বাংলাদেশে আসার পর আমার ধারণা পুরোপুরি পাল্টে গেছে: বনি সেনগুপ্ত
কলকাতার জনপ্রিয় অভিনেতা বনি সেনগুপ্ত। তার প্রথম ছবি ছিল `বরবাদ'। দ্বিতীয় ছবি 'পারবো না আমি ছাড়তে তোকে'। দুটি ছবিই কলকাতার জনপ্রিয় পরিচালক রাজ চক্রবর্তী পরিচালিত। তবে বনি সেনগুপ্তের বাবা অনুপ সেনগুপ্তও একজন নামকরা পরিচালক। তার মা পিয়া সেনগুপ্ত একজন অভিনেত্রী।
কিছুদিন আগে বাংলাদেশে এসেছিলেন বনি সেনগুপ্ত। চাঁদপুরে 'মানব দানব' নামের একটি ছবির শুটিং করেছেন তিনি। ছবিটি পরিচালনা করছেন বাংলাদেশি পরিচালক বজলুর রাশেদ চৌধুরী।
চাঁদপুরে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের মুখোমুখি হয়েছিলেন বনি সেনগুপ্ত। সাত বছরের ক্যারিয়ার, বাংলাদেশে অভিনয়সহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছেন তিনি।
প্রশ্ন: বাংলাদেশে 'মানব দানব' নামের যে সিনেমার শুটিং করছেন সেটির প্রসঙ্গে জানতে চাই। গল্প এবং আপনার চরিত্রের বিষয়ে যদি একটু বিস্তারিত বলতেন।
বনি সেনগুপ্ত: আজকাল মানুষের ভেতর থেকে বন্ধুত্ব চলে যাচ্ছে। তারপর ভেতরের দানবটা বেরিয়ে আসছে। এই নিয়েই সিনেমার গল্প। আমার চরিত্রটা একজন জেলের চরিত্র। তার মা আছে, কিন্তু বাবা নেই। মাকে দেখাশোনা করে ছেলেটা; পাশাপাশি সে লড়াকু। তার সঙ্গে শালুক নামের একটি মেয়ের প্রেম হয়। মেয়েটির বাবার চরিত্রে অভিনয় করছেন রজতাভ দত্ত, যিনি আমাকে পছন্দ করেন না। তবে অভিনয়ের বাইরে কিন্তু রজতাভ দত্তের সঙ্গে আমার দারুণ সম্পর্ক। আড্ডা মারা, খাওয়াদাওয়া সবই একসঙ্গে করেছি।
প্রশ্ন: আপনার চরিত্রটা জেলের, নিশ্চয় মাছ ধরতে হয়। সরাসরি কখনো মাছ ধরেছেন?
বনি: হ্যাঁ, ছিপ ফেলে মাছ ধরেছি। কিন্তু জাল দিয়ে মাছ দিয়ে ধরা হয়নি কখনো। তবে এখানে যেটা দেখাচ্ছে, ট্যাটা দিয়ে মাছ ধরা। তবে এই শুটিংটা এখনও হয়নি। শুধু মাছ ধরে নিয়ে বাড়ি আসছি এরকম দৃশ্য ধারণ করা হয়েছে। শুটিংয়ে ব্যবহার করা ওই মাছটা আমরা পরে সবাই মিলে খেয়ে ফেলেছি। এখন মাছের কন্টিনিউয়িটির জন্য একই সাইজের নতুন মাছ লাগবে।
প্রশ্ন: বাংলাদেশে এটা কয় নম্বর ছবি?
বনি: এটা দ্বিতীয়। আগে 'মনে রেখ' নামের একটা ছবি করেছিলাম। সেখানে আমার কো আর্টিষ্ট ছিল মাহিয়া মাহি। পরিচালনা করেছিলেন ওয়াজেদ আলী সুমন।
প্রশ্ন: ওটা তো ঢাকায় শুটিং হয়েছিল। কিন্তু এটার শুটিং চাঁদপুরের একটা গ্রামে। একেবারে নদীর ধারে শুটিং। কেমন লাগছে?
বনি: খুবই ভালো। আমাদের শুটিংটাও নদীর ধারে হচ্ছে। চাঁদপুর খুব সুন্দর জায়গা। ইলিশের শহর। আমরা এসেই কয়েকটা ইলিশ খেয়েছি। তারপরই ইলিশ ধরা বারণ হয়ে যায়। তাই আর খাওয়া হয়নি।
প্রশ্ন: পছন্দের মাছ কি ইলিশ?
বনি: খুব পছন্দ। তারপর ভেটকি, পাবদাও পছন্দ। আসলে কলকাতাতেও ইলিশ খাওয়া হয়েছে। কিন্তু ওখানকার ইলিশ তো এখান থেকেই যায়। তাই ওখানে যেতে যেতে স্বাদটা কমে যায়। কিন্তু এখানে তো একেবারে টাটকা ইলিশ। খুব স্বাদ। আমি আসার পরে যে কদিন ইলিশ ধরার পারমিশন ছিলো প্রতিদিনই খেয়েছি। তবে আমি কিন্তু এমনিতে মাছ কম খাই।
প্রশ্ন: একইভাবে কলকাতার শুটিং ও বাংলাদেশের শুটিংয়ে কোনো পার্থক্য পেলেন?
বনি: খুব বেশি না। যেহেতু ডিরেক্টর আলাদা, তাই তাদের পরিকল্পনাও আলাদা। তারা প্রত্যেকে নিজেদের মতো করে শট নেন। একই সঙ্গে এখানকার ভাষাটা একরকম, কলকাতার ভাষাটা আরেকরকম। দুটোই বাংলা, কিন্তু বলার ধরনটা আলাদা। তবে আমি শিখে নিয়েছি। আগেরবার যখন এসেছিলাম তখন খুব সমস্যা হয়েছিল। এবার হয়নি। এক দুদিন একটু সমস্যা হয়। তারপর ঠিক হয়ে যায়।
প্রশ্ন: বাংলাদেশে অনেক হিরো রয়েছে। কিন্তু 'মানব দানব' সিনেমার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান শাপলা মিডিয়া আপনাকে কেন কলকাতা থেকে নিয়ে এলো? জানতে চেয়েছিলেন?
বনি: তারা আমার বেশ কয়েকটি ছবি দেখেছেন বলে জানিয়েছেন এবং আমার অভিনয় নাকি তাদের খুব ন্যাচারাল লেগেছে। পরিচালক ও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে বলেছিল, যেমন চরিত্র সেটার জন্য আমি পারফেক্ট।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের কোনো অভিনেতার অভিনয় দেখা হয়েছে?
বনি: হ্যাঁ। বাংলাদেশের শাকিব খানের অভিনয় দেখা হয়েছে। ও তো আমাদের ওখানেও কাজ করেছে। বেশি ওরটাই দেখা হয়েছে।
প্রশ্ন: আর নায়িকা?
বনি: আমাদের ওখানে যারা কাজ করেছে সবাইকে চিনি। যেমন নুসরাত ফারিয়া, মিম, মাহি এদের কাজ দেখেছি। বিশেষ করে জয়া আহসানের কাজ দেখা হয়েছে। তিনি তো আমাদের ওখানে প্রচুর পপুলার।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের কোনো নায়িকার সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ আছে?
বনি: মাহির সাথে তো কাজ হয়েছে। আমার খুব আগ্রহ আছে জয়া আহসানের সঙ্গে কাজ করার। নিঃসন্দেহে তিনি একজন অসাধারণ অভিনেত্রী।
প্রশ্ন: আপনার ক্যারিয়ারে সাত বছর চলছে। আমরা যতদূর জানি আপনার বাবা একজন বড় মাপের পরিচালক। তার সঙ্গে কাজ হয়েছে?
বনি: সাত বছরে একটা কাজ হয়েছে। 'জানবাজ' নামের একটা ছবির শুটিং শেষ হলো কিছুদিন আগে। আমি আর কৌশানি মিলেই করেছি। তার সঙ্গে শুটিং অভিজ্ঞতা হলো, সেটে গিয়ে মনেই হয়নি আমরা বাবা-ছেলে। ডিরেক্টর-অভিনেতা। বাবা সেটে একেবারে অন্যরকম হয়েছে যায়। এমনকি মায়ের সাথেও একইরকম আচরণ। মাকে নিয়ে অনেকগুলো কাজ করেছেন। কিন্তু বাড়িতে যে নামে ডাকে, সেটে সে নামে ডাকে না। সেটে প্রিয়া দি বলেন ডাকেন। শুটিং এ বাবা একেবারে ডিরেক্টরের ক্যারেক্টারে ঢুকে যান।
প্রশ্ন: আপনার বাসায় তো সবাই সিনেমার মানুষ। বাসায় কি সিনেমা নিয়ে আলাপ হয়?
বনি: খুব হয়। আমাদের যদি দিনে ১০০ টা কথা হয় তার মধ্যে ৯০ টা কথা তো সিনেমা নিয়ে।
প্রশ্ন: আপনি ছিলেন কর্মাশিয়াল সিনেমার হিরো। ইদানিং গল্প ধরে কাজ করছেন বলে একটা সাক্ষাৎকারে বলেছেন। কারণটা কি?
বনি: আমি আসলে একইরকম সিনেমা বারবার করতে চাই না। একই গল্প, একই চরিত্র বার বার নয়। অভিনেতা তো নতুন নতুন চরিত্র নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করবে। আমি সেটাই করছি। এখন স্ক্রিপ্ট পড়ে তারপর সিদ্ধান্ত নিচ্ছি। তাছাড়া কলকাতাসহ বাংলাভাষাভাষী দর্শকের রুচি পরিবর্তন হয়েছে। আমিও চাইছি নতুন নতুন চরিত্রের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করতে।
প্রশ্ন: অভিনেত্রী কৌশানির সঙ্গে আপনার অনেক দিনের প্রেম। ২০২১ এ বিয়েও করতে চেয়েছিলেন। এ বছরের আর মাত্র দু মাস রয়েছে।
বনি: আসলে প্ল্যান কিন্তু ২০২০ করেছিলাম। তারপর ২০২১ এ। সমস্যা হলো করোনা আমাদের দুই বছর পিছিয়ে দিয়েছে। এখন তো দুই বছর না গেলে বিয়ে করতে পারব না। আমার তো প্রচুর লোককে ইনভাইট করতে হবে। খাওয়াতে হবে। বিয়ের জন্য টাকা জমাতে হবে। তাই আগামী দুই বছর টাকা জমাবো। তারপর ২০২৩ সালে বিয়ে করব।
প্রশ্ন: শেষ করি, বাংলাদেশে আসার আগে কি ধারণা ছিলো এবং আসার পরে কি মনে হয়েছে?
বনি: বাংলাদেশের আসার আগে অনেকে নেগেটিভ কথা শুনেছি। ঠিকমতো কাজ হয় না, দক্ষ টেকনিশিয়ান নেই, পরিচালক নেই। কিন্তু বাংলাদেশে এসে দুটি ছবিতে কাজ করার পর আমার ধারণা একেবারে পাল্টে গেছে। এখানে সবাই খুবই দক্ষ। দারুণ কাজ করে। বিশেষ করে আমাদের ওখানে এখন সিনেমা রিমেক হচ্ছে। কিন্তু এখানে একেবারে নতুন মৌলিক গল্প নিয়ে কাজ হচ্ছে। গল্প ধরে কাজ করা হচ্ছে। এটা খুবই ভালো লাগছে।