ফ্ল্যাটের দাম বর্গফুটে ১০০০ টাকা বাড়াতে হবে: রিহ্যাব
নির্মাণ সামগ্রীর ব্যয় বৃদ্ধির কারণে বর্গফুট প্রতি ফ্ল্যাটের দাম ১০০০ টাকা বাড়াতে হবে বলে জানিয়েছে আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিয়েল এস্টেট এ্যান্ড হাউজিং এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব)।
শনিবার বাজেট পরবর্তী এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানিয়েছে সংগঠনটি। সংবাদ সম্মেলনে বাজেটে নির্মাণ সামগ্রীর ওপর বাড়ানো করহার প্রত্যাহারের পাশাপাশি আবাসন খাতে কালো টাকা বিনা প্রশ্নে বিনিয়োগের সুযোগ দেয়ার দাবিও করে সংগঠনটি। এছাড়া আবাসন খাতের ব্যবসায়ীদের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকার রিফাইন্যান্সিং ফান্ড গঠনের কথাও বলছে রিহ্যাব।
সংবাদ সম্মেলনে রিহ্যাবের সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন (কাজল) বলেন, "আমরা, রড, সিমেন্ট, বালু, ইট, পাথর সহ ১০-১১টা নির্মাণ সামগ্রীর উপর স্টাডি করেছি। গত কয়েক মাসের মূল্য বৃদ্ধিতে নতুন ও নির্মাণাধীন প্রকল্পে প্রতি বর্গফুটের নির্মাণ ব্যয় প্রায় ৫০০ টাকা করে বৃদ্ধি পেয়েছে। ৫০০ টাকা নির্মাণ ব্যয় বৃদ্ধি পেলে প্রতি বর্গফুটের জন্য গ্রাহককে বাড়তি বহন করতে হবে প্রায় ১,০০০ টাকা। কারণ ডেভেলপাররা অধিকাংশ জমি গ্রহণ করে ৫০:৫০ অনুপাতে।"
তিনি বলেন, ঘোষিত বাজেটে লিফট এর কর ১৯ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে। এতে লিফট আমদানিতে শুল্ক-কর ১১ থেকে এক লাফে ৩০ শতাংশে উঠেছে। বিভিন্ন ধরনের তার এর শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ, বিভিন্ন ধরনের পাইপে ১৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ, জিআই ফিটিংসের সম্পূরক শুল্ক ২০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া টিউব, প্লেট, ইলেকট্রোড এবং অনুরূপ অন্যান্য পণ্যের শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। অ্যালুমিনিয়াম ফয়েলের ওপর ২০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।
হঠাৎ করে এক লাফে এই মূল্য বৃদ্ধি ফ্ল্যাটের দাম আরো বাড়াবে বলে মনে করছেন রিহ্যাব সভাপতি।
সংবাদ সম্মেলনে আলমগীর শামসুল আলামিন বলেন, "রিহ্যাবের বাজেট প্রস্তাবে আমরা অপ্রদর্শিত অর্থ বিনা প্রশ্নে বিনিয়োগের সুযোগ অব্যাহত রাখার বিষয়ে সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের এ দাবি বিবেচনা করা হয়নি।"
বিনা প্রশ্নে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ চেয়ে রিহ্যাব সভাপতি বলেন, "গত ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে ১০ শতাংশ কর দিয়ে আবাসন খাতে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগ বা কালোটাকা সাদা করার 'বিশেষ' সুবিধা দিয়েছিল সরকার। এতে এ খাতে অন্তত ২০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ এসেছে। কিন্তু সর্বশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সেই সুযোগ বাতিলের ঘোষণা দেয়া হয়। এ অবস্থায় আগের মতো অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুবিধা বহাল রাখার দাবি জানাচ্ছি।"
জমি-ফ্ল্যাটের নিবন্ধন খরচ দাম বেশি হওয়ার একটি কারণ উল্লেখ করে রিহ্যাব সভাপতি বলেন, "বর্তমানে জমি-ফ্ল্যাট নিবন্ধনে খরচ নেয়া হয় ১০ থেকে ১২ দশমিক ৫ শতাংশ হারে। আমরা নিবন্ধন খরচ ৭ শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়েছিলাম। কারণ, নিবন্ধন ব্যয় কম হলে ক্রেতারা জমির সঠিক মূল্য দেখাতে উৎসাহিত হবেন। ফলে অপ্রদর্শিত অর্থ কমে আসবে। কিন্তু এই দাবিও বিবেচনায় নেয়া হয়নি।"
আবাসন ঋণের জন্য বিশেষ তহবিল গঠনের বিষয়ে তিনি বলেন, "আমরা কয়েক বছর ধরে 'হাউজিং লোন' নামে ২০ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন (রিফিন্যান্সিং) তহবিল গঠনের দাবি জানিয়ে আসছি। প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটে এই তহবিল গঠনের কোনো প্রতিফলন নেই।"
কোনো দাবি পূরণ না হওয়ায় প্রস্তাবিত বাজেটের ফলে আবাসন খাত ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে মন্তব্য করেন রিহ্যাব সভাপতি।