বোট ক্লাবের ঘটনার পর পরীমনির প্রতি শ্রদ্ধা জাগে: অরণ্য আনোয়ার
'নুরুল হুদা একদা ভালোবেসেছিল', 'আমাদের নুরুল হুদা'সহ বেশ কিছু নাটক নির্মাণ করে আলোচনায় এসেছিলেন জনপ্রিয় নাট্যনির্মাতা অরণ্য আনোয়ার। সম্প্রতি চলচ্চিত্র নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। 'মা' নামের একটি চলচ্চিত্রের শুটিং শুরু করেছেন তিনি। গাজীপুরের কাপাসিয়ার একটি গ্রামে ১৯৭১ সালের পাক বাহিনীর সেট বানিয়ে চলছে শুটিং। সেখানে বসেই কথা বলেছেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সাথে।
প্রশ্ন: আপনার প্রথম চলচ্চিত্র 'মা'। সেটা নিয়ে বিস্তারিত জানতে চাই।
অরণ্য আনোয়ার: আমার প্রথম সিনেমা বানানোর কথা ছিলো এগারো বছর আগে। সব প্রস্তুতি ছিলো। মহরতের দিন জটিলতা হয়। ওই সময় আমার সিনেমার অভিনেত্রী ছিলেন শাবনূর। তখন শাবনূর জানা্ন, ৩৫ মিলিমিটার ছাড়া তিনি শুটিং করবেন না। এ কারণে তখন সিনেমাটি হয়নি। কিন্তু দুঃখজনক হলো সেই ৩৫ মিলিমিটারে এখন আর কোথাও কাজ হয় না। সব এখন ডিজিটাল। এই যেমন আমি এলেক্সা ক্যামেরায় শুটিং করছি।
এবার ছবি নিয়ে বলি, মা সিনেমাটা একটা শিশুকে কেন্দ্র করে। যেখানে আমরা দেখব শিশুটা মারা গেছে কিন্তু তার মা কোনোভাবেই বিশ্বাস করে না সে মারা গেছে। তখন দেশে যুদ্ধ চলছে। এদিকে শিশুটি মারা গেছে ভেবে গ্রামবাসী দাফন করার প্রস্তুতি নেয়। কিন্তু মা তাকে দাফন করতে দেবে না। সব মিলিয়ে একটা জটিলতা সৃষ্টি হয়। এই জটিলতা এবং মুক্তিযুদ্ধ প্রেক্ষাপট নিয়েই আমাদের সিনেমার গল্প চলতে থাকে।
প্রশ্ন: ছবিতে পরীমনি কোন চরিত্রে অভিনয় করছেন?
অরণ্য: যে শিশুটিকে নিয়ে গল্প তার মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন পরীমনি। মা ও সন্তানের গল্পটাই দর্শক পর্দায় দেখবেন।
প্রশ্ন: ছবিতে পরীমনিকে নেওয়ার কারণ কি?
অরণ্য: বোট ক্লাবের ঘটনার পর পরীমনির প্রতি আমার একটা শ্রদ্ধা জন্মেছিল । এর আগে পরীমনি সম্পর্কে আমার কোনো ধারণা ছিলো না। তার ওই প্রতিবাদী হওয়ার ঘটনাটা তার প্রতি শ্রদ্ধা বাড়িয়ে দেয়। নায়িকা বা অভিনেত্রী নয়, একটা প্রভাবশালী মহলের সঙ্গে নিজের অবস্থানের জায়গাটা ঠিক রাখার জন্য যে সাহসটা দেখিয়েছেন সেটা আমাকে শ্রদ্ধাশীল করেছে। তারপর যখন তিনি জেলে যা্ন এবং সবার যে রিঅ্যাকশন দেখেছি সেটাও কাজ করেছে। তবে তার আগে এই চরিত্রের জন্য রুনা খান, নওশাবা ও অর্ষার সঙ্গে কথা হয়েছে। কিন্তু ফাইনালি আমরা পরীমনিকে নিয়েছি।
প্রশ্ন: আপনি দীর্ঘদিন নাটক বানিয়েছেন। এটাই প্রথম চলচ্চিত্র। আপনার কাছে কি মনে নাটকের ও চলচ্চিত্রের ভাষা আলাদা?
অরণ্য: আমি তো নাটকের মতো করেই ভেবেছিলাম। কিন্তু করতে এসে দেখলাম পুরোপুরি আলাদা। আমি এখন শিখছি। আমার ডিওপি, সেট ডিজাইনার, লাইন প্রডিউসার সবার কাছ থেকে শিখছি। এখন প্রতিনিয়ত ফিল করছি পুরোপুরি আলাদা।
প্রশ্ন: সিনেমাটির শুটিং শেষ করে কবে নাগাদ মুক্তি দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন?
অরণ্য: এখন সিনেমার একটা অংশের শুটিং হচ্ছে। জানুয়ারিতে আরেকটা অংশের শুটিং হবে। ওই সময় পরীমনি অংশ নেবেন। তবে এটা শেষ করে আমরা এডিটে বসবো। তারপর আমাদের বেশকিছু জটিল কাজ আছে। ১৯৭০ সালের ব্রিজের একটা সেট তৈরি করতে হবে। পোস্টে সেই ব্রিজে উড়িয়ে দেয়ার কাজ আছে। পেছনে যে আর্মি ক্যাম্প বানানো হয়েছে সেটা উড়িয়ে দেয়ার কাজ আছে।
প্রশ্ন: সিনেমার অন্যান্য চরিত্রে কে কে অভিনয় করছেন?
অরণ্য: অনেকেই অভিনয় করছেন। পরীমনি তো মায়ের চরিত্রটা করছে। তার শ্বশুরের চরিত্রে অভিনয় করছেন শাহাদাত হোসেন। তিনি একজন ডাক্তার। গ্রামের সবার চিকিৎসা করেন। গ্রামে যখন পাকিস্থানী আর্মি ক্যাম্প করা হয়, তখন তাকে শুধু সেখানেই চিকিৎসা করানোর জন্য আর্মির দায়িত্ব দেয়। মমিনুল হুজুর বলে একটা চরিত্র আছে, সে গ্রামের রাজাকার। এটা করছে সাজু খাদেম। তার তিনটি স্ত্রী, প্রথম স্ত্রীর চরিত্রে মোমেনা চৌধুরী, দ্বিতীয় স্ত্রীর চরিত্রে রোবেনা রেজা জুই এবং তৃতীয় স্ত্রীর চরিত্রে লাবণ্য চৌধুরী। আর পাকিস্থানী আর্মির মেজর হিসেবে অভিনয় করেছন আবুল কালাম আজাদ।
প্রশ্ন: এটাকে কি আমরা মুক্তিযুদ্ধের ছবি বলব নাকি মায়ের যে যুদ্ধ, সেই ছবি বলবো?
অরণ্য: দুইটার একটাও না। এটা আসলে বাংলাদেশের ছবি। ওই সময়ের বাংলাদেশ দেখানো হবে। শিশুটির মধ্য দিয়ে আমরা ওই সময়ের বাস্তব চিত্রটা তুলে এনেছি।
প্রশ্ন: যতদূর জানি সিনেমার চিত্রনাট্য ও পরিচালনা আপনার। প্রযোজনা করছে কে এবং সিনেমাটির বাজেট কত?
অরণ্য: একদম ঠিক। গল্পটি আমার। আর প্রযোজক হিসেবে আমি ও আমার বন্ধু পুলক কান্তি বড়ুয়া আছেন। বাজেটের ব্যাপারটা একটু বলা দরকার। শুরুতে আমরা ভেবেছিলাম এটা ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকার মধ্যে হয়ে যাবে। কিন্তু মাঠে নেমে দেখছি, বাজেট এক কোটির বেশি লাগবে। সেভাবেই আগাচ্ছি।