মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে আশুলিয়ায় শ্রমিকদের বিক্ষোভ
ঢাকার আশুলিয়ায় কাজের মজুরি বৃদ্ধি ও বেতন বোনাসের দাবিতে ইয়াংজিন ইন্টারন্যাশনাল লি. নামের চুলের ক্যাপ তৈরির একটি কারখানার সামনে বিক্ষোভ করেছেন কারখানাটির ৫৯ জন শ্রমিক।
সকালে আশুলিয়ার গাজিরচট এলাকায় কারখানাটির সামনে অবস্থান নিয়ে শ্রমিকরা বিক্ষোভ শুরু করেন।
এসময় শ্রমিকরা দাবি করেন প্রায় দেড় মাস আগে কারখানা কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অমান্য করে নারী শ্রমিকরা হিজাব পরে কাজে আসায় মালিকপক্ষ তাদের মজুরি কমিয়ে দিয়েছে।
কারখানাটির ডাব্লিউ-৪ সেকশনের সুপারভাইজার ফেরদৌস হোসেন তালুকদার বলেন, "প্রায় দেড় মাস আগে কারখানা কর্তৃপক্ষ সেফটি ইস্যু দেখিয়ে আমার আওতায় থাকা ৫৪ জন নারী শ্রমিককে হিজাব বা বোরখা পড়ে কাজে আসতে নিষেধ করে। পরে আমরা এবিষয়ে আমরা আপত্তি জানাই।"
"এরপরের মাসেই শ্রমিকদের মজুরি অন্যান্য মাসের তুলনায় কম আসলে শ্রমিকরা ক্ষুব্ধ হয়। ধারণা করছি, কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা না মানায় আমাদের কাজের মজুরি কমিয়ে দেওয়া হয়েছে," বলেন তিনি।
শ্রমিকদের ইতোপূর্বে কত টাকা হারে কাজের মজুরি প্রদান করা হতো, এবং বর্তমানে কত টাকা হারে মজুরি প্রদান করা হচ্ছে এই প্রশ্নের উত্তরে ফেরদৌস বলেন, 'আসলে আমরা প্রোডাকশন বেইজড কাজ করি। কিন্তু মালিকপক্ষ আমাদের কখনোই জানায়নি যে আমদের কোন কাজে কত টাকা মজুরি। তবে আগে যেখানে শ্রমিকরা ১০-১২ হাজার টাকা মাসে পেতো, সেখানে গত মাসে শ্রমিকরা ৫-৬ হাজার টাকা করে বেতন পেয়েছে।"
যোগাযোগ করলে কারখানাটির প্রশাসনিক কর্মকর্তা (মানবসম্পদ) ইমরান হোসেন বলেন, "হিজাবের বিষয়টি সত্য নয়, এটাকে তারা (শ্রমিকরা) ইস্যু তৈরি করতে চাচ্ছে। দেড় মাসে আগে চাইনিজ মালিক শ্রমিকদের সেফটির স্বার্থে বলেছিলেন হিজাবের হাতাটা কিছুটা ছোট করা হলে ঝুঁকিটা এড়ানো যাবে, তাছাড়া করোনার কারনে শ্রমিকদের মাস্ক পড়ে কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিলো, কিন্তু শ্রমিকরা এটাকে ভুলভাবে উপস্থাপন করছে।"
তিনি আরও বলেন, আজকে শ্রমিকদের দাবি ছিলো তাদের মজুরি বৃদ্ধি ও বেতন বোনাস। পরে শ্রমিক, শ্রমিক নেতা, পুলিশসহ আমরা বসে একটা সমাধানে এসেছি। আমরা কথা দিয়েছি ঈদের পর মজুরি বৃদ্ধির বিষয়টি আমরা বিবেচনা করবো, এবং আগামী সপ্তাহে তাদের বেতন বা বোনাস যা পাওনা, সেটি পরিশোধ করা হবে।
"আমরা শ্রমিকদের বলেছিলাম তারা চাইলে আজকে থেকে আবার কাজ শুরু করতে পারে, যেহেতু তারা ১১ তারিখ থেকে কাজ বন্ধ রেখেছে। তবে শ্রমিকরা ঈদের পর থেকে কাজে যোগ দিবেন জানিয়ে স্বেচ্ছায় সবাই চলে গেছেন", তিনি যোগ করেন।
জানতে চাইলে শিল্প পুলিশ-১ এর সহঃ উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মোঃ মিলন বলেন, মূলত মজুরি বৃদ্ধি ও বেতন বোনাস নিয়ে শ্রমিকদের কিছু দাবি ছিলো, পরে মালিকপক্ষের সাথে বসে বিষয়টি সমাধান করা হয়েছে। ঈদের আগেই মালিকপক্ষ শ্রমিকদের যা পাওনা আছে তা পরিশোধ করে দিবেন, আর কাজের মজুরি বৃদ্ধির বিষয়টি ঈদের পর তারা বিবেচনা করবেন।
পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, মূলত এই শ্রমিকরা প্রোডাকশনে কাজ করেন। কিন্তু কারখানাটিতে গত কিছুদিন কাজ কম থাকায় শ্রমিকরা গত মাসে বেতন কম পেয়েছিলো, এটা নিয়েই জটিলতা সৃষ্টি হয়।