সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হলো পদ্মা সেতু, যানবাহনের দীর্ঘ সারি

আজ রোববার (২৬ জুন) সকাল থেকে জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে বহুল প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতু।
সকাল ৬টায় সেতুর গেট খোলার আগ পর্যন্ত ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে শত শত বাস, ট্রাক, প্রাইভেট কার, মোটরসাইকেল ও অ্যাম্বুলেন্স অপেক্ষা করতে দেখা যায়।
যানবাহন থেকে টোল আদায়ের জন্য এখন পর্যন্ত ৭টি বুথের মধ্যে ৫টি বুথ ব্যবহার করা হচ্ছে। সড়কের দুটি লেন পণ্য বোঝাই ট্রাকের জন্য এবং অন্যটি মোটরসাইকেলসহ অন্যান্য ব্যক্তিগত যানবাহনের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে।
সেতুর টোল বুথে কর্মরত কর্মকর্তারা জানান, অন্যান্য যানবাহনের তুলনায় মোটরসাইকেল থেকে টোল সময় লাগছে আদায়ে কম। তবে, সব ধরনের যানবাহন থেকে টোল আদায়ে গড়ে এক মিনিটেরও কম সময় লাগছে বলে জানান তারা।

এদিকে, জাজিরা পয়েন্টের মোট ৬টি বুথে এখন গাড়ি প্রতি ৩০ সেকেন্ড করে সময় লাগছে টোল আদায়ে। সেতুর জাজিরা প্রান্তে রোবরাব ভোরে যানবাহনের যে দীর্ঘ সারি তৈরি হয়েছিল, তা এখন অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে।
স্বয়ংক্রিয়ভাবে মাত্র দুই থেকে তিন সেকেন্ডের মধ্যে টোল সংগ্রহকারী যন্ত্র রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইডেন্টিফিকেশন (আরএফআইডি) কার্ড বুথ স্থাপন করা হয়েছে সেতুর উভয় প্রান্তে। তবে আজ (২৬ জুন) সেগুলো বন্ধ রয়েছে।
সেতু বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী তোফাজ্জল হোসেন জানান, ভোর ৫টা ৫০মিনিটের দিকে যানবাহন পারাপারের জন্য পদ্মা সেতুর টোল প্লাজা খুলে দেওয়া হয়।

"প্রথম দিকে মোটরসাইকেলের চাপ ছিল, কিন্তু পরবর্তীতে বাস-মিনিবাস প্রাইভেট কারের দীর্ঘ সারি তৈরি হয়। তবে, পদ্মা সেতু পার হওয়া দেখার জন্য উৎসুক জনতার সংখ্যাটাই বেশি," যোগ করেন তিনি।
আজ সকালে পদ্মা সেতু দিয়ে বিভিন্ন কোম্পানির প্রায় ১০০টি বাস প্রথম যাত্রা করবে বলে জানা যায়।
পদ্মা সেতু পারাপারে সরকার নির্ধারিত টোল হার অনুযায়ী প্রতিটি মোটরসাইকেলের জন্য দিতে হবে ১০০ টাকা, কার ও জিপের জন্য ৭৫০ টাকা, পিকআপের জন্য ১ হাজার ২০০ টাকা এবং মাইক্রোবাসের জন্য টোল পরিশোধ করতে হবে ১ হাজার ৩০০ টাকা।

বাস পারাপারের ক্ষেত্রে, ছোট বাস (৩১ আসন) ১ হাজার ৪০০ টাকা, মাঝারি বাস (৩২ আসন বা এর বেশি) ২ হাজার টাকা এবং প্রতিটি বড় বাসের (থ্রি এক্সেল) জন্য টোল পরিশোধ করতে হবে ২ হাজার ৪০০ টাকা।
এছাড়া ট্রাকের ক্ষেত্রে, মিনি ট্রাকের (৫ টন পর্যন্ত) জন্য টোল নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ৬০০ টাকা, মাঝারি ট্রাকের (৫ থেকে ৮ টন) জন্য ২ হাজার ১০০ টাকা, মাঝারি ট্রাকের (৮ থেকে ১১ টন) জন্য ২ হাজার ৮০০ টাকা, ট্রাকের (থ্রি এক্সেল পর্যন্ত) জন্য ৫ হাজার ৫০০ টাকা এবং প্রতিটি ট্রেইলারের জন্য (ফোর এক্সেল পর্যন্ত) টোল নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ হাজার টাকা। এছাড়া, ফোর এক্সেলের চেয়ে বড় ট্রেইলারের ক্ষেত্রে এক্সেল প্রতি অতিরিক্ত ১ হাজার ৫০০ টাকা টোল পরিশোধ করেত হবে।

এদিকে, আজ পদ্মা সেতু জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত হওয়ার পর, ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে যানবাহনের সংখ্যা বেড়েছে।
খুলনার ইমাদ পরিবহনের ব্যবস্থাপক শরীফ আল মামুন বলেন, "ঢাকার উদ্দেশ্যে খুলনা থেকে ২৩টি বাস ছেড়েছে। সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে আরও দুটি বাস যোগ হয়েছে। যাত্রী সংখ্যা বাড়লে আমরা বাসের সংখ্যা আরও বাড়াব।"
তিনি জানান, ইমাদ পরিবহন ঢাকা-খুলনা রুটে এসি বাসে জনপ্রতি ৭০০ টাকা এবং নন-এসি বাসে ৮০০ টাকা ভাড়া নিচ্ছে।

"আজ ভোর ৪টা ৫০ মিনিটে খুলনা থেকে প্রথম বাস ছেড়ে যায়। একই সময়ে ঢাকা থেকে একটি বাস খুলনার উদ্দেশ্যে যাত্রা করে," যোগ করেন তিনি।
খুলনার রয়্যাল জংশনে ২০টিরও বেশি ঢাকাগামী গণপরিবহন কাউন্টার রয়েছে।
সোহাগ পরিবহন রয়েলের বুলবুল জানান, "আমাদের আগে ঢাকা-খুলনা রুটে দুটি পরিবহন কোম্পানি ছিল। বর্তমানে এই রুটে মোট ১৭টি বাস কোম্পানি রয়েছে।"
ঢাকা-খুলনা রুটে প্রায় সব বাস কোম্পানিই গাড়ির সংখ্যা বাড়িয়েছে।
এই রুটে সমস্ত নন-এসি পাবলিক বাসের ভাড়া ৬০০ টাকা। আর এসি বাসের ভাড়া ৭০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা।
এদিকে, আগামী ১ জুলাই থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুর শহরে বাস চলাচল শুরু হবে।
ফরিদপুরভিত্তিক গোল্ডেন লাইন বাস সার্ভিসের ব্যবস্থাপক অরুণ সাহা জানান, সেতু ব্যবহার করে ঢাকায় প্রবেশের জন্য প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন তারা।
"আমরা ইতোমধ্যে কদমতলী ও সায়েদাবাদে কাউন্টার স্থাপন করেছি। ১ জুলাই থেকে আমাদের বাসগুলো ফরিদপুর ছেড়ে পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকায় পৌঁছাবে। বিআরটিএ ও মালিকদের মধ্যে বৈঠকের পর টিকিটের মূল্য নির্ধারণ করা হবে," যোগ করেন অরুণ।

তিনি বলেন, "আজ সকাল সাড়ে ৬টার দিকে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলা থেকে সৌদিয়া পরিবহনের একটি বাস পদ্মা সেতু পার হয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।"
শনিবার (২৫ জুন) ৬.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ স্বপ্নের পদ্মা সেতুর ফলক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেতুতে প্রথম যাত্রী হিসেবে তিনিই প্রথম টোল পরিশোধ করেন।