বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন বোর্ড চালু, সেন্সর বোর্ড বিলুপ্ত
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড বিলুপ্ত করার বিষয়ে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের ক্রমাগত অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) 'বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন বোর্ড' প্রতিষ্ঠা করেছে অন্তবর্তী সরকার।
রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে ১৫ সদস্যের নতুন সার্টিফিকেশন বোর্ড কমিটি প্রকাশ করে রোববার তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় থেকে এক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
সেন্সর বোর্ড ও সার্টিফিকেশন বোর্ডের মূল পার্থক্য হলো, সেন্সর বোর্ডের কাজ ছিল সিনেমা মুক্তির অনুমোদন দেওয়া। এজন্য তারা কোনো কোনো দৃশ্য কাটতে বা পুনরায় শুট করতে বলতে পারত। তাদের শর্ত না মানলে, সিনেমার মুক্তি আটকানোর ক্ষমতাও ছিল।
অন্যদিকে, সার্টিফিকেশন বোর্ড সিনেমাগুলোর মান যাচাই করে সেগুলো নির্দিষ্ট দর্শকদের জন্য মুক্তির অনুমোদন দেয়। কিছু সিনেমা শুধু প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য অনুমোদিত হয়, যা প্রদর্শনের সময়ও প্রভাবিত করতে পারে। আবার কিছু সিনেমা সবার জন্য মুক্তির অনুমোদন পায়, যেগুলোর ওপর কোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞা থাকে না।
এ ব্যবস্থা শিল্পের সৃজনশীলতা রক্ষা করার জন্য তৈরি, যেখানে বোর্ডের সদস্যদের সিনেমার চূড়ান্ত বিষয়বস্তু নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়ার অধিকার থাকে না।
এর আগে, ১৫ সেপ্টেম্বর অন্তর্বর্তী সরকার সেন্সর বোর্ডের সংস্কার করে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে চেয়ারম্যান করে এবং বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যানকে সদস্য সচিব করে।
একই কর্মকর্তারা সদ্য চালু হওয়া সার্টিফিকেশন বোর্ডের পদগুলো গ্রহণ করবেন এবং পুরো বোর্ড কর্মকর্তাদের এখন সার্টিফিকেশন বোর্ডের কর্মকর্তা হিসেবে স্থানান্তরিত করা হবে।
অভিনেত্রী কাজী নওশাবা আহমেদ, প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা খিজির হায়াত খান, চলচ্চিত্র নির্মাতা-চলচ্চিত্র গবেষক ও শিক্ষাবিদ জাকির হোসেন রাজু, লেখক-চিত্রনাট্যকার ও চলচ্চিত্র নির্মাতা তাসমিয়া আফরিন মৌ, চলচ্চিত্র প্রযোজক-লেখক-পরিচালক রফিকুল আনোয়ার রাসেল, প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ও বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি কাজী হায়াৎ, চলচ্চিত্র প্রযোজক জাহিদ হোসেন, চলচ্চিত্র সম্পাদক ইকবাল এহসানুল কবির, আইন ও বিচার বিভাগের সিনিয়র সচিব/সচিব, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের প্রেস সচিব, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (চলচ্চিত্র), স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন প্রতিনিধি এবং বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নতুন বোর্ডের সদস্য হবেন।
সেন্সর বোর্ড বিলুপ্ত করে যথাযথ সার্টিফিকেশন বোর্ড গঠনের দাবি দেশের চলচ্চিত্র নির্মাতা, শিল্পী ও চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের দীর্ঘদিনের দাবি। অতীতে বোর্ডের সিদ্ধান্তে দেশের বেশ কয়েকজন চলচ্চিত্র নির্মাতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন; যেমন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, যিনি বছরের পর বছর ধরে তার 'শনিবার বিকেল' ছবির সেন্সরশিপ নিয়ে লড়াই করেছেন।
ছাত্র-নেতৃত্বাধীন গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে পূর্ববর্তী শাসনের পতনের পরে, চলচ্চিত্র শিল্পের পেশাদাররা পূর্ববর্তী সেন্সর বোর্ডের সংস্কার এবং একটি নতুন সার্টিফিকেশন বোর্ড প্রতিষ্ঠার জন্য জোরালো অনুরোধ করেছিলেন।
১৯৬৩ সালের 'সেন্সরশিপ অব ফিল্মস অ্যাক্ট'-এর আওতায় ১৫ সেপ্টেম্বর সেন্সর বোর্ড পুনর্গঠনের বিপক্ষে সোচ্চার হন বেশ কয়েকজন চলচ্চিত্র নির্মাতা, প্রযোজক ও চলচ্চিত্র সংগঠক।
পরবর্তীতে 'বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন আইন, ২০২৩' এর ধারা ৩ এর উপধারা (১) অনুযায়ী নতুন সার্টিফিকেশন বোর্ড গঠন করা হয়েছে।