অভিনয়ের কারণেই আমি পূর্ণতা পেয়েছি: রিয়াজ
সাম্প্রতিক সময়ে অভিনয়ে কমই দেখা গেছে দেশের জনপ্রিয় চিত্রনায়ক রিয়াজ আহমেদকে। তবে অভিনয়ে বিরতি থাকলেও কোয়ালিটি সম্পন্ন কাজ দিয়েই মাঝেমাঝে দর্শকের সামনে আসেন তিনি। গত ১৭ মার্চ মুক্তি পেয়েছে অনন্য মামুন পরিচালিত সিনেমা 'রেডিও', যেটির কেন্দ্রীয় একটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন রিয়াজ।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণকে উপজীব্য করে তৈরি হয়েছে সিনেমার গল্প। এতে রিয়াজ 'নহবত মাস্টার' নামের গ্রাম্য এক স্কুল শিক্ষকের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। সিনেমায় তিনি সবাইকে নানাভাবে সচেতন করে দেশপ্রেমে উৎসাহী করে তোলেন। সেই সঙ্গে এলাকার প্রতিবাদী কণ্ঠস্বরও তিনি। তিনি গণমানুষের কথা বলেন, বঙ্গবন্ধুর কথা বলেন, সবাইকে নেতৃত্ব দেন স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখতে। এভাবেই এগিয়ে যায় রিয়াজের চরিত্রটি।
অল্প সংখ্যক প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেলেও সিনেমাটি নিয়ে বেশ ইতিবাচক আলোচনা চলছে। সিনেমাটি মুক্তির পর রিয়াজ এটি নিয়ে ব্যক্তিগত অনুভূতি শেয়ার করেছেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-এর সঙ্গে।
সিনেমার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "একটি নতুন বিষয়কে সামনে রেখে সিনেমাটি তৈরি করা হয়েছিল। এ ধরনের সিনেমায় অভিনয় করার জন্য তাই অনুপ্রেরণাও থাকে ভালো। এ সিনেমায় অভিনয় করে আমি গর্বিত; কারণ এটি এমন একটি ইতিহাস , যা আমাদের জাতীয় জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। সিনেমাটি মুক্তির পর থেকে দর্শকের কাছে থেকে বেশ ভালো সাড়া পাচ্ছি। স্বাধীনতার মাসে মুক্তি পাওয়ায় অন্যরকম একটা ভালো লাগাও কাজ করছে। এ ধরনের গল্পের সিনেমায় অভিনয়ের জন্য আমি সব সময়ই প্রস্তুত আছি।"
এর আগে রিয়াজ সর্বশেষ ২০২২ সালে 'অপারেশন সুন্দরবন' সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন। দীপংকর দীপনের পরিচালিত এ চলচ্চিত্রে রিয়াজ একজন র্যাব অফিসারের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। এখানেও রিয়াজের অভিনয় প্রশংসিত হয়েছিল।
বর্তমান সময়ে অভিনয়ের চেয়ে চলচ্চিত্র সংক্রান্ত সাংগঠনিক কাজেই বেশি ব্যস্ত রয়েছেন এই চিত্রনায়ক। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। এছাড়া রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডেও তার উপস্থিতি রয়েছে।
সম্প্রতি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের জন্য সরকারিভাবে জুরি বোর্ড গঠন করা হয়েছে। তৃতীয়বারের মতো এই কমিটির সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন রিয়াজ।
অন্য অনেকের তুলনায় রিয়াজের অভিনয় জগতে পদার্পণ ছিল একটু আলাদা। শুরুতে পেশায় ছিলেন বৈমানিক; বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে চাকরি করতেন। কিন্তু সিনেমার প্রতি অদম্য ভালোবাসাও লালন করতেন মনে মনে। ছোটবেলা থেকেই পরিবারের সদস্যদের এই অঙ্গনে কাজ করতে দেখতেন। তার চাচাতো বোন চিত্রনায়িকা সুচন্দা, ববিতা ও চম্পা। এ দের তারকাখ্যাতি রিয়াজকে সিনেমার দিকে ঝুঁকতে প্রলুদ্ধ করেছে।
অভিনয় জীবনের শুরুতে তাদের কাছ থেকে পরামর্শ ও সহযোগিতাও পেয়েছেন রিয়াজ। তাছাড়া চিত্রনায়ক সালমান শাহের অকাল মৃত্যুর পর ঢাকাই চলচ্চিত্রে রোমান্টিক নায়কের শূন্যতা তৈরি হয়। ঠিক সেই সময়েই রিয়াজের অবির্ভাব ঘটে। ১৯৯৫ সালে দেওয়ান নজরুল পরিচালিত 'বাংলার নায়ক' সিনেমায় অভিনয়ের মাধ্যমে রিয়াজের চলচ্চিত্র অভিষেক ঘটে।
এরপর বেশ কয়েকটি সিনেমায় রিয়াজকে পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয়ে দেখা গেলেও, ১৯৯৭ সালে মহম্মদ হান্নান পরিচালিত ' প্রাণের চেয়ে প্রিয়' সিনেমায় কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পান তিনি। সিনেমাটি ব্যবসাসফল হওয়ার পাশাপাশি রিয়াজের অভিনয়ও বেশ প্রশংসিত হয়। এরপর থেকে রোমান্টিক নায়ক হিসেবে একেরপর এক সিনেমায় অভিনয় করে দর্শকের ভালোবাসার নায়কে পরিণত হন রিয়াজ।
২০০০ সালে হুমায়ূন আহমেদের পরিচালনায় নির্মিত 'দুই দুয়ারী', ২০০৭ সালে তৌকীর আহমেদের পরিচালনায় 'দারুচিনি দ্বীপ' এবং ২০০৮ সালে চন্দন চৌধুরীর পরিচালনায় 'কি যাদু করিলা' সিনেমায় অভিনয় করে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন রিয়াজ।
এছাড়াও, টিভি নাটকেও রিয়াজের জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী। প্রখ্যাত লেখক ও নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের 'হাবলঙ্গের বাজার' নাটক দিয়ে তার টিভি নাটকের অভিনয় শুরু হয়। এরপরে হুমায়ূন আহমেদের একাধিক নাটকের পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন রিয়াজ।
বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের ভূমিকা ও কর্ম জীবন নিয়ে নির্মিত ডকুড্রামা 'অগ্নিবলাকা'য় মতিউর রহমানের চরিত্রে অভিনয় করে প্রশংসিত হন তিনি। এখনও মাঝেমাঝে টিভি নাটকে অভিনয় করতে দেখা যায় তাকে।
অভিনয়ের পাশাপাশি প্রযোজক হিসেবেও কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে রিয়াজের। তারই প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে এসএ হক অলিকের পরিচালনায় 'হৃদয়ের কথা' নামের একটি সিনেমা নির্মাণ করেন। এই ছবিতে প্রধান চরিত্রে অভিনয়ও করেন তিনি। সিনেমাটি ব্যবসায়িকভাবে সফল হওয়ায় এই মাধ্যমে আরও কয়েকটি কাজ করেন রিয়াজ।
বর্তমানে একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থার কর্ণধার রিয়াজ। আজকাল নিজের প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনার কাজ নিয়েই বেশি ব্যস্ত থাকছেন তিনি।
জীবনের এ পর্যায়ে এসে নিজেকে নিয়ে মূল্যায়ন করতে গিয়ে রিয়াজ বলেন, "হয়ত চাকরির পেশায় যদি থাকতাম তাহলে এত মানুষ চিনতোও না, আবার মানুষের কাছ থেকে এত ভালোবাসাও পেতাম না। অভিনয়ের কারণেই আমি পূর্ণতা পেয়েছি। তাই এ অঙ্গনেই নিজেকে যুক্ত রেখে জীবনটা এগিয়ে নিতে চাই।"