আবারও সংকটে দেশের বিনোদন অঙ্গন
আবারও সংকটের মুখোমুখি দেশের বিনোদন ইন্ডাস্ট্রি। গতবছরের করোনার ধাক্কা সামাল দিতে না দিতেই নতুন করে লকডাউনের কবলে পড়ল এই সেক্টর। তবে এই লকডাউনের মধ্যে শুটিং বা বিনোদন অঙ্গন নিয়ে কোন নির্দেশনা না থাকায় শুটিং চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা। তবে মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি এবং সরকারী নির্দেশনা।
তবে সমিতি থেকে নিষেধাজ্ঞা না এলেও এরইমধ্যে বেশ কয়েকটি সিনেমার কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন পরিচালকেরা। তারা বলছেন, সবার আগে নিজেদের সুস্থতা নিশ্চিত করতে হবে। জানা গেছে লকডাউনের কারণে তরুন পরিচালক ইফতেখার শুভর চলচ্চিত্র 'মুখোশ', অনন্য মামুনের 'অমানুষ', মমতাজুর রহমান আকবরের 'যেমন জামাই তেমন বউ', শামীম আহমেদ রনির 'বুবুজান', সাখাওয়াত মানিকের 'হিমুর বসন্ত'সহ শাপলা মিডিয়া প্রযোজিত বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রের শুটিং বন্ধ হয়ে গেছে। তবে শেষ মুহুর্তে ওয়াজেদ আলী সুমনের 'অন্তরাত্মা' ছবির কাজ শেষ হয়েছে। প্রায় এক মাস ধরে ছবিটির শুটিং চলছিল পাবনার একটা রিসোর্টে। এতে শাকিব খানের বিপরীতে অভিনয় করেছেন কলকাতার দর্শনা বনিক। ছবিটি আসছে ঈদে মুক্তির কথা রয়েছে।
'মুখোশ' ছবির শুটিং বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে পরিচালক ইফতেখার শুভ বলেন, 'আমার আর এক সপ্তাহ শুটিং করলেই কাজ শেষ হয়ে যেত। কিন্তু লকডাউন দেয়াতে আর সম্ভব হয়নি। টাঙ্গাইলে শুটিংয়ের প্রস্তুতি নেওয়া ছিল। এখন ক্ষতির মুখোমুখি হয়ে গেলাম'।
সরকারী অনুদানে নির্মিত এই সিনেমার বাজেট বেড়ে যাচ্ছে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, 'শুরুতে ৮০ লাখ টাকা বাজেট ছিল। সরকার থেকে ৫০ লাখ পেয়েছি। বাকি ৩০ লাখ নিজে বিনিয়োগ করার চিন্তা করেছিলাম। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে এটা এক কোটি ছাড়িয়ে যাবে'।
একই অবস্থা পরিচালক অনন্য মামুনের বেলাতেও। তার 'অমানুষ' চলচ্চিত্রের জন্য বান্দরবানে শুটিং সেট ফেলেছিলেন। কিন্তু সেখানে যাওয়ার আগেই লকডাউন এ আটকে গেলেন। তিনি বলেন, 'আপাতত ক্ষতির মুখোমুখি হলেও সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে শুটিং বন্ধ রেখেছি'।
তবে নিজ দায়িত্বে শুটিং বন্ধ রাখলেও সরকারীভাবে কোন নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়নি। এমনকি কোন নির্দেশনাও আসেনি। এমন কি সিনেমা হল খোলার রাখা না রাখার ব্যাপারেও কোন নির্দেশনা নেই। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মিয়া আলাউদ্দিন বলেন, 'সিনেমা হল চালু রাখলেও আমাদের ক্ষতি, বন্ধ রাখলেও। তবে এ বিষয়ে কোন নির্দেশনা নেই। দেশের বিভিন্ন জায়গার হল মালিকেরা খোলা রাখা না রাখার বিষয়ে আমার কাছে জানতে চেয়েছেন। আমি বলেছি সংশ্লিষ্ট জেলার ডিসির সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নিতে। তিনি চাইলে বন্ধ রাখতে পারেন আবার চালুও করতে পারেন।'
ক্ষতির বিষয়ে তিনি বলেন, 'গত বছরের করোনাকাল কাটিয়ে অক্টোবরে সিনেমা হল খোলার অনুমতি পাই আমরা। কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি মানার পাশাপাশি ৫০ ভাগ ফাঁকা রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। ৫০ ভাগ ফাকা রাখলে কি হবে, পুরো হলের ১০ ভাগও দর্শক দিয়ে পূরণ হয় না। অনেক সিনেমা হলের বিদ্যুৎ খরচও ওঠে না। তাই নতুন করে লকডাউনে ক্ষতির মুখোমুখি হওয়া নিয়ে আর ভেবে কি হবে'।
তবে তিনি মনে করেন, ভারতের চলচ্চিত্র আসলে হয়ত দেশের চলচ্চিত্র অঙ্গন আবার ঘুরে দাড়াবে।
এদিকে এফডিসিতে বেশ কয়েকটি ফ্লোর লকডাউনের মধ্যে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। আগে থেকেই এসব বুকিং করা ছিল বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির জনসংযোগ কর্মকর্তা হিমাদ্রী বড়ুয়া। তিনি বলেন, 'চলচ্চিত্র তো শিল্প। আর শিল্প তো খোলা রাখার কথা বলা হয়েছে। এই কারণে আমরা বুকিং বাতিল করিনি। শুটিং বন্ধ করার ব্যাপারেও আমাদের কোন নির্দেশনা নেই'।
এদিকে লকডাউনের কারণে দেশের টেলিভিশন সেক্টর আবার ধাক্কা খাবে বলে জানান টেলিভিশন নাটক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত অনেক নেতা। কথা হয়, ডিরেক্টরস গিল্ডের সভাপতি ও অভিনেতা সালাহউদ্দিন লাভলুর সঙ্গে।
তিনি বলেন, 'গত বছরের করোনার পর আস্তে আস্তে এই সেক্টরটা একটু ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল। নতুন করে করোনার ঢেউ ও লকডাউনের ফলে আবার ক্ষতির মুখোমুখি হবে। আমার কাছে মনে হয়, এবার সেই পরিমাণ দ্বিগুণ হবে'।
তিনি জানান, গত বছর অনেক নির্মাতা ও কলাকুশলীদের পাশে ছিল বিভিন্ন সংগঠন। আর্থিক সাহায্যের পাশাপাশি নানাভাবে পাশে থেকেছে। কিন্তু এ বছর সেই সুযোগ নেই। কারণ সংগঠনগুলির সামর্থ্য কমে এসেছে।
তবে ক্ষতির পরিমাণ এখনই বলতে পারছেন তারা। লাভলু জানান, 'ক্ষতি যাতে কম হয় তাই সকাল ৬ টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত শুটিং করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে অনেক নির্মাতা ও অভিনয়শিল্পী শুটিংয়ের পক্ষে না। আমরাও শুটিং এর ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করছি'।
নতুন করে লকডাউন দেওয়ায় পুরো সেক্টর নতুন করে সংকটে পড়তে যাচ্ছে। সামনে বৈশাখ ও ঈদ। এসব উৎসবে মূলত বড় বাজেটের নাটকসহ নানা ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। কিন্তু লকডাউনের শুটিং স্বল্পতা ও নিরুৎসাহিত হওয়ার কারণে গত বছরের মতো এ বছরও নতুন কনটেন্টের অভাব দেখা দিতে পারে মনে করছেন অনেকেই। ফলে শুধু টেলিভিশনেই ক্ষতির মুখোমুখি হতে হবে কয়েকশ কোটি টাকার। সেটা গত বছরের চেয়ে কম না বেশি সেটাই এখন দেখার বিষয়।