নওগাঁর আম্রপালির ইংল্যান্ডযাত্রা

নওগাঁর সাপাহারের আম যাচ্ছে ইংল্যান্ডে। উপজেলার 'বরেন্দ্র এগ্রো পার্ক' এর মালিক সোহেল রানা তার নিজস্ব বাগান থেকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় বিদেশে আমগুলো রপ্তানি করছেন। আর সে লক্ষ্যে চলতি মৌসুমে সোমবার সন্ধ্যায় আমের প্রথম চালান এক টন (প্রায় এক হাজার কেজি) রপ্তানির লক্ষ্যে পিকআপ যোগে ঢাকার নারায়ণগঞ্জে পাঠানো হয়। 'কন্ট্রাক্ট ফার্মিং' এর মাধ্যমে চাষ করা রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান নর্থবেঙ্গল অ্যাগ্রো লিমিটেড এর মাধ্যমে আম পাঠানো হচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে জেলায় ২৯ হাজার ৪৭৫ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের আমের চাষ হয়েছে। প্রতি হেক্টর জমিতে আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে সাড়ে ১২ মেট্রিক টন। সে হিসেবে প্রায় ৩ লাখ ৬৮ হাজার ৪৩৫ মেট্রিন টন আম উৎপাদনের সম্ভবনা রয়েছে।
এবার বিশ্বের আটটি দেশে আম রপ্তানি হবে। দেশগুলো হলো- যুক্তরাজ্য, ইতালি, সুইডেন, জার্মানি, কুয়েত, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ওমান।
উত্তম কৃষিচর্চার মাধ্যমে আম চাষের জন্য কৃষি অধিদপ্তরের উদ্যোগে জেলার ৮০ জন আম চাষিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এসব চাষির বাগানে ৯০ লাখ আমে ফ্রুট ব্যাগিং করা হয়েছে। এই ব্যবস্থাপনায় চাষ হওয়া অন্তত ১০০ মেট্রিক টন আম চলতি মৌসুমে বিদেশে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছর ১৫ মেট্রিক টন আম বিদেশে রপ্তানি হয়েছিল।
বিদেশে আম রপ্তানি করার জন্য পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। উত্তম কৃষিচর্চা পদ্ধতি বিশেষ করে- সুষম ও জৈব সার, স্বাস্থ্যসম্মত উৎপাদন, নিরাপদ ও খাদ্যমান রক্ষা, পরিবেশ সুরক্ষা, পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা ঠিক রাখা, কৃষিকর্মীর স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাসহ সারা বছরই পরিচর্চা করতে হয়।
নিরাপদ ও খাদ্যমান রক্ষার মধ্যে আছে ফসল সংগ্রহোত্তর সংরক্ষণ ও পরিবহন ব্যবস্থাপনা। কারণ রোগবালাই মুক্ত আমই বিদেশে যায়।
বিশেষ করে ১৫ দিন আগে গাছে সবধরনের স্প্রে বন্ধ করতে হয়। ১৫ দিন পর এসব ওষুধের আর কার্যকারিতা থাকে না। এতে করে মানুষের শরীরের ক্ষতি করতে পারেনা। সাধারণ চাষিরা কয়েকদিন আগে কীটনাশক স্প্রে করে বাজারে নিয়ে যায়। বিদেশে যেসব আম রপ্তানি করা হয় সেগুলোর কোনো রোগবালাই বা কীটনাশক আছে কিনা তা পরীক্ষার জন্য ঢাকাতে কোয়ারেন্টাইন করা হয়।

জেলার বরেন্দ্র এলাকা সাপাহার, পোরশা, নিয়ামতপুর ও ধামইরহাট এবং পত্নীতলা উপজেলার আংশিক এলাকা আম্রপালি আমের জন্য বিখ্যাত। আমগুলো অত্যান্ত সুস্বাদু ও সুমিষ্ট।
বরেন্দ্র এগ্রোপার্কের মালিক তরুণ উদ্যোক্তা সোহেল রানা বলেন, ইংল্যান্ডে আম রপ্তানির জন্য ১ মেট্রিক টন আম প্যাকিং হাউজ সেন্ট্রাল ঢাকার নারায়নগঞ্জে পাঠানো হয়। সেখানে কোয়ারেন্টাইন ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এর মান নিশ্চিত করা হবে। এরপর ছোট ছোট কাগজের কার্টুনে ২ কেজি করে প্যাকেজিং করা হবে। রপ্তানিকারকরা দেশের বাইরে পরিবহন, প্যাকেজিং ও আনুষঙ্গিক সব খরচসহ প্রায় ৫০০-৬০০ টাকা কেজি দরে এই আম বিক্রি করবেন।
তিনি বলেন, "বিষমুক্ত ও নিরাপদ আম আম চাষের জন্য কৃষি অধিদপ্তর থেকে একাধিকবার প্রশিক্ষণ নিয়েছি। গত বছর থেকে রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ফুড অ্যান্ড ভেজিটেবল এক্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ের মাধ্যমে আম চাষ করা হচ্ছে। এ বছর ১০০ বিঘা জমিতে গড়ে তোলা দুটি বাগানে আম চাষ করা হয়েছে। বাগানে রপ্তানি উপযোগী মিয়াজাকি, আম্রপালি, ব্যানানা ম্যাংগো, রেড পালমার, টেনসিংটন প্রাইড, অস্টিন, বারি-৪, গৌড়মতি, কাটিমন জাতের আম চাষ হয়েছে। গত বছর ৮ মেট্রিক টন আম রপ্তানি করা হয়েছে। এ বছর অন্তত ৫০ মেট্রিক টন আম রপ্তানির আশা করছি।"
২০১৫ সালে নিজ গ্রামের খাড়িপাড়া এলাকায় পৈত্রিক ১২ বিঘা জমির ওপর সোহেল রানা গড়ে তোলেন সমন্বিত কৃষি খামার। নাম দেন 'বরেন্দ্র এগ্রো ফার্ম'।
এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। মেধা, পরিশ্রম আর অটুট নৈতিক মনোবলের কারণে তিনি এখন ১৪০ বিঘা জমিতে পৃথক দুটি সমন্বিত কৃষি খামার গড়ে তুলেছেন। তার সমন্বিত কৃষি খামার এখন এলাকার শিক্ষিত বেকার যুবকদের অনুপ্রেরণার উৎস এবং মডেল উদ্যোগ।