গানই আমার প্রেম: সিঁথি সাহা
কিছুদিন আগে সংগীতশিল্পী সিঁথি সাহার একটি গান প্রকাশ পেয়েছে। ডুয়েট ওই গানে তার সঙ্গে ছিলেন জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী হাবিব। 'উড়ে যায় মুনিয়া' নামে গানটির ভিডিওতে অন্যরকম এক সিঁথিকে দেখা গেছে। সেই গানের সূত্র ধরেই কদিন আগে আলাপ হলো তার সাথে।
বললেন, 'গানটার মিউজিক ভিডিওটা অনেক যত্ন নিয়ে করা হয়েছে। এখানে হাবিব ভাইকে নাবিক হিসেবে দেখেছেন সবাই। আর আমি তার অপেক্ষায় থাকা প্রিয়জন।'
নিয়মিত গান প্রকাশ করেন সিঁথি সাহা। গানের শো করেন। আগা-গোড়া গানের মানুষ তিনি। জানতে চাই, গানের হাতেখড়ি কীভাবে?
বলেন, 'আমার মা গান করতেন। তাই ছোটবেলায় মায়ের হাতেই আমার গানের হাতেখড়ি। আমার জন্ম কুষ্টিয়াতে। জন্মগতভাবেই লালনের সঙ্গে একটা সম্পর্ক আছে। আবার রবীন্দ্রনাথের সঙ্গেও। ঘটনা হলো, শুরুতে লালনগীতি করতাম। কিন্তু যখন বড় হতে থাকলাম এবং রবীন্দ্রনাথের গান বোঝা শুরু করলাম, তখনই থেকেই রবীন্দ্রসংগীত চর্চা করি। এখনও নিয়মিত রবীন্দ্রনাথের গান করি। বলতে পারেন, লালন আর রবীন্দ্রনাথের মধ্য দিয়ে, তাদের গানের চর্চার মাধ্যমে আজকের সিঁথি সাহা হয়েছি।'
সিঁথি সাহা জানান, গান নিয়ে তিনি খরগোশের মতো করে দৌড়াতে চেষ্টা করেননি কখনোই। কচ্ছপের মতো করেই গন্তব্য পৌঁছতে চেয়েছেন। সংখ্যায় অল্প হলেও নানা ধরনের গান আছে তার। প্রস্তুতিও নিয়েছেন নানা ধরনের গান প্রকাশের। সামনে হয়তো সিঁথি অন্য ভাষার গানও করবেন।
এরইমধ্যে উপমহাদেশের অনেক শিল্পীর সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়েছে। কথা হয়েছে। নতুন গান করার পরিকল্পনাও হয়েছে।
তবে গান করলেও সিঁথি সাহাকে নিয়মিত উপস্থাপনায় দেখা যায়। অভিনয় করেন মাঝে মধ্যে। সবশেষ তার উপস্থাপনায় মাছরাঙা টিভিতে প্রচারিত হচ্ছে 'সিঁথির অতিথি' নামে একটি অনুষ্ঠান।
এ অনুষ্ঠান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'গত বছর যখন লকডাউনে ছিলাম, তখন সবার সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ কমে গিয়েছিল। একেবারে ঘরবন্দী অবস্থায় ছিলাম আমরা। ওই খুব হতাশায় ছিলাম সবাই। তখনই চিন্তাটা মাথায় এলো। ঘরে থেকে সবার সঙ্গে কিভাবে কথা বলা যায়। সবার সঙ্গে সবার কানেকশন কিভাবে করা যায়। কারণ আমার সঙ্গে দেশ ও দেশের বাইরের, বিশেষ করে ভারতের অনেক শিল্পীর সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে। একই সঙ্গে আমার যারা শ্রোতা আছেন, তাদের সঙ্গেই-বা কিভাবে যোগাযোগ রক্ষা করা যায়? সেই চিন্তা থেকেই মাছরাঙা টিভির সঙ্গে আলাপ। তারপর তো শুরু হলো সিঁথির অতিথি।'
'নামটা নিয়েও একটা মজার ঘটনা আছে। আমার খুব প্রিয় শিল্পী তাহসান ভাই। তার কাছে একদিন বললাম, এরকম একটা অনুষ্ঠান করতে চাই। কি নাম দেওয়া যায় ভাইয়া? তিনি বললেন, সিঁথির অতিথি নামটা দিতে পার। তোমার নামেই হোক অনুষ্ঠানটা। নামটা আমারও খুব পছন্দ হলো। চ্যানেল পছন্দ করল। এই অনুষ্ঠানটা ৫০তম পর্ব প্রচার হবে খুব তাড়াতাড়ি,' বলেন তিনি।
সিঁথি জানান, দেশের অনেক গুণী শিল্পী তার অনুষ্ঠানে এসেছেন। 'পাশাপাশি দেশের বাইরের, বিশেষ করে কলকাতা ও মুম্বাইয়ের গুণী শিল্পীরাও যোগ দিয়েছেন আমার অনুষ্ঠানে। সামনে আরও আসবেন।'
গান কিংবা উপস্থাপনাই শুধু নয়, অভিনয়ও করেছেন সিঁথি। জানান, জীবনে প্রথম অভিনয় করেছিলেন হুমায়ূন আহমেদের নাটকে। তারপর আশফাক নিপুনের নাটকেও দেখা গেছে তাকে। তবে অভিনয় বা উপস্থাপনার চেয়ে গানেই জড়িয়ে থাকতে চান সিঁথি। তিনি মনে করেন, অভিনয় করা খুব কঠিন কাজ। অনেক ধৈর্য্য থাকতে হয়।
সিঁথি সাহার জীবনের একটা অংশ কেটেছে নিউজিল্যান্ডে। ২০১২ সালে বিয়ের পরের বছরই স্বামীর সঙ্গে সেখানে চলে যান। তবে গান ছাড়েননি। চর্চা করেছেন। সুযোগ পেলেই গান প্রকাশ করেছেন। ছয় বছর সেখানে কাটানোর সময়টাও তার জন্য আনন্দের। সিঁথি বলেন, 'নিউজিল্যান্ড দেশটা যেমন সুন্দর, আমার জীবনটাও সুন্দর ছিল। তবে গানের সুযোগটা কম ছিল। কিন্তু সেটা নিজে চর্চার মাধ্যমে পুষিয়ে নিতাম।'
এখন স্থায়ীভাবে দেশে আছেন সিঁথি সাহা। গান নিয়েই ব্যস্ততা তার। কথা শেষ করার আগে আগে বললেন, 'গানই আমার ভালোবাসা। গানই আমার প্রেম। বাকি জীবন গানের সাথেই থাকতে চাই।'