চট্টগ্রামের ৫০টি মোড় মরণ ফাঁদ
২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন বছরে শুধু রাস্তা পার হতে গিয়ে চট্টগ্রাম নগরীতে মারা গেছেন ১০২ জন পথচারী।
মারাত্মকভাবে আহত হয়ে শরীরে জখমের চিহ্ন বয়ে বেড়াচ্ছেন আরও আড়াইশ'র বেশি মানুষ। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগ ও পুলিশ ফাঁড়ির নথি ঘেঁটে পাওয়া তথ্য বলছে ফুট ওভার ব্রিজ না থাকা, বেপরোয়া গাড়ি চালানো ও পথচারীদের জ্ঞানের অভাব এসব দুর্ঘটনার প্রধান কারণ।
চট্টগ্রাম নগরের ৫০টির বেশি ঝুকিপূর্ণ রাস্তার মোড় পার হতে গিয়ে প্রতিদিনই ঘটছে নানান দুর্ঘটনা।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ নুরুল আলম আশিক বলেন, "প্রতিদিনই প্রচুর সড়ক দুর্ঘটনার রোগী ভর্তি হন আমাদের এখানে। চট্টগ্রাম শহরের বহদ্দারহাট মোড়, ২ নম্বর গেইট মোড়, জিইসি মোড় ও লালখান বাজারে আহত হওয়াদের সংখ্যাই বেশি"।
তিনি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান, সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের নামের তালিকা খাতায় লিপিবদ্ধ করেন তারা। এরপর নিয়ম অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা কিংবা ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জানিয়ে দেওয়া হয়।
ফুট-ওভার ব্রিজ অপরিহার্য এমন ৫০টি বিপজ্জনক রাস্তার মোড় পারাপারের জায়গা চিহ্নিত করেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন।
সিটি করপোরেশনের তথ্য বলছে, ৬০ লাখ মানুষের আবাসস্থল ১৬৮ বর্গ কিলোমিটারের শহরটিতে ফুটওভার ব্রিজ আছে মাত্র ছয়টি।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, 'আমরা ২৮টি ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ কোটির মতো। যদিও এখনও বিষয়টি ঝুলে আছে'।
৫০টি বিপজ্জনক ক্রসিংয়ের মধ্যে কয়েকটি হল নয়াবাজার, সাগরিকা, সল্টগোলা, সিমেন্ট, নাসিরাবাদ, অক্সিজেন, ইস্পাহানি, দেওয়ানহাট, বাদামতলী, বনানী, একে খান এবং টাইগারপাস।
বিগত কয়েকদিনে এসব মোড়ের কয়েকটিতে গিয়ে দেখা গেছে, দ্রুত গতিতে যানবাহন পারাপারের জন্য রাস্তা পার করতে বিপাকে পড়ছেন পথচারীরা।
বিপুল পরিমাণ যানবাহনের চলাচল নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছেন ট্রাফিক পুলিশরা।
নগরীর নিউমার্কেট মোড়ের ফুটওভার ব্রিজটিতে গিয়ে দেখা যায়, নিরাপদভাবে রাস্তা পারাপারের জন্য এটি নির্মিত হলেও এখন সেটি হকারদের দখলে চলে গেছে।
নগরীর জিইসি মোড়ে গিয়ে দেখা যায়, ফ্লাইওভার নির্মাণের কারণে রাস্তায় বড় বড় পিলার স্থাপন করা হয়েছে। ফলে রাস্তার মাঝ দিয়ে তৈরি হওয়া মোড়ের ফাঁকা অংশে পার হচ্ছেন অনেক মানুষ।
অন্যান্য ব্যস্ত সড়কের অবস্থাও এমনই।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে স্থানীয়রা জানান, রাস্তা পারাপারের সময় তারা খুবই অনিরাপদ বোধ করলেও তাদের কোনো বিকল্প পথ নেই।
নগরের প্রবর্তক মোড়ের একটি বেসরকারি হাসপাতালের কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বলেন, "মেরিডিয়ান হোটেলের সামনে প্রায়ই অনেকে প্রায়ই অনেকে আহত হন। এখানে গাড়ির চাপ বেশি, ফুটওভার ব্রিজ নেই। সবসময় ঝুঁকিতে থাকি আমরা। জরুরী ভিত্তিকে এখানে ফুটওভার ব্রিজ প্রয়োজন"।
স্থানীয় বাসিন্দা মোরশেদুল ইসলাম বলেন, "সড়কের এই অবস্থার কারণে প্রতিনিয়ত সন্তানদের নিয়ে চিন্তায় থাকি আমরা"।
বেপরোয়া গাড়ি চালানো
চট্টগ্রাম শহরে একাধিক ফ্লাইওভার নির্মাণের পর রাস্তায় বেড়েছে লাইসেন্সবিহীন গাড়ির সংখ্যা।
সিএমপির ট্রাফিক বিভাগ ও বিআরটিএ'র দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম শহরে এখন ২ লাখ ৭২ হাজার ৮৮০টি ছোট-বড় গাড়ি রাস্তায় চলাচল করছে।
এর মধ্যে ৩ হাজার ৮৭৯টি বাস, ৩৫ হাজার প্রাইভেট কার এবং বাকিগুলো ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও অন্যান্য যানবাহন।
এর বাইরে আরও এক লাখ লাইসেন্সবিহীন গাড়ি চলাচল করছে। পাশাপাশি ২০ হাজারের বেশি অতিরিক্ত গাড়ি চট্টগ্রামের বাইর থেকে এসে নগরীতে প্রবেশ করে।
বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেলক হক চৌধুরী বলেন, 'চট্টগ্রাম শহরের ৭০ শতাংশ চালক ভুয়া লাইসেন্স দিয়ে গাড়ি চালাচ্ছে। বলা যায় এই সংখ্যা লাখের কম নয়। অদক্ষ চালকরা দুর্ঘটনার প্রধান কারণ"।
তবে আন্তঃজেলা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কফিল উদ্দিন বলেন, "প্রতিটি গাড়ির চালক ও হেল্পারদের নিয়ম মনে গাড়ি চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে"।
চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) শ্যামল কুমার নাথ বলেন, "রাস্তায় বেপরোয়া গাড়ি চালকদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে"।