বিয়েতে বিশ্বাস করি না: সালমান খান
'বিয়ে কবে করছেন?'- এতবছর ধরে এই একটি প্রশ্ন বারবার করা হয়েছে বলিউড অভিনেতা সালমান খানকে; তবে তিনিও তা এড়িয়ে গেছেন স্বভাবসিদ্ধ সেন্স অফ হিউমারের জোরে।
অন্যদিকে শোনা যাচ্ছে, আগামী মাসেই ভিকি কৌশলের সাথে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে যাচ্ছেন সালমানের প্রাক্তন প্রেমিকা ক্যাটরিনা কাইফ।
এই জুটি এখনো মুখে কিছু স্বীকার না করলেও, ইতোমধ্যেই তাদের বিয়ের ভেন্যু থেকে অতিথির তালিকা পর্যন্ত ফাঁস হয়ে গেছে!
এর মাঝে সোশ্যাল মিডিয়ায় নতুন করে ভাইরাল হওয়া এক ভিডিওতে দেখা গেছে, বদলে গেছে বিয়ের পাত্র! ভিকি নয়, সালমানের গলায় মালা পরিয়ে দিচ্ছেন ক্যাট।
কোনো এক সিনেমার শ্যুটিংয়ের সে দৃশ্য নেটমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই সালমান ভক্তরাও নতুন করে 'ভাইজানের' বিয়ের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন।
আরও পড়ুন- ভিকিকে ছেড়ে সালমানকে বিয়ে করছেন ক্যাটরিনা!
কবে বিয়ে করছেন সাল্লুভাই?- ভারতীয় গণমাধ্যম 'আনন্দলোক'-কে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে সালমান দিয়েছেন তারই উত্তর। গত বছর প্রকাশিত সে সাক্ষাৎকারের কিছু অংশ তুলে ধরা হলো এখানে-
'ভারত' সিনেমার প্রচারে আপনি আর ক্যাটরিনা পরস্পরের ব্যাপারে বলেছিলেন, আপনাদের নাকি এই ছবির জন্য জাতীয় পুরস্কার পাওয়া উচিত…
আমার কথা জানি না, কিন্তু ক্যাটরিনার সত্যিই পাওয়া উচিত। কিন্তু ক্যাটরিনা আমার উপর বেজায় রেগে আছে, জানেন তো? ওর বক্তব্য, ওর পুরস্কার পাওয়ার কণামাত্র সম্ভাবনা থাকলেও আমি নাকি বলে-বলে সেটা নষ্ট করে দিয়েছি।
কিন্তু সমালোচকরা তো অত প্রশংসাও করছেন না... আপনি রিভিউ পড়েন?
পড়ি। কে কী লেখে, কীরকমভাবে লেখে, মোটামুটি সবই জানি। কিন্তু দর্শক কি রিভিউ পড়ে সিনেমা দেখতে যান? আমার মনে হয় না। তবে আজকাল ডিজিটাল মিডিয়ার যুগে হয়তো অনেকে রিভিউ পড়ে হলে যান। এত সিনেমা মুক্তি পায়। কিন্তু লোকের পকেটে টাকা সীমিত। ফলে তাদেরও বেছে নিতে হয় কোন ছবি দেখতে যাবেন।
রিভিউয়ের ক্ষেত্রে একটা কথা বলব। আমার ছবি কোনওদিনই ভাল রিভিউ পায় না। সমালোচকদের কাছ থেকে আমার কোনও প্রত্যাশা নেই। কিন্তু অনেক সমালোচক লিখে দেন, 'অমুক ছবি দেখে সময় নষ্ট করবেন না', 'তমুক ছবি দেখলে পয়সা নষ্ট করবেন...' যদি ধরে নিই ১০-১৫ শতাংশ লোক রিভিউ পড়ে সিনেমা দেখতে যান, তাহলেও এরকম একটা রিভিউয়ের জন্য ছবির ব্যবসা ১০-১৫ শতাংশ কমে গেল! একটা ২০-২৫ কোটি টাকার ছবির ক্ষেত্রে এই ১০-১৫ শতাংশটা কত বড় অঙ্ক বলুন তো? এই সমালোচকরা ছবি বানাননি সারাজীবনে। যারা পরবর্তীকালে বানিয়েছেন, তারাও জঘন্য ফিল্মমেকার হয়েছেন। ভাল-খারাপ লিখতেই পারেন। তা বলে দর্শককে সিনেমা দেখতে বারণ করবেন কেন?
আচ্ছা, ঈদে ছবি রিলিজ করা নিয়ে আপনার এত জোরাজুরি কেন?
আমি তো অন্য সময়ও ছবি রিলিজ় করি। তবে মানুষ এখন এত ব্যস্ত যে, উৎসবের মৌসুম ছাড়া পরিবার নিয়ে সময় কাটানো বোধহয় সবার পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে না। তাই আর কী... আর হিসেব বলে ঈদে আমার ছবি ভাল ব্যবসা দেয়।
আপনি বলেছেন, অন্য অভিনেতাদের ছবির তুলনায় আপনার ছবির ব্যবসা অনেক বেশি। আপনার মতে এটার কারণ কী?
আমার মনে হয়, আমি যে চরিত্রটা পর্দায় ফুটিয়ে তুলছি, সে আমার নিজের হিরো হওয়ার মতো। একজন ভাল মনের মানুষ... তার মধ্যে মনুষ্যত্ব আছে। আমার চোখেই যদি চরিত্রটা হিরো না হয়, তাহলে দর্শকের চোখে হবে কী করে? এই কারণেই আমি কোনোদিন পুরোপুরি ডার্ক চরিত্রে অভিনয় করব না। আমি নিজেই আমার পছন্দের অভিনেতাকে খারাপ মানুষ হিসেবে স্ক্রিনে দেখতে পছন্দ করি না।
এই জন্যই কি একটা জনপ্রিয় সিরিজ দেখতে দেখতে বন্ধ করে দিয়েছিলেন?
হ্যা, 'গেম অফ থ্রোনস'। চারটে সিজনের পর আর দেখতে পারিনি। সব ভাল চরিত্রগুলোকে মেরে ফেলছে!
আর কী ওয়েব সিরিজ দেখছেন?
'ভাইকিংস' আর 'অ্যারো'। দেখা শুরু করলে আবার আরেক মুশকিল হয়। হয়তো ভাল লাগছে না তেমন, কিন্তু ছাড়তেও পারছি না। এই তো কয়েক রাত ঘুম হয়নি সিরিজ দেখতে গিয়ে।
একটা ছুটির দিনে সালমান খান কী করেন?
খুবই আলস্যে দিন কাটে। হালকা ওয়ার্কআউট করি, সাইক্লিং করি। আমাকে দেখে কেউ বিশ্বাস করবে না, কিন্তু বই পড়ি, লেখালেখি করি (হাসতে-হাসতে)। তবে যা-ই করি না কেন, টিভিটা চালিয়ে রাখি। তাতে হয়তো ক্যাবলের বিজ্ঞাপন বা টেলিশপিং চলছে, কিন্তু যেটা চলছে সেটাই চলতে থাকে। তারপর ঘরে কেউ এলে যদি চ্যানেল পরিবর্তন করে, তখন আবার এই চ্যানেলটাই চলতে থাকে। আমি আমার মতো কাজ করি। টিভিটা না চললে আমার সমস্যা হয়।
আপনি তো ইনস্টাগ্রাম আর টুইটারে বেশ সক্রিয় ছিলেন। পোস্ট করা কমিয়ে দিলেন কেন?
এখন ছবির প্রচার আর ছবি সংক্রান্ত পোস্ট দিতে হচ্ছে ইনস্টাগ্রামে। আমার এসব ভাল লাগে না। তার উপর নতুন কোনও ছবি এলে বন্ধুরা অনুরোধ করে, ভাই আমাদের ছবির পোস্ট শেয়ার করে দাও। বন্ধুদের তো আর ফেরাতে পারি না! কিন্তু আমি আবার ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করা শুরু করব। নিজের পছন্দের পোস্ট... যেরকম আমি আগে করতাম।
আচ্ছা, আপনি যে একটা লম্বা সময় ধরে ধীরে-ধীরে প্রেমিক থেকে মাচো হিরোতে নিজের ইমেজটা বদলালেন, এটার পিছনে কারণ কী?
দেখুন, আমি এত সচেতনভাবে করিনি ব্যাপারটা। আমি বরাবরই এমন ছবি পছন্দ করি, যা পরিবার নিয়ে দেখা যায়। নব্বইয়ের দশকে সুরাজ (বরজাতিয়া) ছাড়া একটা গোটা একান্নবর্তী পরিবার নিয়ে কে ছবি বানিয়েছে বলুন? তাই ওর ছবিতে অভিনয় করতে আমার খুব ভাল লাগত।
একটা ছেলে আর মেয়ে যখন প্রেম করে, তখন পরিবারের বাকিরা তাদের নিয়ে কী ভাবে, কীরকমভাবে পরিবার তাদের সম্পর্কটাকে গ্রহণ করে, সেটাও তো একটা দিক। আপনি বলছেন অ্যাকশন হিরো আমি। কিন্তু আমার সব ছবিতেই কিন্তু একটা লাভ স্টোরি, একটা পরিবারের আঙ্গিক থাকে। 'রেস ৩'-এর মতো অ্যাকশন মুভিও কিন্তু আদতে একটা পরিবারেরই গল্প।
পরিবারের কথায় মনে হল, আপনার ছবিতে সাধারণত বাবা-ছেলের সম্পর্কের উপর জোর দেওয়া হয়। এটা কি ব্যক্তিগত জীবনের ছাপ?
বলতে পারেন। যখন আমি একদম ছোট ছিলাম, বাবাকে ভয় পেতাম। দুষ্টু ছিলাম বলে প্রচুর মারও খেতাম। কিন্তু একটু যখন বড় হলাম, তখন বাবার ক্যারিয়ারে একটা খারাপ সময় এল। কাজ ছিল না। তখন একটা বন্ডিং তৈরি হল বাবার সঙ্গে। তারপর আমি কাজ করতে শুরু করলাম। তখন বাবার সঙ্গে সম্পর্কটা আরও অন্যরকম হয়ে গেল। এখন আমাদের বন্ধুত্বের সম্পর্ক। বাড়িতে থাকলে সর্বক্ষণ ইয়ার্কি ফাজলামি চলে বাবার সঙ্গে আমাদের ভাই-বোনদের। আমার মনে হয়, বাবার আরও লাইমলাইট পাওয়া উচিত।
শেষ করব সেই প্রশ্নটা দিয়ে, যেটা ছাড়া আপনার কোনও সাক্ষাৎকার সম্পূর্ণ হয় না। বিয়ে কবে করছেন?
(হাসতে-হাসতে) জানতাম এই প্রশ্নটা অপেক্ষা করছে। এই ৫৫ বছর বয়সে কি বিয়ে করাটা ঠিক, বলুন? বিয়ে আমি করছি না। আসলে আমি বিয়েতে বিশ্বাস করি না। আমার মনে হয় ইটস আ ডায়িং ইনস্টিটিউশন। তবে যদি কমপ্যানিয়নশিপের কথা বলেন... ইয়েস, আই বিলিভ ইন দ্যাট।