানসভার আসন ছেড়ে দিয়েছিল। আর লোকসভায় দেওয়া হয়েছিল চারটি আসন। ওই নির্বাচনের পরে তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জি নিজে বিজেপির অটল বিহারী বাজপাই সরকারের যুব মন্ত্রী হয়েছিলেন। এছাড়াও অটল বিহারি বাজপাইর মন্ত্রিসভার চারজন লোকসভার সদস্যের মধ্যে থেকে দু'জনকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী করা হয়েছিল। লোকসভার ছেড়ে দেওয়া সেই চারটি আসন বিধানসভায় ২৮টি আসনের সমকক্ষ। এটা করা হয়েছিল পশ্চিমবাংলায় বিজেপি নামক রাজনৈতিক দলটির ভিত্তি শক্তিশালী করার জন্য। সেই থেকে বিজেপির পশ্চিমবাংলায় যাত্রার ইতিহাসের শুরু। তবে এরমধ্যে একটা মজার ব্যাপার হল এই বিজেপি তথা বাজপাই সরকারের পরাজয় ঘটল তখনেই আবার পশ্চিমবাংলায় বিজেপি বিলীন হয়ে গেল।
অথচ এবারকার নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী এবং তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থীরা বিজেপিকে আক্রমণ করেছে বহিরাগত বলে। প্রশ্ন হলো ২০০৬ নির্বাচনে বিজেপি কি বহিরাগত ছিল না। যে বিজেপির বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িকতার তীব্র অভিযোগ, নির্বাচনকালীন সময়ে বিজেপির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী অমিত শাহ প্রায় সরাসরি মমতা ব্যানার্জিকে উদ্দেশ্য করে যেসব অশালীন ভাষা ব্যবহার করেছে, বেসুরো কন্ঠে দিদি বলে সম্বোধন করেছে তার পরেও সেই বিজেপির ৭৬ আসন পাওয়া কোনোভাবেই পরাজয় বলা যাবে না। বরং বলা যায় রাজ্যটিতে আবার পুরোপুরি ভাবে ফিরে আসলো সাম্প্রদায়িক শক্তি। পশ্চিমবাংলার বিজেপি নেতৃত্বের প্রশ্নে একটি অস্পষ্টতা ছিল। মূলত এবার মোদি এবং অমিত শাহ জূটি পশ্চিমবাংলার নির্বাচন পরিচালনায় নেতৃত্ব প্রদান করেছেন। দিলীপ ঘোষ, মুকুল রায় পশ্চিম বাংলার মানুষরা প্রকৃত অর্থে খানিকটা সাইডলাইন অবস্থানে ছিল।
গত লোকসভায় নেতৃত্বদানকারী মূল নেতা দিলীপ ঘোষ বাংলা ভাষায় কথা বললেও তার ভাষায় বাংলা পরিষ্কার উচ্চারণের না। নির্বাচনের কয়েক মাস আগে পশ্চিম বাংলার বিখ্যাত বাঙালি বাবু সৌরভ গাঙ্গুলীর নামও উঠে এসেছিল বিজেপির সম্ভাব্য মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে। ৭৬টি আসন লাভের মাধ্যমে বিজেপির এই ব্যাপক বিকাশের ফলে পশ্চিমবাংলা রাজনীতিতে নেত্রী মমতা ব্যানার্জি আগামী চার/পাঁচ বছর কিভাবে সামাল দেয় তা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণের বিষয়।
দক্ষিণ ভারতের রাজনৈতিক দল ডিএমকে অথবা আই এম ডি এম কের নেতৃবৃন্দ নিজেদেরকে অসম্প্রদায়িক হিসেবে তুলে ধরার লক্ষ্যে প্রকাশ্যে রাজনীতিতে কখনো ধর্মীয় চর্চা করতেন না অতীতে। যদিও দ্রাবিড়দের এই রাজনৈতিক দল দুটি ব্যক্তিজীবনে চরমভাবে ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি পালন করে থাকেন। সে দিক থেকে তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী নিজেকে ধর্মনিরপেক্ষ প্রমাণ করার জন্য ঘোমটা দিয়ে মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে হাত তুলে মোনাজাত করা কিংবা কালী মন্দিরে পুজো দেওয়ার ভেতর থেকে যে ধর্মনিরপেক্ষতার সংজ্ঞার বিকাশ ঘটছে তা আগামী দিনের পশ্চিমবাংলায় ধর্মীয় বিভাজন আরো বৃদ্ধি পাবে।
পশ্চিমবাংলায় বিজেপির নির্বাচনী প্রচারণার ফল ছিল বাংলাদেশের মোদির আগমনকে কেন্দ্র করে হেফাজতে ইসলামের ব্যাপক তান্ডব। পশ্চিমবাংলায় আপাতদৃষ্টিতে বিজেপি ক্ষমতায় না আসলেও যে রাজনৈতিক সংস্কৃতির আবির্ভাব ঘটল তার প্রভাব বাংলাদেশেও পড়বে বলে আশঙ্কা করা যায়। সেই কারণে এই দুই বাংলার মানুষের ধর্মনিরপেক্ষতার প্রকৃত ব্যাখ্যা চর্চা অনেক জরুরী হয়ে পড়েছে। পশ্চিমবাংলার বামপন্থীরা দীর্ঘ ৩৪ বছর সাম্প্রদায়িকতা ঠেকিয়ে রাখতে পারলেও প্রকৃত ধর্ম নিরপেক্ষতার ব্যাখ্যা সমাজ জীবনে বাস্তবায়ন করতে পারেন নাই। যদিও দলটির মূল নেতৃত্ব নিজেরা কখনো সামাজিকভাবে ধর্মীয় আচার আচরণে যোগ দিত না। যে ৩৪ বছরের শাসনামলে পশ্চিম বাংলার মাটি থেকে বামফ্রন্ট সরকার সাম্প্রদায়িকতাকে ঠেকিয়ে রেখে ছিল তৃণমূল কংগ্রেসই সেই সাম্প্রদায়িক শক্তিকে প্রাথমিকভাবে বসার জায়গা করে দিয়েছে। বিপরীতে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য বামেরা কখনই বিজেপির সঙ্গে অতীতে কোন পর্যায়ে কোন ধরনের আঁতাত করেনি, কিন্তু তৃণমূল নেত্রী সেই কাজটি করেছেন। কংগ্রেস বিরোধী আন্দোলনে সর্বশেষ ২০১১ সালের নির্বাচনের আগে সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে রাস্তায় নেমেছেন। এমনকি আগে উল্লেখ করেছি বিজেপি সরকারের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ২০০৬ সালে।
তৃণমূল এবং বিজেপি পরস্পরকে যে ভাষাতেই আক্রমণ করুক না কেন পশ্চিম বাংলার মানুষের ভুলে যাওয়া উচিত হবে না, পশ্চিমবাংলার আগামী দিনগুলো আরও কঠিন হবে কারণ এই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রে বিজেপিকে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করতে সহায়তা করেছিল, তেমনি ভাবে আজও পশ্চিমবাংলায় বিজেপিকে আসন গেড়ে বসতে সহায়তা করলো। পশ্চিমবাংলার রাজনীতিতে ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে অতীতে বামদলগুলোকে প্রধান শত্রু বিবেচনা করার ফলে পশ্চিম বাংলার মাটিতে এই ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক শক্তি আসন গেড়ে বসল। এটা মোটেও কাম্য ছিল না।
- লেখক: রাজনৈতিক বিশ্লেষক