নেতিবাচক মন্তব্য নিতে পারি না: মনোজ প্রামাণিক
গত ঈদে 'লাবণী' নামে একটি নাটকে অভিনয় করেছেন মনোজ প্রামাণিক। একই নাটকে তার দুই রকম চরিত্রে অভিনয় মুগ্ধ করেছে দর্শকদের।
'লাবণী'র আগে বেশ কিছু নাটক ও চলচ্চিত্রে দেখা গেছে তাকে। সেসব সূত্রে সহজেই বলা যায়, এই সময়ের জনপ্রিয় অভিনেতা তিনি।
অভিনয়ের পাশাপাশি মনোজ শিক্ষকতা করছেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। কদিন আগে তিনি মুখোমুখি হয়েছিলেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের। বলেছেন নিজের কাজসহ নানা বিষয়ে।
শুরুতে জানতে চাই, আসন্ন ঈদের ব্যস্ততা নিয়ে। মনোজ জানান, তানিম রহমান অংশু পরিচালিত 'সাহসিকা' নামে একটি টিভি ফিচার ফিল্মে অভিনয় করছেন। সেখানে তার বিপরীতে অভিনয় করছেন তানজিন তিশা। এছাড়া নাটক করছেন বেশ কয়েকটা।
তবে সবচেয়ে বেশি ব্যস্ত রয়েছেন অন্য একটি কাজ নিয়ে। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের তার ডিপার্টমেন্ট মিডিয়া অ্যান্ড ফিল্ম স্টাটিজ বিভাগের ১৪ জন শিক্ষার্থী নির্মাণ করছেন ১৪টি শর্ট ফিল্ম। সেখানে তিনি ক্রিয়েটিভ প্রডিউসার হিসেবে কাজ করছেন।
ওই প্রজেক্ট নিয়ে দারুন ব্যস্ত সময় পার করছেন মনোজ। ওই শর্ট ফিল্মগুলো আসন্ন ঈদে দুটি টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচারিত হবে। তারপর একটা ওটিটি প্লাটফর্মে দেখানো হবে বলে জানান তিনি।
তবে নাটকে অভিনয় ও ক্রিয়েটিভ প্রডিউসারের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি চলচ্চিত্রে অভিনয়ের খবরও দেন মনোজ। তার অভিনীত বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রের চরিত্র নিয়ে বলেন, "বিশবিদ্যালয়ে পড়ার সময় একটা ডিজিটাল চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছি। রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো একটা পাগলের চরিত্রে। তারপর তো ঢাকায় এসে নানা ধরনের কাজ করেছি। সবশেষ দীপংকর দীপনের 'অপারেশন সুন্দরবন' ছবিতে কাজ করেছি জেলের ছেলের চরিত্রে। যে ছেলে পরে ডাকাত হয়ে যায়। নূরুল আলম আতিকের 'মানুষের বাগান' ছবিতে অভিনয় করেছি শিক্ষকের চরিত্রে; আর সানী সানোয়ার পরিচালিত 'মিশন এক্সট্রিম' ছবিতে জঙ্গীর চরিত্রে। করোনার কারণে ছবিগুলো মুক্তি পায়নি। সবই বড় বাজেটের ছবি। মুক্তি পেলে দর্শকেরা পছন্দ করবেন বলে আশা করছি।"
নওগাঁয় জন্ম ও বেড়ে ওঠা মনোজ পড়াশোনা করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখান থেকে ঢাকায় এসেছিলেন সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করতে। অমিতাভ রেজা চৌধুরীর সঙ্গে কাজ করেছেন কিছুদিন। ইচ্ছা ছিল সহকারী পরিচালক থেকে হবেন পরিচালক। কিন্তু এখন পুরোদস্তুর অভিনয় করছেন। জানতে চাই, লক্ষ্য ঠিক আছে কি না?
বলেন, 'জীবনের লক্ষ কখনোই নির্ধারণ করতে পারিনি। তাই ঠিক আছে কি না, বলতে পারছি না। আমি আসলে কনফিউজড ছিলাম সব সময়। অভিনয় করব? বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা করব? পরিচালনা করব? নাকি অন্য কিছু? অনেক ভাবনা চিন্তা করে এবং কাজের মধ্য দিয়ে এসেও নির্ধারণ করতে পারছিলাম না আমার আসলে লক্ষ্য কী? তাই নিজেকে ছেড়ে দিয়েছিলাম। যখন যেটা ইচ্ছা হয়েছে, সেটাই করেছি। শেষ পর্যন্ত যেখানে গিয়ে দাঁড়াব, সেটাই হয়তো চূড়ান্ত। তাই এখন এসব নিয়ে অত ভাবি না।'
মনোজ জানান, গ্রামীণফোনের একটা বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে মানুষ তাকে চিনেছে। তারপর 'ক্লোজআপ কাছে আসার গল্প' সিরিজের একটা বিজ্ঞাপন করেছেন। এরপর ওই সিরিজের দুটি নাটকেও অভিনয় করেছেন তিনি। এসব দিয়েও মানুষের কাছে পৌঁছে গেছেন। তারপর 'ফুল ফোটানের খেলা', 'কথা হবে তো' এবারের ঈদের প্রচারিত নাটক 'লাবণী', চলচ্চিত্র 'ইতি, তোমারই ঢাকা' দিয়ে মনোজ পেয়েছেন জনপ্রিয়তা।
এইসব কাজ ও জনপ্রিয়তা তিনি যেমন উপভোগ করেন, তেমনি উপভোগ করেন তার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
মনোজ বলেন, 'ছাত্রদের খুব ভালোবাসি। তারা যখন প্রশংসা করে, খুব শক্তি পাই। ওরা আমার কাজের সমালোচনা করে এবং পরামর্শ দেয়।'
অবশ্য মনোজ সমালোচনা শুনলে খানিকটা ব্রিবত হন। নেতিবাচক কিছু হলেই খারাপ লাগে তার। বলেন, 'তখন মনে হয়, আমার কিছু হচ্ছে না। কী করলাম জীবনে! তখন মনে হয় একেবারে মাটির সাথে মিশে যাই।'
মনোজ প্রামাণিকের বেড়ে ওঠা গ্রামে। তাই গ্রামকে ভীষণভাবে মিস করেন। ভাবেন, গ্রামে থেকে নিজের সব কাজ করা গেলে তিনি গ্রামেই সারা জীবন থাকতেন। গ্রামের নিবিড় আদর ও শান্তি পৃথিবীর আর কোথাও পাওয়া সম্ভব নয় বলে মনে করেন তিনি।
আলাপের শেষে জানতে চাই, 'ক্যারিয়ারের ১২-১৩ বছর পার করলেন। অনুভূতি ও অর্জন?'
মনোজ বলেন, 'যে কাজ সারা জীবন করতে চেয়েছি বা পারি, সেটাই করে যাচ্ছি, এটা আমার জন্য সবচেয়ে বড় আনন্দের বিষয়। এটা করে মানুষের ভালোবাসা ও সন্মান পাই, এটাও তো কম নয়। আমি আসলে সারা জীবন এটাই করে যেতে চাই। এটা করে যদি অস্কারও পাই কিংবা বাড়ি গাড়ি হোক বা না হোক, এটাই করতে চাই। কাউকে কষ্ট না দিয়ে নিজে ভালো থাকার চেয়ে আনন্দের আর কিছু নেই।'