বাউলের বেশে ভয়ংকর সিরিয়াল কিলার
কিছুদিন আগেই বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল 'ভাঙা তরী ছেঁড়া পাল' গান। গানটির মিউজিক ভিডিওতে মডেল হয়ে পরিচিত মুখ হয়ে উঠেছিলেন বাউল সেলিম ফকির। কিন্তু এই বাউলের আড়ালেই যে লুকিয়ে আছে এক নির্মম খুনি, কে জানত!
আইনের হাতকে ফাঁকি দেওয়ার জন্য গত দুই দশক ধরে বাউল সেলিম ফকির নাম নিয়ে দেশের নানা জায়গায় ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন উত্তরবঙ্গের মো. হেলাল হোসেন। এ কৌশলে সাফল্যও পেয়েছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কাল হয়ে দাঁড়াল 'ভাঙা তরী ছেঁড়া পাল'-এর সেই মিউজিক ভিডিও।
১৯৯০-এর দশকের শেষ দিকে এবং ২০০০-এর দশকের গোড়ার দিকে এই হেলাল হোসেন ওরফে সেলিম ফকির অন্তত তিনজনকে হত্যা করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
দুই দশকের ফেরার আসামিকে র্যাব ধরতে পেরেছে মাস ছয়েক আগে পাওয়া এক অভিযোগের ভিত্তিতে। ৬ মাস আগে ব্যক্তি ইউটিউবে প্রচারিত একটি গানের বাউল মডেল সম্পর্কে র্যাবকে জানান যে, ওই মডেল খুব সম্ভব বগুড়ার বিদ্যুৎ হত্যা মামলার আসামি। ওই অভিযোগ পেয়েই ছায়াতদন্ত শুরু করে র্যাব।
তদন্তে র্যাব জানতে পারে এই মডেল আসলেই যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি হেলাল হোসেন। পরে বুধবার রাতে কিশোরগঞ্জের ভৈরব থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
২০০১ সালে বগুড়ার মাহমুদুল হাসান বিদ্যুৎকে হত্যার দায়ে বগুড়ার একটি আদালত তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। এরপর থেকেই তিনি পালিয়ে বাউলের ছদ্মবেশে ঘুরে বেড়াচ্ছেন বলে জানা গেছে।
এছাড়া আরও অন্তত দুটি হত্যা মামলার অন্যতম প্রধান আসামি হিসেবে হেলালের নাম এসেছে। ২০১০ সালে বগুড়া সদর থানায় দায়ের করা চুরির মামলায় ২০১৫ সালে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তবে ২০১৫ সালে তিনি জামিনে বের হন। তারপর ওই বছরই বিদ্যুৎ হত্যা মামলার রায় ঘোষণা হয়। এরপরই হেলাল পলাতক হন।
এর প্রায় সাত বছর পর বুধবার (১২ জানুয়ারি) ভৈরব রেলস্টেশন থেকে হেলালকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। বৃহস্পতিবার (১৩ জানুয়ারি) এক প্রেস ব্রিফিংয়ে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, গায়ক পলাশের 'ভাঙা তরী ছেঁড়া পাল'-এর ভাইরাল মিউজিক ভিডিও থেকে আসামিকে শনাক্ত করা হয়েছে।
২০১৬ সালে মুক্তি পাওয়া গানটিতে হেলালকে বাউল শিল্পী হিসেবে দেখা যায়। ভিডিওটি ইউটিউবে প্রায় ৪৫ মিলিয়ন ভিউ পায়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ভাইরাল হয়। মিউজিক ভিডিওটি ব্যাপক প্রশংসা কুড়ায়, অভিনয়ের জন্য প্রশংসিত হন হেলালও।
আধিপত্য বিস্তারের জেরে ধরে বগুড়া সদরের মাহমুদুল হাসান বিদ্যুৎকে (২০) নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ওই হত্যা মামলায় পলাতক ছিলেন হেলাল।
১৯৯৭ সালে বগুড়ায় বিষ্ণু হত্যা মামলাতেও আসামি ছিলেন হেলাল। বিষ্ণু হত্যার পর নিষ্ঠুরতার জন্য এলাকায় কুখ্যাত হয়ে ওঠেন তিনি।
২০০৬ সালে রবিউল হত্যা মামলার অন্যতম প্রধান আসামি হিসেবেও চার্জশিটে হেলালের নাম ছিল। এই হত্যাকাণ্ডও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ঘটে।