সয়াবিন হাওয়া, মাংস চড়া
সারা মাস সিয়াম সাধনার পর ঈদ উল ফিতরের আগের দিন বাজার থেকে হাওয়া হয়ে গেছে বোতলজাত সয়াবিন তেল। একই সঙ্গে বাড়ছে গরু, খাসি ও ব্রয়লার মুরগির দামও। ফলে সীমিত ও নিম্ন আয়ের মানুষদের একটু 'ভালোমন্দ' আয়োজনে ঈদ উদযাপন কঠিন হয়ে পড়ছে।
দু' সপ্তাহ আগে ইন্দোনেশিয়া পামঅয়েল রপ্তানি নিষিদ্ধ ঘোষণার পর থেকেই আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ছে। আর তখন থেকেই বাজারে পাঁচ লিটারের সয়াবিন তেলের সরবরাহ কমিয়ে দেয় মিল মালিকরা। বিভিন্ন বাজারে এক-দুই লিটারের বোতল ও খোলা সয়াবিন পাওয়া গেলেও তা বিক্রি হচ্ছিলো সরকার নির্ধারিত দামের চেয়েও বেশি দরে।
সোমবার সকাল থেকেই বাজারে সব ধরণের বোতলজাত সয়াবিনের তীব্র সংকট দেখা দেয়। বেশিরভাগ দোকানেই বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে না। পাড়া-মহল্লার মুদি দোকানগুলোতে পাওয়া গেলেও দাম নেওয়া হচ্ছে অনেক বেশি। দোকানদাররা বলছেন, সয়াবিন তেলের সাপ্লাই নেই। মিল মালিক ও ডিলাররা তেল সরবরাহ করছেন না।
অথচ গত সপ্তাহেই ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম শফিকুজ্জামান বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেছিলেন, দেশে ভোজ্যতেলের যে মজুদ রয়েছে, তা দিয়ে আগামী দুই মাসের চাহিদা মেটানো সম্ভব।
গতকাল রাজধানীর মগবাজার ও দক্ষিণ বনশ্রীর সুপারশপ স্বপ্নের আউটলেটে গিয়ে কোন বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া যায়নি। দক্ষিণ বনশ্রীর আগোরা শপে গিয়েও একই চিত্র চোখে পড়ে। ভোজ্যতেলে সেলফে সরিষার তেল, রাইস ব্রান ও সূর্যমুখী ও অলিভ অয়েল সাজিয়ে রাখা হয়েছে। বাধ্য হয়ে সাধারণ ক্রেতারা সরিষার তেল, রাইস ব্রান অয়েল এবং সামর্থ্যবান ক্রেতারা সূর্যমুখী বা অলিভ অয়েল কিনে বাসায় ফিরছেন।
বাজারে ভোজ্যতেলের সরবরাহ কম হওয়ার কারণ জানতে চাইলে গত মঙ্গলবার সচিবালয়ে সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা টিবিএসকে বলেন, প্রতিটন ভোজ্যতেলের আমদানি মূল্য ১৪০০ ডলার হিসাব করে সরকার সয়াবিনের দাম নির্ধারণ করেছে। কিন্তু এখন আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিনের এলসি খুলতে হচ্ছে ২০৩০ ডলার করে। বাজারে ভোজ্যতেলের সংকট না হলেও ক্রেতাদের বেশি দামে তা কিনতে হবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, প্রতিনিয়ত ভোজ্যতেলের মিলগুলো তেলের দাম বাড়ানোর জন্য চাপ দিচ্ছে। ঈদের পর ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানো হতে পারে-এমন সম্ভাবনার কারণে মিলগুলো একদিকে সরবরাহ কমিয়েছে, অন্যদিকে ডিলাররাও বেশি লাভের আশায় কম কম তেল বাজারে ছাড়ছে।
মাংসের দাম চড়া
রাজধানীর মেরাদিয়া বাজারে যে দোকান থেকে এই প্রতিবেদক রবিবার ১৮০ টাকা কেজি দরে ব্রয়লার মুরগি কিনেছেন, আজ সন্ধ্যায় সেই দোকানেই ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৯০ টাকা করে। একদিনের ব্যবধানে ১০ টাকা দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে কোন মন্তব্য করেননি দোকানী।
রমজান শুরুর আগে এই বাজারের পাঁচটি গরুর মাংসের দোকানে প্রতি কেজি বিক্রি হতো ৬৫০ টাকা করে। রমজানের শুরুতেই সব কটি দোকানদার একযোগে দাম বাড়িয়ে ৭০০ টাকা নির্ধারণ করে। প্রথম ১০ রমজানের পর কেজিতে দাম ২০ টাকা করে কমিয়ে ৬৮০ টাকা করা হয়। ২৭ রমজান থেকে তা আবার ৭০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
হঠাৎ করে মাংসের দাম বাড়ানোর কারণ জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে একজন দোকানদার বলেন, গরুর দাম বাড়তি। ট্রাক ভাড়াও বেড়েছে। তাছাড়া, ঈদে আমাদেরও বাড়তি খরচ আছে, যা মাংস বিক্রি করেই আয় করতে হয়। দাম না বাড়িয়ে উপায় কি?
দক্ষিণ বনশ্রীর স্বপ্ন আউটলেটে রবিবার গিয়ে দেখা যায়, প্রতিকেজি গরুর 'প্রিমিয়াম' মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭২০ টাকায়।
সোমবার ইফতারের পর মেরাদিয়া বাজারে খাসির মাংসের দোকানে দাম জিজ্ঞেস করতেই বিক্রেতা বললেন, 'একদাম ৯৫০ টাকা। নিলে নেন, না নিলে না নেন। কোন দামাদামী করা যাবে না।' অথচ রোজার আগে এসব দোকানে খাসির মাংসের কেজি ছিল ৮০০-৮৫০ টাকা।