‘প্যারাসাইটে’ দক্ষিণ কোরিয়ার বাস্তব জীবন
ইংরেজি ভাষার বাইরের প্রথম চলচ্চিত্র হিসেবে অস্কারে সেরা হয়ে ইতিহাস গড়েছে বং জুন-হু পরিচালিত ‘প্যারাসাইট’। ধনী পার্ক ও গরিব কিম- এই দুই পরিবারের গল্প দেখিয়ে এশিয়ার চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ দক্ষিণ কোরিয়ার বিত্ত-বৈষম্যের ওপর আলো ফেলেছে এটি।
‘ময়লা চামচ’ মুখে নিয়ে জন্মানো একেবারেই হতদরিদ্র মানুষের সঙ্গে ‘সোনার চামচ’ মুখে জন্মানো অতি ধনীদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্যের অনুরণন ঘটেছে চলচ্চিত্রটিতে।
এটির বেশির ভাগ শুটিং বানিয়ে নেওয়া সেটে করা হলেও, পার্ক পরিবারের জমকালো অট্টালিকা ও কিম পরিবারের নোংরা ‘সাব-বেজমেন্ট’ অ্যাপার্টমেন্টটির সেট দেশটির রাজধানী সিউলের বাস্তব লোকেশনেই ফেলেছেন পরিচালক।
‘প্যারাসাইট’-এর লোকেশন, প্রপস ও ব্যাকড্রপগুলো এমন কিছু অনুপম তাৎপর্য ফুটিয়ে তুলেছে, যেগুলো অনেক দক্ষিণ কোরিয়ানের কাছেই তিক্ত সত্য। এ রকম বাস্তবচিহ্নের সন্ধান দিয়েছে রয়টার্স।
বস্তি অঞ্চল
সিউলের শহরতলির কাছাকাছির শেষ বস্তি এলাকাগুলোর একটি আহিয়োন-দং। কিম পরিবারের নিম্নবর্গীয় প্রতিবেশিদের দৃশ্যগুলোতে এখানকার মানুষগুলোকেই হাজির করেছেন পরিচালক বং।
প্রধান রেল স্টেশনের কাছাকাছি, পাহাড়ের কোলের এই ঘন বসতিপূর্ণ বস্তির রাস্তাগুলো খুবই সরু। সেই পথ ধরে, দীর্ঘ সিঁড়ি বেয়ে নিজ নিজ খুপড়িতে আসা-যাওয়া করতে হয় অধিবাসীদের। ‘প্যারাসাইট’-এ পিগ রাইস সুপারমার্কেটের অন্যতম সত্বাধিকারী হিসেবে অভিনয় করা ৭৭ বছর বয়সী লি জিয়োং-সিক জানালেন, ‘চলচ্চিত্রটি দেখার পর মনে হলো, তারা যেন আমার জীবনকে ওখানেই গেথে দিয়েছে।’
স্বামী লির সঙ্গে ৪৫ বছর ধরে দোকানটি চালান কিম কিয়ুং-সুন। ৭৩ বছর বয়সী এই নারী জানালেন, সুপারমার্কেটটি তিনি ভোর সাড়ে ৮টায় খোলেন, আর তার স্বামী সেটি বন্ধ করেন মাঝরাতে।
চলচ্চিত্রটিতে কিম পরিবার যে ‘সাব-বেজমেন্ট’টিতে থাকে, সে রকম ছোট ও অন্ধকারাচ্ছন্ন অ্যাপার্টমেন্টগুলো মূলত ভূগর্ভস্থেই বানানো হয়। অধিবাসীরা জানালেন, এ ধরনের সাব-বেজমেন্ট অ্যাপার্টমেন্টগুলোর ভাড়া গত ১০ বছরে দ্বিগুণেরও বেশি বেড়ে এখন মাসে প্রায় ৩৪০ ডলার বা ২৯ হাজার টাকায় দাঁড়িয়েছে।
সিউলের ‘বেভারলি হিলস’
অন্যদিকে, ধনী পার্ক পরিবারের দৃশ্যগুলোর শুট করা হয়েছে সিয়োংবুক-দং অঞ্চলে। দক্ষিণ কোরিয়ার ‘বেভারলি হিলস’ নামে পরিচিত এই অভিজাত অঞ্চলে দেশটির বড় বড় ব্যবসায়ী ও কূটনীতিক পরিবারের বসবাস।
এখানকার রাস্তাঘাটের চেহারাও আহিয়োন-দংয়ের উল্টো। কোনো ময়লা নেই; সোরগোলও তেমন নেই। বেশিরভাগ বাড়িতেই রয়েছে উঁচু সীমানাপ্রাচীর, সুরক্ষার বেড়া এবং সিকিউরিটি ক্যামেরা।
পিস এস্টেট এজেন্টসের সিইও চুং হান-সুল জানালেন, এখানকার সব বাড়িই বিলাসবহুল। বেশিরভাগ বাড়ির বেজমেন্টগুলো ঘরোয়া পানশালা কিংবা মিনি থিয়েটার হিসেবে ব্যবহার করেন অধিবাসীরা।
রিয়েল এস্টেট ব্রোকারদের তথ্য অনুযায়ী, এ অঞ্চলের একেকটি বাড়ির দাম গড়ে ৬ মিলিয়ন ডলার বা ৫১ কোটি টাকা। বিদেশি কূটনীতিকদের কাছে বাড়ি ভাড়া দেওয়া হয় মাসিক গড়ে ৭ লাখ ২৫ হাজার থেকে ১০ লাখ ৭৫ হাজার টাকায়।