থানচির দুর্গম এলাকায় ডায়রিয়ার প্রকোপ
বান্দরবানের থানচি উপজেলার রেমাক্রি ইউনিয়নে দুর্গম কয়েকটি পাড়ায় ডায়রিয়ার প্রকোপ ছড়িয়ে পড়েছে। কোনো একটি পাড়া নিয়ন্ত্রণে এলে অন্য আরেকটি পাড়ায় নতুন করে আক্রান্ত হচ্ছে। গত কয়েকদিনে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত পাড়াপ্রধান কারবারীসহ চারজন মারা গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
তবে থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. ওয়াহিদুজ্জামান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান, থানচি স্বাস্ব্য বিভাগের কাছে এখন পর্যন্ত তিনজনের মৃত্যুর খবর এসেছে। তার মধ্যে দুজনের নাম পাওয়া গেছে। তারা হলেন মেনথাং পাড়ার বাসিন্দা কারবারী মেনথাং ম্রো (৪৮) ও লংঙান পাড়ার বাসিন্দা লংগ্রি ম্রো (৫০)। এছাড়া কয়েকটি পাড়া মিলে ষাটজনের মতো ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী রয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, মোবাইল নেটওয়ার্কবিহীন ও খুবই দুর্গম এলাকায় হওয়ায় ঠিকমত খবর পাওয়া যাচ্ছে না। তারপরও স্বাস্থ্যবিভাগ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বিজিবি সদস্যরা ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণে সমন্বয় করে কাজ করে যাচ্ছেন। প্রয়োজনীয় ঔষুধ নিয়ে গতকাল শনিবার স্বাস্থ্যবিভাগের একটি দল দুর্গত এলাকায় পাঠানো হয়েছে।
থানচি উপজেলার সবচেয়ে দুর্গম এলাকা রেমাক্রি ইউনিয়ন। নৌপথই থানচি সদর থেকে সেখানে যাওয়ার একমাত্র উপায়। ইঞ্জিনচালিত ছোট নৌকায় মিয়ানমার সীমান্তবর্তী এলাকা বড়মদক বাজারে পৌঁছাতে সময় লাগে চার ঘণ্টা। নৌকায় বড়মদক থেকে আরও এক ঘণ্টার দূরত্বে ডায়রিয়া আক্রান্তদের এলাকা।
রেমাক্রি ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মাংচং ম্রোর সাথে রোববার দুপুরে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের কথা হয়। তিনি জানান, রেমাক্রি ইউনিয়নে কয়েকটি পাড়ায় ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়েছে। এর মধ্যে তার ওয়ার্ডের ছয়টি ম্রো জনগোষ্ঠীর পাড়া রয়েছে। পাড়াগুলো হল য়ংনং পাড়া, সিংচং পাড়া, পাকতোয়া পাড়া, নারেশা লংঙান পাড়া, মেনথাং পাড়া ও নেপিউ পাড়া। ডায়রিয়া আক্রান্ত অন্য আরেকটি পাড়া হল নয় নম্বর ওয়ার্ডের ক্রাহ্লাঅং মারমা পাড়া।
এসব পাড়ায় আক্রান্তদের মধ্যে চারজন মারা গেছে বলে জানিয়েছেন তিনি। তার দেওয়া তথ্যানুসারে, মারা যাওয়া ব্যক্তিরা হলেন মেনথাং পাড়ার বাসিন্দা কারবারী মেনথাং ম্রো (৪৮), লংঙান পাড়ার বাসিন্দা লংগ্রি ম্রো (৫০), য়ংনং পাড়ার বাসিন্দা ক্রায়ং ম্রো (৬০) ও সিংচং পাড়ার বাসিন্দা বারো বছরের একটা ছেলে (নাম পাওয়া যায়নি)।
'এছাড়া আক্রান্ত স্বজনরা বড়মদক বাজারে এসে যাদের ঔষধ কিনে দিয়েছে তারা সুস্থ হয়ে উঠেছে। আর যারা ঔষুধ কিনে খেতে পারেনি তাদের অবস্থা অবনতি হচ্ছে। দুর্গম এলাকার বড়মদক বাজারে স্যালাইন ও ঔষধ সংকটে পড়েছে।'
তবে গতকালই দুর্গত এলাকায় ওষুধ পাঠানো হয়েছে বলে জানান ইউপি সদস্য মাংচং ম্রো।
দুর্গত এলাকা থেকে ফিরে রেমাক্রি ইউপি চেয়ারম্যান মুইশৈথুই মারমা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, সেখানকার এলাকাবাসী ডায়রিয়ার পাশপাশি ম্যালেরিয়া জ্বরেও ভুগছেন। বিষয়টি উপজেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্যবিভাগকে অবহিত করা হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগেও ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে সাধ্যমত চেষ্টা করা হচ্ছে।
এসব দুর্গম এলাকার বাসিন্দারা মূলত এই এলাকায় খাবার পানি সংকট ও ময়লাযুক্ত পানি পান করার কারণে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. ওয়াহিদুজ্জামান।
জেলা সিভিল সার্জন নীহার রঞ্জন নন্দী জানান, আক্রান্তদের মধ্যে দুই জন মারা গেছে। যেহেতু দুইজনের নাম পেয়েছি। পর্যাপ্ত ঔষধপত্র, বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও খাবার স্যালইন নিয়ে স্বাস্থ্যবিভাগের তিন-চারটি টীম দুর্গত এলাকায় পাঠানো হয়েছে। এছাড়া সেখানকার বিজিবির সদস্যরাও কাজ করে যাচ্ছে। এসব এলাকায় মূলত দুর্গমতার কারনে কাজ করতে একটু কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়।