দেশে ঈদযাত্রায় সর্বোচ্চ দুর্ঘটনা ঘটেছে এবছর

ঈদযাত্রায় মহাসড়কে মোটরসাইকেলের ব্যাপক ব্যবহার, অদক্ষ চালক, উল্টোপথে যানবাহন চালানো, মহাসড়কের নিমাণ ত্রুটি ও সড়কে প্রয়োজনীয় সিগন্যাল না থাকা এবং ট্রাফিক আইন অমান্য করার প্রবণতার কারণে এবার দুর্ঘটনার হার বিগত যেকোন ঈদের থেকে সর্বোচ্চ। আগের চেয়ে এবার এ হার বেড়েছে ১৪.৫১ শতাংশ।
এবছর ঈদযাত্রার ১৫ দিনে (২৬ এপ্রিল থেকে ১০ মে পর্যন্ত) ৩৭২টি দুর্ঘটনা ঘটেছে, এর আগে সর্বোচ্চ দুর্ঘটনা ছিল গত বছর, সংখ্যায় যা ৩১৮।
এছাড়া এবছর বিগত ঈদের চেয়ে নিহত ২২.৩৫ শতাংশ ও আহত ২৬.৩০ শতাংশ বেড়েছে। সড়ক-মহাসড়কে ৩৭২টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪১৬ জন নিহত ও ৮৪৪ জন আহত হয়েছে। তবে সড়ক, রেল ও নৌ-পথে সম্মিলিতভাবে ৪০২টি দুর্ঘটনা ঘটেছে, যাতে ৪৪৩ জন নিহত ও ৮৬৮ জন আহত হয়েছে।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটি এ তথ্য প্রকাশ করে।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের সদস্যরা বহুল প্রচারিত ও বিশ্বাসযোগ্য জাতীয় দৈনিক, আঞ্চলিক দৈনিক ও অনলাইন দৈনিক এ প্রকাশিত সংবাদ মনিটরিং করে এ প্রতিবেদন তৈরি করে।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, এবারও দুর্ঘটনার শীর্ষে রয়েছে মোটরসাইকেল। এবারের ঈদে ১৬৪টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৪৫ জন নিহত, ১১০ জন আহত হয়েছে। যা মোট সড়ক দুর্ঘটনার ৪৪.০৮ শতাংশ, নিহতের ৩৪.৮৫ শতাংশ এবং আহতের ১৩.০৩ শতাংশ প্রায়।
এছাড়া মোট দুর্ঘটনার ১৭.৯০ শতাংশ বাস, ১৫.৪৯ শতাংশ ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান-লরি, ৮.৮৫ শতাংশ অটোরিক্সা, ৮.৪৫ শতাংশ কার-মাইক্রো-জিপ, ৫.২৩ শতাংশ নছিমন-করিমন-ট্রাক্টর-লেগুনা-মাহিন্দ্রা ও ৫.৪৩ শতাংশ ব্যাটারিরিক্সা-ইজিবাইক-ভ্যান-সাইকেল এসব দুর্ঘটনায় জড়িত ছিল।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, সড়ক দুর্ঘটনার এই চিত্রকে একটি প্রতীকি চিত্র বলা চলে। প্রকৃতপক্ষে দেশে বর্তমানে মোটরসাইকেল ও ইজিবাইক ক্যান্সারের মত বেড়ে যাওয়ার কারণে পঙ্গু হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ১৫০ পঙ্গু রোগী ভর্তি হলেও ঈদের সময়ে ২০০ থেকে ২৫০ জন হারে রোগী ভর্তি হয়েছে। যার ৬০ শতাংশ মােটরসাইকেল এবং ২৫ শতাংশ ইজিবাইক দুর্ঘটনায় শিকার হয়েছে বলে জানা গেছে।
এছাড়াও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ২ শতাধিক সড়ক দুর্ঘটনার রোগী ভর্তি হচ্ছে। দেশের বিভাগীয় হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ৮০ থেকে ১০০ জন সড়ক দুর্ঘটনার রোগী ভর্তি হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, সড়ক, রেল ও নৌ পথের উন্নয়নে সরকার কয়েক লক্ষ কোটি টাকার প্রকল্প প্রায় একযুগ ধরে বাস্তবায়ন করে আসছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের দীর্ঘসূত্রতা, মেগা প্রকল্পের কারণে এসব প্রকল্প এখনো চালু না হওয়া, অন্যদিকে গণপরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন না হওয়ায় ভোগান্তি ও যানজট থেকে বাঁচতে মানুষ বিকল্প হিসেবে এসব ছোট পরিবহনের ব্যবহার অস্বাভাবিকহারে বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে যানজট ও সড়ক দুর্ঘটনা কল্পনার চেয়েও বেশি গতিতে বাড়ছে।
বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক ড. হাদিউজ্জামান বলেন, প্রতি বছর ৫ লাখ মোটরসাইকেল বিপণন করে সরকারের ৫ হাজার কোটি টাকা আয় হলেও দুর্ঘটনায় ২০ থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। এই বাহনটি কখনো গণপরিবহনের বিকল্প হতে পারে না।
দুর্ঘটনা রোধে সংগঠনটি কিছু সুপারিশ দিয়েছে, যার মধ্যে আছে জরুরী ভিত্তিতে মোটরসাইকেল ও ইজিবাইক আমদানি ও নিবন্ধন বন্ধ করা, দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ, চালকদের বেতন ও কর্মঘণ্টা সুনিশ্চিত করা, ধীরগতির যান ও দ্রুতগতির যানের জন্য আলাদা লেনের ব্যবস্থা করা, গণপরিবহন বিকশিত করা, মানসম্মত সড়ক নির্মাণ প্রভৃতি।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদনে ২৮৩টি দুর্ঘটনায় নিহত ৩৭৬
এদিকে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো একটি প্রতিবেদনে জানায়, ঈদুল ফিতরের আগে-পরে ১৪ দিনে (২৫ এপ্রিল-৮ মে) দেশে ২৮৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৭৬ জন নিহত হয়েছে। এতে আহত হয়েছে কমপক্ষে ১৫০০ জন।
তাদের তথ্যমতে, মোট নিহতের ৪১.৪৮ শতাংশ মারা গেছে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায়। এই সময়ে ১২৮টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ১৫৬ জন।
এছাড়া এর মধ্যে ৭টি নৌ-দুর্ঘটনায় ৫ জন নিহত ও ২ জন আহত হয়েছে এবং ২ জন নিখোঁজ রয়েছে। পাশাপাশি ১৭টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ১৯ জন নিহত এবং ৩ জন আহত হয়েছে।
তারা ৯টি জাতীয় দৈনিক, ৭টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ইলেক্টনিক গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে।