ঝালকাঠিতে চলন্ত লঞ্চে আগুন, মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪০
ঝালকাঠি জেলার সুগন্ধা নদীতে বৃহস্পতিবার (২৪ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত ৩টার দিকে চলন্ত লঞ্চে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ৪০ যাত্রী নিহত হয়েছেন। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
দুর্ঘটনার খবরটি নিশ্চিত করেছেন ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক জোহর আলী।
আহতদের উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
রাত ৩টার দিকে এমভি অভিযান-১০ নামের লঞ্চটি ঢাকা থেকে বরগুনা যাওয়ার সময় এ ঘটনা ঘটে।
রাত ৩টা ২৮ মিনিটে এই দুর্ঘটনার সংবাদ পেয়ে ৩টা ৫০ মিনিটের মধ্যে দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছে ফায়ার সার্ভিস অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধার অভিযান শুরু করে। ফায়ার সাার্ভিসের ১৫টি ইউনিট এতে অংশ নেয়।
ফায়ার সার্ভিসের বরিশাল বিভাগের উপপরিচালক কামাল উদ্দিন ভূঁইয়া এই অভিযানে নেতৃত্ব দেন।
প্রায় দুই ঘণ্টা পর ভোর ৫টা ২০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। দগ্ধ লঞ্চটি বর্তমানে সুগন্ধা নদীর দিয়াকুল পাড়ে ভেড়ানো আছে।
কামাল উদ্দিন জানিয়েছেন, "আমরা এখন পর্যন্ত ৩৮টি মরদেহ উদ্ধার করেছি। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।"
উদ্ধারকৃত যাত্রীদের বরাতে তিনি বলেন, "সুগন্ধা নদীর মাঝামাঝিতে থাকা অবস্থায় লঞ্চটিতে আগুন লাগে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে লঞ্চের ইঞ্জিনরুম থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। পরে এটিকে নদীর তীরবর্তী দিয়াকুল গ্রামের কাছে নোঙর করা হয়।"
ঘন কুয়াশার কারণে উদ্ধার তৎপরতা ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
ঘটনার পর এখনো অনেক যাত্রী নিখোঁজ রয়েছেন।
এদিকে দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া যাত্রীরা জানান, ভোররাত ৩টার দিকে লঞ্চের ক্যান্টিন ও ইঞ্জিনরুম থেকে আগুনের সূত্রপাত।
লঞ্চের যাত্রী আশরাফুল জানান, লঞ্চটি পোনাবালিয়া ইউনিয়নের দেউরী এলাকায় পৌঁছালে আগুন লঞ্চের নিচতলার পেছন দিক থেকে দ্বিতীয় তলার সামনে ছড়িয়ে পড়ে।
আতিকুল ইসলাম নামের আরেক যাত্রী বলেন, অগ্নিকাণ্ডের পর আগুন থেকে সৃষ্ট ধোঁয়া ও গ্যাসের কারণেও অনেকের মৃত্যু হয়েছে।
এছাড়া অনেকেই আগুন থেকে বাঁচতে নদীতে ঝাঁপ দেন।
লঞ্চের কেবিন বয় আহমেদ ভূঁইয়া বলেন, "লঞ্চটিতে পাঁচ শতাধিক যাত্রী ছিল। ওপরের কেবিনের অধিকাংশ যাত্রী নদীতে ঝাঁপ দেন। যারা ঘুমিয়ে ছিল, তাদের সবাই মারা গেছে।"
ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের মরদেহ পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
মৃতদেহগুলো সম্পূর্ণভাবে পুড়ে বিকৃত হয়ে গেছে, যার ফলে শনাক্ত করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। ডিএনএ পরীক্ষার পর পরিবারের সদস্যদের কাছে পুলিশ মরদেহগুলো হস্তান্তর করবে।
এছাড়া ১১ জনের মরদেহ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
অগ্নিনির্বাপনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় প্রাথমিকভাবে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন লঞ্চের যাত্রীরা।
লঞ্চের একজন কর্মীও স্বীকার করেছেন যে লঞ্চটিতে পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা ছিল না।
ঝালকাঠির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মইনুল হক জানিয়েছেন, লঞ্চ থেকে প্রায় ৯০ জন দগ্ধ ব্যক্তিকে উদ্ধার করা হয়েছে।
গুরুতর দগ্ধ ৬৬ জনকে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে(শেবাচিম) ভর্তি করা হয়েছে। বাকিদের ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
শেবাচিমের সহকারী পরিচালক ডা মনিরুজ্জামান বলেন, "এই ৬৬ জনের মধ্যে ১৮ জন নারী। এদের দেহের ৫০% পর্যন্ত পুড়ে গেছে।"
"আমাদের কোনো ডেডিকেটেড বার্ন ইউনিট না থাকায় তিনজন নারী ও চার পুরুষকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে," বলেন তিনি।
এদিকে লঞ্চে থাকা নিখোঁজ আত্মীয়দের সন্ধানে নদী তীরে ভিড় করছে স্বজনেরা। তাদের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠেছে তীরের চারপাশ।
শোক প্রকাশ
এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শোক প্রকাশ করেছেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীও।
তদন্ত কমিটি গঠন
চলন্ত লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব তোফায়েল আহমেদকে কমিটিতে আহবায়ক করা হয়েছে। এছাড়াও মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আমিনুর রহমান কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে কাজ করবেন।
কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে মন্ত্রণালয়ে রিপোর্ট পেশ করতে বলা হয়েছে।