সত্যজিৎ হয়ে উঠতে ড্রিল মেশিন চালিয়ে ফাঁকা করেছেন দাঁত!
কোনও বিশেষ ব্যক্তিকে পর্দায় ফুটিয়ে তুলতে অভিনেতাদের বহু পরিশ্রম করতে দেখা যায়। বিশেষত যদি কারও বায়োপিক হয়, হাঁটা-চলা, আদবকায়দা সবই আয়ত্ত করতে হয়। বাঁচতে হয় যেন 'সেই' মানুষটি হয়ে। এরকম দৃষ্টান্ত বহু শোনা গেছে। তবে পর্দায় সত্যজিৎ রায়ের মতো 'লুক' তৈরি করতে পশ্চিমবাংলার অভিনেতা জিতু কমল যা করেছেন, তা শুনে হয়তো অনেকেরই গায়ে কাঁটা দেবে।
অনীক দত্তের 'অপরাজিত' ছবিতে অভিনয় করছেন জিতু কমল। বায়োপিক না হলেও এ ছবি যে সত্যজিৎ রায়ের জীবন নিয়েই, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। সত্যজিৎ-পুত্র সন্দীপ রায়ের অনুমতিক্রমেই এ ছবি বানানো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন অনীক। 'অপরাজিত' মুক্তি পাবে ১৩ মে। ছবির মূল চরিত্র অপরাজিত রায়ের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন জিতু কমল। পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, সায়নী ঘোষ-সহ আরও অনেকেই আছেন এই ছবিতে।
ছবিটিতে আগে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করার কথা ছিল আবির চট্টোপাধ্যায়ের। তবে পরে তার বদল ঘটে। লুক সামনে আসতেই হতবাক সকলে। এ যেন অবিকল সত্যজিৎ রায়! সেই স্টাইল, সেই চাহনি, হাতে সিগারেট ধরার ধরন, সবটা এতটাই নিখুঁত যে এক নজরে অনেকেই 'রিলের' সত্যজিতকে রিয়েল লাইফের সঙ্গে ভুল করতে পারেন।
লুক পারফেক্ট করতে জিতুর গালে ও থুতনিতে প্রস্থেটিক মেকআপের সাহায্য নেওয়া হয়েছে। গালে দাগ, গায়ের রঙ বদলে শ্যামলা, চিবুকে বড় আঁচিল। তবু মন ভরেনি জিতুর। মানিক বাবুর সঙ্গে আরও মেলাতে পাল্টে ফেলেছেন নিজের দাঁতের পাটি।
এসব কথা কিন্তু অভিনেতা নিজে প্রকাশ করেন নি। সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি আবেগপ্রবণ পোস্ট করে বিষয়টি সবার সামনে এনেছেন জিতু কমলের স্ত্রী নবনীতা।
নবনীতার কথায়, ''তখন জুলাই কি আগস্ট। জিতুই সত্যজিৎ হবেন, সদ্য ঠিক হয়েছে। দু'জনের চেহারায় কী করে মিল আনা যায়, সেই আলোচনাও চলছে। জিতু পরিচালকের ঝলক, সাক্ষাৎকার দেখছে। তখনই মনে হয়েছে, পরিচালকের সঙ্গে দাঁতের পাটিতে একটুও মিল নেই ওর! সত্যজিতের দাঁতে অনেকটাই ফাঁক। জিতুর দাঁতের পাটিতে তুলনায় বেশ কম ফাঁক। একইসঙ্গে একটু উঁচুনিচু।'' এ কথা জিতুকেও বলেন কয়েকজন। অভিনেতা কাউকে কোনও উত্তর দেননি। বাড়িতেও কিচ্ছু জানাননি। চুপচাপ চলে যান দন্তচিকিৎসকের কাছে।
সেখান থেকে ভিডিও তুলে পাঠান নবনীতাকে। নবনীতা সেই ভিডিও দেখতে দেখতে শিউরে উঠেন। তার নিজের আক্কেল দাঁত তোলার অভিজ্ঞতা রয়েছে। সেসময় তাকে মাড়িতে ইনজেকশন নিতে হয়েছিল। সেই রকম ইনজেকশন জিতুকে নিতে হয়েছে কয়েকটি। মাড়িতে এবং ঠোঁটে। তারপর ড্রিল মেশিন দিয়ে ঘষে ঘষে ফাঁক করা হয়েছে অভিনেতার দাঁত। একটু করে ড্রিল মেশিন চলেছে। মাড়ি কেটে রক্ত পড়েছে গলগলিয়ে। জিতু পাশের বেসিনে উঠে গিয়ে একবার করে জমে থাকা রক্ত ফেলেছেন। আবার এসে বসেছেন নিজের আসনে। সব দেখে ভয়ে হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যায় অভিনেতার স্ত্রীর।
এভাবে বেশ কয়েক বার গিয়ে অবশেষে দাঁতের পাটির দিক থেকেও অবিকল সত্যজিৎ হয়ে ওঠেন এই প্রজন্মের অভিনেতা। বরফ সেঁক দিতে দিতে ধীরে ধীরে ফোলা, ব্যথা সব কমেছে।
দাঁতের পাটির পরিবর্তনের হাত ধরে আরও অনেক বদল এসেছে জিতুর জীবনে। পর্দার 'অপরাজিত রায়' এখন আর শক্ত খাবার খেতে পারেন না। পাঁঠার মাংসের হাড় চিবোনোর সুখ তার জীবনে অতীত! লেবু রস করে খেতে হয়। যাতে দাঁতের ফাঁকে কোনভাবে আঁশ না আটকে যায়। মুরগির মাংসও নরম করে রান্না হচ্ছে তার জন্য। ডাঁসা পেয়ারায় কামড় বসানো এ জীবনে আর হবে না। খাওয়াদাওয়ায় এত কড়াকড়ি কেন? নবনীতা জানিয়েছেন, ড্রিল মেশিনের দাপটে মাড়ি দুর্বল হয়ে গেছে। এদিকে নীচ থেকে ক্যাপ বসানো হয়েছে দাঁতে। শক্ত খাবার খেলে সেই ক্যাপ মাড়িতে কেটে বসবে। রক্তপাত হবে। তাই এত বিধিনিষেধ।
- সূত্র- আনন্দবাজার পত্রিকা, হিন্দুস্তান টাইমস