'অ্যাসিস্টেড সুইসাইড'-এর মাধ্যমে মৃত্যুবরণ করেছেন জঁ-লুক গদার
জীবদ্দশায় ক্যামেরার পেছনে শেষ কথা বলতেন তিনিই। নিজের মৃত্যুর সিদ্ধান্তেও তিনিই শেষ কথা বলেছেন। 'অ্যাসিস্টেড সুইসাইড'-এর মাধ্যমে নিজের জীবনের ইতি টেনেছেন ফরাসি-সুইস চলচ্চিত্র নির্মাতা জঁ-লুক গদার। মঙ্গলবার গদারের মৃত্যুর পর এ তথ্য জানিয়েছেন তার দীর্ঘদিনের আইনি পরামর্শদাতা প্যাট্রিক জঁনেরেত।
মঙ্গলবার সুইৎজারল্যান্ডে ৯১ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন গদার। দীর্ঘদিন যাবত বার্ধক্যজনিত নানা রোগব্যধিতে ভুগছিলেন ফরাসি নিউ ওয়েভ সিনেমার এই অন্যতম পুরোধা। দ্য গার্ডিয়ানে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, সংবাদ সংস্থা এএফপিকে প্যাট্রিক জানিয়েছেন যে চিকিৎসকদের সহায়তায় নিজের জীবনে ইতি টানার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন গদার নিজেই। প্যাট্রিক বলেন, ''গদারের মেডিকেল রিপোর্ট অনুযায়ী, একাধিক শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। সে কারণে স্বেচ্ছায় প্রস্থানের জন্য সুইজারল্যান্ডে আইনি সহায়তা নেওয়ার পথে এগিয়েছিলেন।''
বিশ্বের অসংখ্য দেশেই স্বেচ্ছামৃত্যুতে সায় দেয় না সরকার। তবে সুইজারল্যান্ডে কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে বিবেচনাধীনভাবে 'অ্যাসিস্টেড সুইসাইড' বা চিকিৎসকদের সহায়তায় জীবনের ইতি টানাটা আইনত বৈধ। প্যাট্রিক জানিয়েছেন, সে পথই বেছে নিয়েছেন গদার।
ফরাসি সংবাদপত্র 'লিবারেশন' গদারের পরিবারের সাথে ঘনিষ্ঠ এক সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, সূত্রের ভাষ্য- "গদার শুধু অসুস্থই ছিলেন না, তিনি সম্পূর্ণ নিঃশেষ হয়ে গিয়েছিলেন। তাই তিনি নিজের জীবনাবসানের সিদ্ধান্ত নেন। এটা একান্তই তার নিজের সিদ্ধান্ত ছিল এবং তিনি চেয়েছিলেন এ বিষয়টি সবাই জানুক।"
জঁ-লুক গদারকে বলা হয় বিশ্ব চলচ্চিত্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পরিচালক। চলচ্চিত্রের নির্মাণ কৌশলের দিক থেকে আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসেন গদার। ১৯৬০ সালে তার প্রথম চলচ্চিত্র 'ব্রেথলেস' মুক্তির পর বিশ্ববাসীর নজরে আসেন তিনি।
ষাটের দশক থেকে সিনেমা নিয়ে গদারের নিরন্তর পরীক্ষা-নিরীক্ষা বহু পরিচালককে অনুপ্রেরণা দিয়েছিল। চলচ্চিত্রে নতুন যুগের সূচনা করেছিলেন গদার। তার বানানো একের পর এক চলচ্চিত্র ফরাসি চলচ্চিত্রের অচলায়তন ভেঙে দিয়েছিল। চিরাচরিত পারিপাট্য, চিত্রায়ণের ব্যাকরণকে ধাক্কা দিয়েছিল গদারের হ্যান্ডহেল্ড ক্যামেরার কাজ। 'জাম্প কাট' সৃষ্টির জন্য সিনেমা তার কাছে চিরকাল ঋণী হয়ে থাকবে।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান